শনিবার ● ৮ ডিসেম্বর ২০১৮
প্রথম পাতা » প্রকৃতি ও পরিবেশ » বাসিয়া নদী ফের খনন শুরু : অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ হয়নি এখনও
বাসিয়া নদী ফের খনন শুরু : অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ হয়নি এখনও
বিশ্বনাথ প্রতিনিধি :: বিশ্বনাথ উপজেলা সদরের মধ্যদিয়ে বয়ে যাওয়া এক সময়ের খড়স্রোতা বাসিয়া নদীর অবশিষ্ট অংশে ফের পুনঃখনন কাজ শুরু হয়েছে। গত বুধবার (৬ ডিসেম্বর) বিশ্বনাথ পুরানবাজারের পশ্চিমে (গরু হাট) বাজারের দক্ষিণ দিক থেকে এই খনন কাজ শুরু হয়।
২০১৬-২০১৭ অর্থ বছরে জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাষ্ট ফান্ডের অর্থায়নে ৭ কিলোমিটার ‘বাসিয়া নদী পুনঃখনন প্রকল্প’ বাস্তবায়নের কার্যক্রম গ্রহণ করে সিলেটের পানি উন্নয়ন বোর্ড। তিনটি প্রকল্পের মাধ্যমে উপজেলা পরিষদের গেটের সামন থেকে ১ কোটি ৮০ লাখ টাকায় ৭ কিলোমিটার পশ্চিম দিকে এই খনন কাজ করার কথা। গত ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ এই খনন কাজ শুরু হয়। কিন্ত ২কিলোমিটার খনন কাজ করার পর বন্যার কারণে কাজ স্থগিত করা হয়।
গত বছর যে স্থান থেকে নদী খননকাজ বন্ধ করা হয়েছিল সেই স্থান থেকেই ৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ পুনঃরায় খনন কাজ শরু করে আরো ৪ কিলোমিটার খনন করতে সক্ষম হয়। আবার শেষ হওয়া সেই স্থান থেকে গত ৬ ডিসেম্বর ফের খনন কাজ শুরু হয়েছে।
এদিকে, উপজেলা সদর ও কালিগঞ্জবাজার এলাকায় বাসিয়া নদীর দু’পাড়ে গড়ে উঠা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ ও নদীর সীমানা নির্ধারণ না করেই এই খনন কাজ শুরু করার অভিযোগ রয়েছে। ইতিমধ্যে নদী খনন ও অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করার দাবিতে বাঁচাও বাসিয়া নদী ঐক্য পরিষদ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছে। উপজেলা সদর ও কালিগঞ্জবাজারে বাসিয়া নদীর দুই তীরে গড়ে উঠা ১৮৬ জনের অবৈধ স্থাপনার তালিকা তৈরি করে প্রশাসন।
এরপর গড়ে উঠা এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি উচ্ছেদ মামলা করা হয়। মামলা নং ৪/২০১৭। পরবর্তিতে দখলদারদের পক্ষ থেকে উচ্চ আদালতে একটি রিট করা হলে আদালত ৬মাসের জন্য মামলাটি স্থগিত করেন। চলতি মাসে ৬মাস পূর্ণ হবার পর আবার ৬ মাসের জন্য ষ্টেশন বাড়ানো হলে সেই ৬ মাসও পূর্ণ হয়ে গেছে বলে জানা গেছে। গত ১৮ ফেব্রুয়ারি সিলেট জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) এর কার্যালয়ে মামলার শুনানী অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও দখলদার বিভিন্ন অসুবিধা দেখিয়ে সময় বাড়াছেন বলে খবর পাওয়া গেছে।
জানা যায়, সুরমা নদীর শাখা নদী ‘বাসিয়া’ এক সময় প্রচন্ড খড়স্রোতা ছিল। কালের বির্বতনে পাহাড়ি ঢল ও পলি মিশ্রিত বন্যার পানিতে ভরাট হতে থাকে বাসিয়ার তলদেশ। এছাড়াও বিশ্বনাথ বাজার এলাকায় নদীতে বর্জ্য ফেলে ভরাট করে দেয়া হয়েছে নদীর স্বাভাবিক গতি পথ। সঙ্গে সঙ্গে ভূমি দস্যুতা দখল করে নিয়েছে নদীর দুই তীর। গড়ে তুলেছে শত শত অবৈধ স্থাপনা। শেষ পর্যন্ত অবৈধ স্থাপনাগুলো উচ্ছেদ করে নদীর খনন কাজ সম্পন হবে কি না এনিয়ে ধ্রুমজাল দেখা দিয়েছে।
চলমান মামলা নিস্পত্তির মাধ্যমে নদীর সীমানা নির্ধারণ করে দু’তীরে গড়ে উঠা সকল অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে নদী পুনঃখনন কাজ দ্রুত সম্পন্ন করার জন্য প্রশাসনের কাছে দাবি জানিয়েছেন বাঁচাও বাসিয়া ঐক্য পরিষদের আহবায়ক ফজল খান। তিনি বলেন- ফের বাসিয়া নদী খনন শুরু হয়েছে। বিশ্বনাথের প্রতিটা মানুষের কাছে আন্তরিক সহযোগিতা চান তিনি। তিনি বলেন, নদী খননের ক্ষেত্রে কেউ লাভবান হবেন, আবার কেউ ক্ষতিগ্রস্থ হবেন। নদী রক্ষা স্বার্থে তা স্বীকার করে নিতে হবে। নদী সবার। নদী বাঁচলে আমরা সুস্থ পরিবেশে বাঁচবো, কৃষক পানি পাবে, জেলে মাছ পাবে, সহজে পানি নিষ্কাশন হবে, নলকূপে ভালো পানি পাবে। নদী বাঁচানো সবার নৈতিক দায়িত্ব ও কর্তব্য। নদী খনন কাজে সবার সাহায্য সহযোগিতা কামনা করছি।