বুধবার ● ২১ নভেম্বর ২০১৮
প্রথম পাতা » প্রধান সংবাদ » সিরাজগঞ্জ-৫ আসন : কে হচ্ছন নৌকার মাঝি রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব নাকি শিল্পপতি
সিরাজগঞ্জ-৫ আসন : কে হচ্ছন নৌকার মাঝি রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব নাকি শিল্পপতি
সোহেল রানা, সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি :: (৭ অগ্রহায়ন ১৪২৫ বাঙলা: বাংলাদেশ সময় রাত ৮.৫৮ মি.) তাঁতশিল্প সমৃদ্ধ বেলকুচি ও যমুনা নদীবেষ্টিত চৌহালী উপজেলা মিলে সিরাজগঞ্জ-৫ আসন গঠিত। আসনটিতে আওয়ামীলীগ থেকে দলীয় মনোনয়ন কিনেছেন সিরাজগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী আব্দুল লতিফ বিশ্বাস, বর্তমান সংসদ সদস্য শিল্পপতি আলহাজ্ব আব্দুল মজিদ ও তার ছেলে ব্যবসায়ী-শিল্পপতি আব্দুল মমিন মন্ডল, জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি অ্যাড. আব্দুর রহমান, বনানী থানা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মীর মোশারফ হোসেন, বেলকুচি উপজেলা চেয়ারম্যান মোহাম্মাদ আলী আকন্দ, জেলা আওয়ামীলীগের সদস্য গাজী শফিকুল ইসলাম, আওয়ামীলীগ নেতা আবু বকর সিদ্দিক ও যুবলীগ নেতা মুশফিকুর রহমান মোহন। একাধিক প্রার্থী হলেও দলীয় নেতাকর্মীসহ সাধারন মানুষের মধ্যে দুজন প্রার্থীকে নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। সাধারন মানুষসহ দলের তৃনমুল নেতাকর্মীরা দুজনকে নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষন করছেন। তৃনমুলের মুখে মুখে একটা কথাই চাউর হচ্ছে, এবারের নির্বাচনে কে নৌকার মাঝি হচ্ছেন, তুখোড় পোড়-খাওয়া কর্মী-জনবান্ধব দুইবারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব বেলকুচি-চৌহালী আওয়ামীলীগের জীবন্ত কিংবদন্তি আলহাজ্ব আব্দুল লতিফ বিশ্বাস নাকি দেশের বৃহত্তম শিল্প প্রতিষ্ঠান মন্ডল গ্রুপের পরিচালক তারুন্য ব্যক্তিত্ব আব্দুল মমিন মন্ডল। তৃনমুল নেতাকর্মী বলছেন, প্রতিদ্বন্ধিমুলক নির্বাচনে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন ব্যক্তি মনোনয়ন পেলে নৌকার জয় যতটা সম্ভব হবে শিল্পপতির ক্ষেত্রে ততটা কঠিন হয়ে পড়বে। তাদের মতে, দেশের অধিকাংশ শিল্পপতিরা ব্যবসায়িক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে সংসদ সদস্য পদটি আর প্রকৃত রাজনীতিবিদরা পদটি সাধারন মানুষ ও দেশের কল্যাণে ব্যবহার করে।
বেলকুচি উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আলহাজ্ব ইউসুফ জী খানসহ দুটি উপজেলার কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় নেতা দুইজন প্রার্থীর বিষয়ে মন্তব্য করে বলেন, ইউপি চেয়ারম্যান থেকে উপজেলা চেয়ারম্যান, ২০বছর বেলকুচি উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক, ১১ বছর সভাপতি, দুইবার এমপি ও একবার মন্ত্রীর দাযিত্ব পালন করেছেন আব্দুল লতিফ বিশ্বাস। বর্তমানে জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। গত ৫ বছর এমপি না থাকার পরও ছিলেন মাঠে সক্রিয়। তৃণমূল পর্যায়ে দলকে সুসংগঠিত করেছেন। দুটি উপজেলার প্রতিটি