শনিবার ● ৮ ডিসেম্বর ২০১৮
প্রথম পাতা » জাতীয় » বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির ২৬ দফা নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির ২৬ দফা নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা
আজ সকালে গণতান্ত্রিক, মানবিক ও দায়বদ্ধ রাষ্ট্র ও সমাজ কায়েমে “অধিকার ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠার” অঙ্গিকারে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির পক্ষ থেকে ‘কোদাল’ মার্কার নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করা হয়। পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক ২৬ দফা ইশতেহার ঘোষণা করেন। সেগুনবাগিচায় সংহতি মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে পার্টির নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে সাইফুল হক বলেন, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের গুরুত্বপূর্ণ কোন দাবি অর্জিত না হলেও দেশে ন্যূনতম গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষায় ও ভোটাধিকার প্রয়োগে জনগণের প্রবল গণতান্ত্রিক আকাঙ্খার পাশে দাঁড়াতে আন্দোলনের অংশ হিসেবে আমরা প্রতিকুল পরিবেশে এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছি। তিনি বলেন, ন্যূনতম গণতান্ত্রিক পরিবেশ পেলে এবার জনগণের ভোট জাগরণ ঘটবে। তিনি বলেন, বর্তমান দুঃসহ অবস্থার বিরুদ্ধে জনগণের পুঞ্জিভূত ক্ষোভ ক্রমে প্রবল হয়ে উঠছে এবং সমাজের ভিতর থেকেই পরিবর্তনের গণতান্ত্রিক আকাঙ্খা জোরদার হয়ে উঠছে। তিনি বলেন, পরিবর্তনের এই ন্যায্য আকাংখাকে ধারণ করে মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত সাম্যভিত্তিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও সমাজ প্রতিষ্ঠার এজেন্ডাসমূহকে আমরা নির্বাচনের মধ্য দিয়েও এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। তিনি বলেন, নির্বাচন ব্যবস্থাসহ শাসনতান্ত্রিক গভীর সংকটসমূহের সমাধান না হলে আগামীতেও নির্বাচনকেন্দ্রীক বিদ্যমান সংকটের পুনরাবৃত্তি হবে এবং তাতে আমাদের গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা আরো বিপদগ্রস্ত হবে। এই প্রেক্ষিতে বিদ্যমান গভীর সংকট উত্তরণে মহান মুক্তিযুদ্ধের সুবর্ণজয়ন্তীকে সামনে রেখে ‘অধিকার ও ইনসাফ’ প্রতিষ্ঠায় পার্টির ২৬ দফা ভিত্তিক নির্বাচনী ইশতেহারের গুরুত্বপূর্ণ দিক ও অঙ্গিকারসমূহ তুলে ধরেন।
ইশতেহারের গুরুত্বপূর্ণ দিকসমূহ ::
১. সাংবিধানিক স্বৈরতন্ত্রের উৎস সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল, বহুদলীয় অন্তর্ভূুক্তিমূলক শাসনব্যবস্থা প্রবর্তন, সংবিধানের অগণতান্ত্রিক, সাম্প্রদায়িক ও ক্ষুদ্র জাতিসত্ত্বাবিরোধী ধারা বাতিল করা।
২. রাষ্ট্রের আইন বিভাগ, নির্বাহী বিভাগ ও বিচার বিভাগের মধ্যকার উপযুক্ত ভারসাম্য নিশ্চিত করা এবং নির্বাহী বিভাগ কর্তৃক বিচার বিভাগ নিয়ন্ত্রণের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ তৎপরতা রোধ করা।
৩. সাংবিধানিক কমিশনের মাধ্যমে সাংবিধানিক পদে নিয়োগের বিধান চালু করা।
৪. কোন অজুহাতেই মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও সংগঠিত হবার স্বাধীনতা খর্ব না করা।
