সোমবার ● ২৬ নভেম্বর ২০১৮
প্রথম পাতা » উপ সম্পাদকীয় » স্বাধীন বাংলাদেশের অহংকার স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র
স্বাধীন বাংলাদেশের অহংকার স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র
মো. সাখাওয়াত হোসেন :: ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের একটি সফল সোপান স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদান। সর্বশেষ পরিসংখ্যান মোতাবেক বর্তমানে বাংলাদেশের লোক সংখ্যা প্রায় ১৬ কোটি । তন্মেধ্যে ভোটার সংখ্যা প্রায় ১১ কোটি। ১৯৭১ সালে ৭ কোটি মানুষের অর্জন রক্তে লেখা বাংলাদেশ লাল-সবুজের পতাকা। ৫২’র ভাষা আন্দোলন, ১৯৬৬’র ছয় দফা আন্দেলন, ১৯৬৯ সালের গণ অভ্যুত্থান এবং ১৯৭১ সালের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে স্বাধীনতা সংগ্রামের মধ্য দিয়ে পরাধীনতার গ্লানি মুছে স্বাধীনতার স্বপ্নের দুয়ার উন্মোচিত হয়। শুরু হয় বিশ্বায়নের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ২১ শতকের স্বপ্নের বাংলা। ২০০৭ সাল। বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের একটি স্মরণীয় মুহুর্ত। প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ টি এম শামছুল হুদা নির্বাচন কমিশন প্রতিষ্ঠার ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা একটি নাম। যার নিকট বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন ঋণী। সহজ কথায় যিনি কমিশনকে পাটি থেকে দশ তলায় উন্নিত করেছেন। বিশ্বের মাঝে বালাদেশও পারে মর্মে আবার প্রমান করেছেন। জাতিকে উপহার দিলেন স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে অর্পন করলেন এর গুরু দায়িত্ব। জানা দরকার বিশ্বের মাঝে যে স্মার্ট কার্ড বাংলাদেশ-কে নতুন ভাবে পরিচয় করে দিয়েছে তার পরিচিতি সম্পর্কে।
স্মাট কার্ড হলো অত্যাধুনিক ভাবে তৈরী যা যন্ত্র দ্বারা পাঠযোগ্য। যার মধ্যে রয়েছে সমন্বিত বর্তুনি বা ইলেকট্রনিক্স সার্কিটযুক্ত মেমোরি কার্ড। কার্ডে ভিতরে রয়েছে নিরাপত্তা সূচক সার্কিট মেমোরি কার্ড ও মাইক্রো প্রসেসর। এই কার্ড তৈরীর জন্য ২০০৭ সালে ছবিসহ ভোটার তালিকার জন্য প্রয়োজনীয় তথ্যের চেয়ে অতিরিক্ত কিছু তথ্য সংগ্রহ করা হয়। ২০০৮ সালে দেশের ০৮ কোটি ভোটার-কে প্রদান করা হয় পেপার লেমিনেটেড কার্ড জাতীয় পরিচয়পত্র। ২০০৯ সালে ১ম ছবিসহ ভোটার তালিকা হালনাগাদ করা হয়। ২০১০ সালে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন, ২০১১ সালে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগ ও আইডিইএ প্রকল্প গঠন করা হয়। ২০১২ সালে আধূনিক সরঞ্জাম সংযোজন, ২০১৩ সালে জাতীয় পরিচয় সেবা বিকেন্দ্রীকরণ, ২০১৪ সালে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন বিধিমালা, ২০১৫ সালে বেসরকারী প্রতিষ্ঠান সমূহের সাথে চুক্তি স্বাক্ষর সম্পন্ন করে ২০১৬ সালে আইরিস এবং দশ আঙ্গুলের বায়োমেট্রিক পদ্ধতি সংযোজন করা হয়। পেপার লেমিনেটেড কার্ড প্রচলনের পর সরকারী ও বেসরকারী বিভিন্ন সেবা প্রাপ্তিতে এর ব্যবহার উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেতে থাকে। ক্ষেত্র বিশেষে অপব্যবহার করতে থাকে কিছু অসাধু ব্যক্তিরা। ফলে অধিকতর প্রযুক্তি নির্ভর স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্রের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন “আইডিইএ ”প্রকল্পের মাধ্যমে স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র প্রস্তত কার্যক্রম শুরু করে। আন্তর্জাতিক মান সম্পন্ন শতভাগ পলি কার্বনেট দ্বারা পাঁচটি স্তরের বিভিন্ন উপাদান সংযোজন করে প্রস্তত করা হয়েছে আন্তর্জাতিক মান সম্পন্ন এই কার্ডটি। এতে সন্নিবেশিত হয়েছে লাল সবুজের পতাকা, বাংলাদেশের