শনিবার ● ২৪ নভেম্বর ২০১৮
প্রথম পাতা » পটুয়াখালী » ঐতিহ্যবাহী সেই খেজুরের রস হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামবাংলা থেকে
ঐতিহ্যবাহী সেই খেজুরের রস হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামবাংলা থেকে
হাসান আলী,পটুয়াখালী প্রতিনিধি ::পটুয়াখালীর উপজেলাগুলোতে শীতের সকালে বছর কয়েক আগেও চোখে পড়তো রসের হাড়ি ও খেজুর গাছ কাটার সরঞ্জাম সহ গাছিদের ব্যস্ততার দৃশ্য। সাত সকালে খেজুরের রস নিয়ে গাছিরা বাড়ি বাড়ি হাকডাক দিতেন। শীতের মৌসুম শুরু হতেই বাড়ি বাড়ি চলতো খেজুরের রস কিংবা রসের পাটালি গুড় দিয়ে মজাদার পিঠাপুলির আয়োজন।
এছাড়া খেজুরের রস দিয়ে তৈরি ঝোলা গুড়ের নাম রয়েছে দেশব্যাপী। তবে গ্রামবাংলার এ দৃশ্য এখন আর তেমন চোখে পড়ে না। এর প্রধান কারণ বিভিন্ন কারণে খেজুর গাছ নিধন করছে মানুষ। এতে দিনে দিনে পটুয়াখালীতে কমছে খেজুরের গাছ। দুষ্প্রাপ্য হয়ে উঠেছে খেজুরের রস।
এদিকে, শীত মৌসুম ঘনিয়ে আসতেই পটুয়াখালীর উপজেলাগুলোতে বিভিন্ন গ্রামাঞ্চলে খেজুর গাছের রস আহরণের জন্য প্রস্তুতি নিয়েছেন গাছিরা। গ্রামবাংলার ঐতিহ্যের প্রতীক এই মধুবৃক্ষ (খেজুর গাছ) ঘিরে গ্রামীণ জনপদে শুরু হয়েছে উৎসবমুখর পরিবেশ। তুলনামূলকভাবে পটুয়াখালীর বিভিন্ন গ্রামগঞ্জে খেজুর গাছ অনেকটাই বিলুপ্তির পথে।
গ্রামের মাঠে আর মেঠোপথের ধারে কিছু গাছ দাঁড়িয়ে আছে কালের সাক্ষী হয়ে। গ্রামবাংলার ঐতিহ্য এই খেজুরগাছ অস্তিত্ব আজ সঙ্কটে। যে হারে খেজুরগাছ নিধন হচ্ছে সে তুলনায় রোপণ করা হয় না।
শীত মৌসুমে সকালে খেজুরের তাজা রস যে কতটা তৃপ্তিকর তা বলে শেষ করা যাবে না। আর খেজুর রসের পিঠা এবং পায়েস তো খুবই মজাদার। এ কারণে শীত মৌসুমের গ্রামাঞ্চলে রসের ক্ষীর, পায়েস ও পিঠা খাওয়ার ধুম পড়ে যায়। শুধু খেজুরের রসই নয়, এর থেকে তৈরি হয় গুড় ও প্রাকৃতিক ভিনেগার। রস আর গুড় ছাড়া আমাদের শীতকালীন উৎসব ভাবাই যায় না।
মির্জাগঞ্জ উপজেলা ৩নং আমড়াগাছিয়া ইউনিয়নের ইউনুচ মৃধা বলেন, কাঁচা রসের পায়েস খাওয়ার কথা এখনো ভুলতে পারি না। আমাদের নাতি-নাতনীরা তো আর সেই দুধচিতই পিঠা, পুলি-পায়েস খেতে পায় না। তবুও ছিটেফোঁটা তাদেরও কিছু দিতে হয়। তাই যে কয়টি খেজুর গাছ আছে তা থেকেই রস, গুড়, পিঠাপুলির আয়োজন করা হয়।
একই উপজেলার ময়দা গ্রামের মো. রহিম জানান, গাছের সংখ্যা অনেক কমে গেছে। এক সময় উপজেলা খেজুর রসের জন্য প্রসিদ্ধ ছিল। এখন গাছ যেমন কমে গেছে তেমনি কমে গেছে গাছির সংখ্যাও। ফলে প্রকৃতিগত সুস্বাদু রস এখন আর তেমন নেই। তবুও কয়েকটা গাছের পরিচর্যা করে হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে চেষ্টা করে যাচ্ছি হাছিরা ।
গাছি মো.আব্দুল চৌকিদার জানান, খেজুরের গাছ কমে যাওয়ায় তাদের চাহিদাও কমে গেছে। আগে এই কাজ করে ভালোভাবেই সংসার চালাতেন। এমনকি আগে যে আয় রোজগার হতো তাতে সঞ্চয়ও থাকতো, যা দিয়ে বছরের আরো কয়েক মাস সংসারের খরচ চলতো।আমড়াগাছিয়া গ্রামে যে কয়েকটা খেজুর গাছ আছে তা বুড়ো হয়ে যাওয়ায় রস তেমন পাওয়া যায় না। রস বাজারে বিক্রির মতো আগের সেই অবস্থা নেই। তিনি আরও জানান, এইতো বছর কয়েক আগে এক হাড়ি খেজুর রস বিক্রি করতাম ৫০ টাকা। এখন খেজুর গাছ না থাকায় সে রসের দাম বেড়ে হয়েছে ৩০০ টাকা।
জানা গেছে, অনেক সময় ঘরবাড়ি নির্মাণ করার জন্য খেজুরের গাছ কেটে ফেলা হয় এবং পুকুর ডোবায় গাট দেয়ার কারনেও খেজুরের গাছ কেটে ফেলা হয়। ফলে দিন দিন খেজুর গাছ কমে যাচ্ছে।