রবিবার ● ৯ ডিসেম্বর ২০১৮
প্রথম পাতা » অর্থ-বাণিজ্য » বর্তমান সরকারের দুই মেয়াদে ব্যাংকিখাতে ১০ বছরে ব্যাংক থেকে লুট হয়েছে সাড়ে ২২ হাজার কোটি টাকা
বর্তমান সরকারের দুই মেয়াদে ব্যাংকিখাতে ১০ বছরে ব্যাংক থেকে লুট হয়েছে সাড়ে ২২ হাজার কোটি টাকা
ঢাকা প্রতিনিধি :: গত এক দশকে দেশের ব্যাংকিংখাত থেকে ২২ হাজার ৫০২ কোটি টাকা লুটপাট হয়েছে বলে দাবি করেছে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)।
শনিবার (৮ ডিসেম্বর) রাজধানীর একটি হোটেলে সিপিডি আয়োজিত ‘বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাত নিয়ে আমাদের করণীয় কী’ শীর্ষক এক সেমিনারে প্রবন্ধ উপস্থাপনের সময় এসব তথ্য তুলে ধরেন, সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন।
মূল প্রবন্ধে সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, গেল এক দশকে দেশের ব্যাংকিংখাত থেকে ২২ হাজার ৫০২ কোটি টাকা লুটপাট হয়েছে। যার বিরুদ্ধে সরকারী কোনো ব্যবস্থা সেভাবে দৃশ্যমান হয়নি। বাড়তি খেলাপি ঋণ, যাচাই-বাছাই ছাড়া ঋণ অনুমোদন, ঋণ বাগিয়ে নিতে রাজনৈতিক প্রভাব, পরিচালনা পর্ষদে রাজনৈতিক পরিচয়, ব্যাংকারদের পেশাদারিত্বের অভাবে দেশের ব্যাংকিংখাত এখন ক্রান্তিকাল পার করছে।
সিপিডির সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, বর্তমান সরকারের দুই মেয়াদে ব্যাংকিখাতে বড় ধরনের বিপর্যয় ঘটেছে। সুশাসনের অভাবে বিভিন্নভাবে লুটপাট হওয়ায় পুরো আর্থিকখাতে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। আগামী বছর সিপিডি একটা নাগরিক কমিশন করতে চায়। কেননা আলাদা কমিশন ছাড়া এ খাতের বিপর্যয় ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়। এজন্য সরকার উদ্যোগ না নিলে সিপিডি নিজ উদ্যোগেই তা করবে।
অর্থনীতিবিদ ড. খন্দকার ইব্রাহীম খালেদ বলেন, বর্তমানে ব্যাংকিংখাতের অবস্থা একেবারেই নাজুক। এ অবস্থা চলতে থাকলে আগামীতে মধ্যম আয়ের দেশের যে স্বপ্ন তা বাধাগ্রস্ত হবে। বিগত সরকার এ খাতের যে ক্ষতি করেছে তা পুষিয়ে নিতে আগামীতে কি করবে সেটি এখনই তাদের বলা উচিত। তা না হলে বিশাল এ খাতে মানুষের আস্থা ফিরবে না।
অর্থনীতিবিদ ড. ওয়াহিদউদ্দীন মাহমুদ বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ভোটের মাঠে নেমেছে দলগুলো। অথচ ব্যাংকিংখাতের সুশাসন কিংবা স্থিতিশীলতা কীভাবে আসবে ইশতেহারে তার কোনো কিছু আমরা দেখছি না। তাদের প্রতিশ্রুতি থাকতে হবে। তা না হলে আগামীতে অবস্থা হবে আরো ভয়াবহ।
অর্থনীতিবিদ মো. নুরুল আমীন বলেন, নির্বাচনী হলফনামায় দেশের ভিভিআইপিরা তাদের সম্পদের যে বিবরণ দিয়েছেন তা দেখলে মনে হয় তারা খুবই গরিব। অথচ বাস্তবতা কি তাই? তাদের হলফনামার তথ্য যদি আমরা সত্য ধরে নেই তবে মধ্যম আয়ের বাংলাদেশের স্বপ্নতো সুদূর পরাহত! তার মতে, প্রার্থীরা যেমন সত্য তথ্য দিচ্ছেন না তেমনি ব্যাংকিং কিংবা দেশের আর্থিকখাত নিয়ে যত বুলিই আওড়ানো হোক প্রকৃত অবস্থা কিন্তু খুবই নাজুক। এ অবস্থা থেকে ঘুরে দাঁড়াতে হলে সুশাসন জরুরি।
এমন বিশৃঙ্খল অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক শক্তিশালীকরণ, নতুন ব্যাংক অনুমোদন না দেওয়া, দুর্নীতির বিরুদ্ধে শক্তিশালী বিচারিক ব্যবস্থাসহ কয়েকটি সুপারিশও তুলে ধরে সিপিডি। যা বাস্তবায়নে পরবর্তী সরকার কাজ করবে বলেও আশা প্রকাশ করে সিপিডি।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে ছিলেন সাবেক ডেপুটি গভর্নর খন্দকার ইব্রাহীম খালেদ, ওয়াহিদউদ্দীন মাহমুদ, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দীন, বিশ্বব্যাংকের অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান ড. আব্দুল মজিদ, অর্থনীতিবিদ মো. নুরুল আমীন।