জাতীয় ফুল শাপলা, জাতীয় পাখি দোয়েল, জাতীয় স্মৃতিসৌধ, চা পাতা, জাতীয় সংগীত, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন ও বর্তমান জাতীয় পতাকা। বাংলাদেশ সরকারের কোড ডি আর্মস এর উপর মাইক্রোচিপ্স সংযোজন করে ব্ল্যাংক কার্ড বাংলাদেশে আনা হয়। অতঃপর বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব পারসোনালাইজেশন কেন্দ্রিক ব্যক্তিগত তথ্যাদি লেজার ইনব্রেফিং এর মাধ্যমে সংযোজিত হয়। অতঃপর চিপসের মধ্যে ব্যক্তিগত তথ্যাদি ডিজিটাল পদ্ধতিতে সংযোজন করা হয়েছে। স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্রের তিন স্তরের মোট ২৫ টি নিরাপত্তা বৈশিষ্ট রয়েছে। ১ম স্তরের নিরাপত্তা বৈশিষ্টসমূহ খালি চোখে দৃশ্যমান। ২য় স্তরের নিরাপত্তা বৈশিষ্টসমুহ দেখার জন্য কয়েকটি যন্ত্র যেমন আলটা ভায়োলেট লাইট, মেগনিফাইং গ্লাস ইত্যদিও প্রয়োজন হবে। অত্যাধুনিক কার্ড এর সুবিধাসমূহ শুধুমাত্র ভোটারদের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে দেশের সকল নাগরিক এর কথা বিবেচনা করে বর্তমান সরকার ২০১৩ সালের ৬ অক্টোবর জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন (সংশোধন) বিল জাতীয় সংসদে পাশ করেন। এই আইনের আওতায় ১৮ বছরের নিচের ভোটার হওয়ার যোগ্য নাগরিকগণ স্মার্ট কার্ড পাওয়ার অধিকার পায়। ইতোমধ্যে ১৫ থেকে ১৭ বছর বয়সীদের তথ্য সংগ্রহ শেষ হয়েছে। বর্তমান নির্বাচন কমিশন কমিশন আপ্রাণ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন এর শতভাগ সফলতার জন্য। ফরাসি কোম্পানি “ওভারথু টেকনোলোজি’’ সংস্থা এই প্রযুক্তি নির্ভর কার্ড টি মূদ্রণের দায়িত্ব পালন করছে। একবিংশ শতাব্দির চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় দেশীয় প্রযুক্তির অত্যাধূনিক রূপ নিয়ে একটি মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে ৪ জি’র পথে বাংলাদেশ নতুনরূপে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন একটি আস্থাভাজন প্রতিষ্ঠান হিসেবে মাইল ফলক রূপে কাজ করছে। দেশের প্রতিটি সরকারী ও বেসরকারী প্রতিষ্ঠানসমূহ সকল শ্রেণীর মানুষের দৈনন্দিন প্রয়োজন ও সমস্যা সমাধানের আধার জাতীয় পরিচয়পত্র তথা স্মার্ট জাতীয় পরিচয় পত্রের মাধ্যমে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন নাগরিক সেবা প্রদান করে যাচ্ছে। যা নিন্মে উল্লিখিত সেবা ছাড়াও অসংখ্য ক্ষেত্রে সেবা প্রদান করে যাচ্ছে।
পাসপোর্ট প্রাপ্তি ও নবায়নে, টিন নাম্বার প্রাপ্তি, ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রাপ্তি ও নবায়নে, ট্রেড লাইসেন্স প্রপ্তি ও নবায়নে, চাকুরির আবেদন, ব্যাংক হিসাব খোলা, স্থাবর সম্পত্তি ক্রয়-বিক্রয়, সরকারী বিভিন্ন ভাতা ভর্তুকি উত্তোলন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি, বিজনেস আইডি নাম্বার প্রাপ্তি, শেয়ার আবেদন ও বিও একাউন্ট প্রাপ্তি, যানবাহন রেজিস্ট্রেশন, বীমা স্কিমে অংশ গ্রহণ, বিবাহ ও তালাক রেজিস্ট্রেশন, নির্বাচনে ভোটার সনাক্তকরণ, গ্যাস পানি ও বিদ্যুৎ সংযোগ, টেলিফোন ও মোবইল সংযোগ, বিভিন্ন ধরনের ই-টিকেটিং, আসামী/অপরাধী সনাক্তকরণে, সিকিউর ওয়েব লগইন, আয়করদাতা সনাক্তকরণে এবং ব্যাংক ঋণ প্রাপ্তির ক্ষেত্রে। বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন একটি একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। সংবিধানের ১১৮ থেকে ১২৬ অনুচ্ছেদের বলয়ে দেশের সকল নাগরিকের প্রত্যাশা প্রাপ্তির কেন্দ্র বিন্দুর আরেক নাম বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন। এ প্রতিষ্ঠানের গৌরবোজ্জল ভাবমুর্তি সমুন্নত রাখতে আসুন সবাই মিলে নির্বাচন কমিশন-কে সহযোগিতা করি।
লেখক : মো. সাখাওয়াত হোসেন,গাবতলী উপজেলা নির্বাচন অফিসার,বগুড়া।