মঙ্গলবার ● ১১ ডিসেম্বর ২০১৮
প্রথম পাতা » চট্টগ্রাম বিভাগ » আলীকদমে ইটভাটা মালিকদের রাম রাজত্ব : চলছে বৃক্ষ নিধনের মহোৎসব
আলীকদমে ইটভাটা মালিকদের রাম রাজত্ব : চলছে বৃক্ষ নিধনের মহোৎসব
আলীকদম (বান্দরবান) প্রতিনিধি :: বান্দরবানের আলীকদমে ইটভাটা মালিকরা প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে বন ধ্বংসের মহোৎসব চালিয়ে যাচ্ছে। রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে কর্তাব্যক্তিরা ভাটা মালিকদের আদিম্য খেলা উপভোগ করছেন। উপজেলায় তিনটি ভাটা রয়েছে। ভাটাগুলো হচ্ছে এবিএম, ইউবিএম ও এফবিএম। তার মধ্যে একটিরও অনুমোদন নেই বলে জানিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। ইট ভাটাগুলোতে কয়লার পরিবর্তে গাছপালা পোড়ানো হচ্ছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি না নিয়েই গড়ে উঠেছে এস ইটভাটা। ভাটা স্থাপনের বিধিমালা অমান্য করে ইটভাটা মালিকরা বসতিপূর্ণ এলাকায় ইটভাটা গড়ে তুলেছে। ইট ভাটায় বেশিরভাগ লাকড়ি সংগ্রহ করা হচ্ছে আলীকদম-থানচি সড়কের আশেপাশের বনাঞ্চল থেকে। বন হয়ে পড়ছে বৃক্ষশূণ্য। এর ফলে প্রাকৃতিক বিপর্যয় অনিবার্য হয়ে দাড়িয়েছে। এসব অনিয়মের বিষয়ে কথা বলতে নারাজ ভাটা মালিকরা। এপ্রতিনিধি ফোন কথা বলতে চেয়েছেন ইউবিএম এর মালিক শওকত কোম্পানি ও এফবিএম এর মালিক আলীকদমের প্রভাবশালী নেতা জামাল উদ্দিনের সাথে তারা কৌশলে পাশকাটিয়ে যান।
জানা গেছে, পরিবেশ ও বন আইনকে তোয়াক্কা না করে আলীকদম উপজেলায় গড়ে উঠেছে ৩টি ইটের ভাটা। ইটভাটাগুলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও লোকালয়ের তিন চারশ’ গজের মধ্যে। আশেপাশের এলাকা থেকে পাহাড় কেটে এসব ভাটায় মাটির যোগান দেওয়া হচ্ছে। ভাটাগুলোতে কোন প্রকার কয়লার ব্যবহার ছাড়াই নির্বিচারে বন এলাকার কাঠ পোড়ানোর কারণে এলাকার পরিবেশ হুমকির মুখে পড়ার আশংকা রয়েছে। অধিকাংশ বনগুলো ইতিমধ্যে বন্যপ্রাণীশূণ্য হয়ে পড়েছে। অপরদিকে জনসাধারণের চলাচলের রাস্তায় ভারী যানবাহন চালিয়ে রাস্তার ক্ষতিসাধন করছে ভাটা মালিকরা। পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্রে ১২০ ফুট উঁচু কংক্রিটের তৈরি চিমনি স্থাপনের প্রত্যয়নপত্র ও ভ্যাট সার্টিফিকেট দাখিল করতে হয়। ইট পোড়ানো নিয়ন্ত্রণ (সংশোধন) আইন- ২০০১ এর ১৭ নম্বর ধারায় ইট ভাটার লাইসেন্স প্রদানের ক্ষমতা জেলা প্রশাসকের। তিনি ইটভাটা পরিদর্শন করবেন বা তার সম মর্যাদার যে কোন কর্মকর্তা পরিদর্শন করবেন। ইট পোড়ানো আইনের ধারা ৪৬৫-এর উপধারায় বলা আছে আবাসিক এলাকা, উপজেলা সদর, ফলের বাগান, বনাঞ্চল, লোকালয় ও জনবসিত এলাকার তিন কিলোমিটারের মধ্যে ইট ভাটা স্থাপন করা যাবেনা। সর্বোচ্চ দেড় একর জমিতে নদী খালের ধারে ইট ভাটা স্থাপন করার নিয়ম থাকলেও তা না মেনেই এসব ভাটা গড়ে তুলেছে ভাটা মালিকরা। আলীকদম উপজেলায় এসব আইনের কোন বালাই নেই।
এবিষয়ে দায়সারা বক্তব্য দিলেন সংশ্লিষ্ঠ রেঞ্জের রেঞ্জ কর্মকর্তা শামসুল হক। তিনি বলেন, কাঠ কেটে ভাটায় নিয়ে এলো আমাদের কিছু করার নেই। আমরা পরিবহনকালে রাস্তায় ধরতে পারলে ব্যবস্থা নেব। অপরদিকে লামা বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা কামাল আহমেদ বলেন, যেহেতু ইটভাটাগুলো জেলা প্রশাসনের হাতে ন্যস্ত সেহেতু আমরা এককভাবে কিছু করতে পারিনা। তবে এবিষয়ে ইউএনও’র সাথে কথা বলে অভিযান পরিচালনা করা যেতে পারে।
সাম্প্রতিক সময়ে আশে পাশের পাহাড়গুলো থেকে বেপরোয়া হারে কাঠ কাটা হচ্ছে। সম্প্রতি একটি পর্যটক দল থানচি রোড এলাকা হতে অবাদে এসব কাঠ পরিবহনের দৃশ্য দেখে বিশ্বয় প্রকাশ করেন। তারা বলেন, আমরা মর্মাহত হয়েছি এসব দৃশ্য দেখে। এভাবে কাঠ কাটা হলে প্রাকৃতিক বিপর্যয় অনিবার্য।
এবিষয়ে আলীকদম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিক্যাল অফিসার ডাঃ মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী বলেন, লোকালয়ের মধ্যে গড়ে উঠা এসব ইট ভাটার নির্গত ধোঁয়া ও ধুলাবালির কারণে শ্বাসকষ্ট, চোখ জ্বালাপোড়া, সর্দিকাশি ও নানা রকম চর্মরোগ হতে পারে। কৃষি ক্ষেত্রেও বিপর্যয় সৃষ্টি হয় এবং জমির উর্বরা শক্তি কমে যায়।
জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাজিমুল হায়দার বলেন, আলীকদমে কোন ইট ভাটার অনুমোদন বা লাইসেন্স নেই। অবৈধভাবে এসব ভাটা তৈরী করা হয়েছে। শীগ্রই ভাটা মালিকদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।