গ্রাম-পাড়া মহল্লায় তার পদচারনা রয়েছে। দুটি উপজেলার প্রতিটি গ্রামের অধিকাংশ মানুষের নাম পরিচয় জানেন এবং নাম ধরে তিনি চেনেন। বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আদর্শ থেকে কখনো পিছপা হননি। ৬৫ বছর বয়সী আব্দুল লতিফ বিশ্বাসের মধ্যে প্রকৃত রাজনীতিবীদির সকল গুনাগুনও বিদ্যমান। আচার-আচরন এবং বেলকুচিতে দৃশ্যমান উন্নয়ন তৃণমুল আওয়ামীলীগসহ সাধারন মানুষের কাছে জনপ্রিয়তা-গ্রহণযোগ্যতাও দিনদিন বেড়ে চলেছে। বেলকুচির ৯০ভাগ তৃনমুল নেতাকর্মী লতিফ বিশ্বাসের পক্ষে রয়েছে। অন্যদিকে, আব্দুল মমিন মন্ডল একজন ব্যবসায়ী শিল্পপতি। তার বাবা আব্দুল মজিদ মন্ডল বর্তমান এমপি। তিনি বেলকুচি-চৌহালীর উন্নয়নে ভুমিকা রাখতে পারেননি। এবার তার ছেলে মমিন মন্ডলের জন্য তিনি মাঠে নেমেছে। মমিন মন্ডল একজন সিআইপি পদকপ্রাপ্ত তরুণ ব্যবসায়ী-শিল্পপতি। মাত্র একবছর আগে বেলকুচি-চৌহালীর রাজনীতির মাঠে নেমেছে। ৪-৫ মাস যাবত বেলকুচি-চৌহালীতে জনসংযোগ করছেন। বেলকুচি-চৌহালীর তৃনমুল নেতাদের সাথে তার ভাল করে পরিচয়ই হয়নি। অধিকাংশ নেতাকর্মী তার নেতৃত্বে মানতে নারাজ। পক্ষান্তরে লতিফ বিশ্বাস শুধু দলেই নয় দলের বাইরেও সাধারন মানুষের মধ্যেও তার নিজস্ব ভোটের বলয় তৈরী করেছেন। তিনি মনোনয়ন পেলে সে ভোটগুলো নৌকার পক্ষে যাবে। আর তিনি ব্যতিত যদি শিল্পপতি মমিন মন্ডল মনোনয়ন পান তবে সেগুলো নৌকার বিপক্ষে যাবে। তার বড় প্রমান-২০১৪ সালের নির্বাচনে বেলুকচি-চৌহালীতে মজিদ মন্ডল মনোনয়ন পাওয়ায় অনেক সাধারন ভোটার ভোট কেন্দ্রে ভোট দিতে যায়নি। এছাড়াও বেলকুচি-চৌহালী জামাত-বিএনপি তৎপরতা বেশি। নির্বাচনের মাঠে জামায়াত-বিএনপির একমাত্র আতঙ্ক লতিফ বিশ্বাস।
চৌহালী উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ফারুক সরকার ও স্থানীয় ভোটার আব্বাছ আলী ও নুরুল ইসলাম জানান, মন্ত্রী থাকাকালীন চৌহালীতে লতিফ বিশ্বাস যে অবদান রেখেছে, যত মানুষের কর্মের ব্যবস্থা করেছেন তাতে তিনি মনোনয়ন পেলে এক ধরনের নৌকার জোয়ারের পরিবেশ সৃষ্টি হবে অন্যদিকে মমিন মন্ডল পেলে সেই পরিবেশ সৃষ্টি হবে না। তারপরেও শেখ হাসিনা যাকে মনোনয়ন দিবে তার পক্ষেই কাজ করতে হবে।
বেলকুচি উপজেলা মুক্তিযোদ্ধার কমান্ডার আব্দুল হামিদ আকন্দ, স্থানীয় ভোটার জহুরুল ইসলাম ও মনিরুল ইসলাম জানান, সিরাজগঞ্জের আওয়ামীলীগের রাজনীতির মাঠে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের পরেই লতিফ বিশ্বাসের স্থান। রাজনীতি ও ভোটের মাঠে লতিফ বিশ্বাসের কাছে শিল্পপতি মমিন মন্ডল শিশু বাচ্চা। আসনটিতে যদি লতিফ বিশ্বাস মনোনয়ন পায় তবে একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বলতে পারি-আসনটি আওয়ামীলীগ পাবে। নচেত অন্য কেউ মনোনয়ন পেলে আওয়ামীলীগ আসনটি হারাবে।
সর্বোপরি সাধারন মানুষের বিশ্বাস বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা সাধারনের মানুষের আশা-আকাঙ্খার কথা বিবেচনা করে বেলকুচি-চৌহালী প্রকৃত রাজনীতিবিদকেই মনোনয়ন দিবেন।
দুটি উপজেলা তিনটি থানা নিয়ে গঠিত আসনটিতে মোট ভোটার ৩লাখ ৩৯হাজার ৮শত ৯২জন ভোটার রয়েছেন।