৫. ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অগণতান্ত্রিক ও নিবর্তনমূলক ধারাসমূহ বাতিল করা।
৬. বিচার বহির্ভূত হত্যাকা-সহ সকল রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস বন্ধ করা। সমস্ত রাজনৈতিক হত্যাকা-ের বিচার করা। গণতান্ত্রিক আন্দোলনে পুলিশী হামলা-হস্তক্ষেপ, রিমান্ডের নামে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন ও রাজনৈতিক হয়রানির উদ্দেশ্যে মিথ্যা মামলা রোধ করা।
৭. ধর্মীয় ও জাতিগত ভিন্নতার কারণে যাবতীয় বৈষম্য দূর করা।
৮. শাসন পদ্ধতির কার্যকরী গণতান্ত্রিক বিকেন্দ্রীকরণ ও স্থানীয় সরকারের ক্ষমতায়ন করা।
৯. কালো টাকা ও পেশীশক্তি নির্ভর নির্বাচনী ব্যবস্থার আমূল সংস্কার করা।
১০. ভোট প্রয়োগে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ বাধা প্রদানকে শাস্তিযোগ্য গুরুতর অপরাধ হিসেবে গণ্য করা।
১১. দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি প্রতিরোধ ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
১২. দুর্নীতি, লুটপাট, সন্ত্রাস, দুর্বৃত্তায়ন ও দলীয়করণ বন্ধ করা।
১৩. কর্মসংস্থান, উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি ও দারিদ্র্যের অবসান ঘটানো।
১৪. গ্রামীণ ও কৃষিখাতের অগ্রাধিকার।
১৫. শ্রমিক ও শিল্পখাতের বিকাশ সাধন করা।
১৬. শিক্ষা, সংস্কৃতি, স্বাস্থ্যসেবাসহ সামাজিক খাতসমূহকে গুরুত্ব প্রদান করা।
১৭. নারীর সমঅধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত আসন বৃদ্ধি করে প্রত্যক্ষ নির্বাচন ও ‘ইউনিফর্ম সিভিল কোড’ চালু করা।
১৮. শিশু-কিশোর-বৃদ্ধ-দুঃস্থদের অধিকার নিশ্চিত করা।
১৯. বাস্তুহীনদের বাসস্থান ও বাড়ী ভাড়া আইন কার্যকরী করা।
২০. প্রতিবন্ধীদের অধিকার রক্ষা করা।
২১. জাতীয় সম্পদ রক্ষা, দেশের জ¦ালানী নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, সুন্দরবনবিনাশী রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প ও রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ স্থগিত করা।
২২. দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধ করা।
২৩. প্রকৃতি ও পরিবেশের ভারসাম্য সংরক্ষণের নীতি প্রবর্তীত করা, পরিবেশ আদালত গঠন করা।
২৪. জাতীয় স্বার্থে অর্থনৈতিক নীতি প্রণয়ন করা।
২৫. জাতীয় নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব নিশ্চিত করতে পেশাদার সশস্ত্র বাহিনীর পাশাপাশি দেশের সক্ষম তরুণ-তরুণীদের সামরিক প্রশিক্ষণ প্রদানসহ গণপ্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলা, যাতে প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায়ও তারা কার্যকরী ভূমিকা পালন করতে পারে।
২৬. সমতা, ন্যায্যতা, আন্তর্জাতিক আইন ও পারস্পরিক স্বার্থের স্বীকৃতির ভিত্তিতে তিস্তার পানি বন্টন, রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোসহ যাবতীয় দ্বিপাক্ষিক সমস্যার সমাধান করা। দেশের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা বিরোধী চুক্তিসমূহ বাতিল করা।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন পার্টির কেন্দ্রীয় নেত্রী বহ্নিশিখা জামালী, আকবর খান, শাহাদাৎ হোসেন খোকন, শেখ মো. শিমুল, অধ্যাপক মনোজ কুমার সেন, রাশিদা বেগম, মোফাজ্জল হোসেন মোশতাকসহ পার্টির কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ।