শুক্রবার ● ১৪ ডিসেম্বর ২০১৮
প্রথম পাতা » প্রকৃতি ও পরিবেশ » বিশ্বনাথের ১৩টি খাল ও ৫টি হাওর খননের দাবীতে আবেদন
বিশ্বনাথের ১৩টি খাল ও ৫টি হাওর খননের দাবীতে আবেদন
বিশ্বনাথ প্রতিনিধি :: বাঁচাও বাসিয়া নদী ঐক্য পরিষদের আহবায়ক মো. ফজল খান বিশ্বনাথের ১৩টি খাল ও ৫টি হাওর খননের দাবিতে বৃহস্পতিবার সিলেটের জেলা প্রশাসক ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী বরাবরে লিখিত আদেবন করেছেন।
লিখিত আবেদনে তিনি উল্লেখ করেন- উপজেলার কৃষি উৎপাদন ও পরিবেশ রক্ষার স্বার্থে জরুরী ভিত্তিতে বাসিয়া নদীর শেষ মাথায় অর্থাৎ সুনামগঞ্জ জেলা জগন্নাথপুর উপজেলা রানিগঞ্জবাজারের পশ্চিমে জামালপুর আলুখাল নামক স্থানে নদী খনন ও কুশিয়ারা নদীতে মিলিত হাওয়ার পূর্বে হাওরের মুখ খনন করা জরুরী। খনন না হলে বাসিয়া নদী ২৫ কিলোমিটার খননের কোন উপকারে আসবে না।
এদিকে বাসিয়া নদী খনন হয়ে যাওয়া নদীর উৎপত্তি মুখ আবার ভরাট হয়ে গেছে। সেখানেও আবার খনন করতে হবে। এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে জানাগেছে, খাজাঞ্চি-মাকুন্দা নদী সদর উপজেলার চানপুরের সন্নিকটে সুরমা থেকে দক্ষিণ দিকে খাজাঞ্চি নদী-মাকুন্দা নদী ২৮ কিলোমিটার খনন কাজের টেন্ডার ২০১৯ সালের ২ জানুযারি হওয়ার কথা রয়েছে। অবৈধ দখল উচ্ছেদ, ভরাট হওয়ায় খালগুলো খনন করা একান্ত প্রয়োজন বলে বিশ্বনাথবাসি মনে করেন।
খাল ও হাওর গুলো খনন জরুরী। যেসব খাল ও নদী খনন করা প্রয়োজন সেইসব খাল ও নদীগুলো হলো, চরচন্ডি নদী বা খাল, মাটি জাড়া নদী, চান্দী খাল, পাকিচিরি ছৈলা খাল, উত্তর ধর্মদা খাল, বৈরাগী খাল, কাইয়া কাইড় খাল, সোনালী বাংলাবাজার খাল, লাকেশ্বর খাল, আমতৈল খাল, দশঘর চাউল ধনী হাওর খাল, নকিখালি খাল, বিশ্বনাথ রামধানা খাল, রামধানা কাদিপুর খাল, হাওরের মধ্যে চাল ধনী হাওর, নোয়াগাঁও হাওর, আমতৈল হাওর, রামপাশা হাওর, মাদাই হাওরসহ আরো অনেক ছোট বড় হাওর রয়েছে।
বিশ্বনাথে প্রভাবশালীদের নেপথ্যে বিভিন্ন নদ-নদীর চর দখল করে দোকানঘর নির্মাণ অব্যাহত আছে। উপজেলার আট ইউনিয়নের বিভিন্ন নদ-নদী-খালের চর দখল করে প্রভাবশালী মহল বিগত কয়েক বছর ধরে দোকানকোঠা,বাসা-বাড়ি নির্মাণ করে আসছে।
উপজেলায় বর্তমানেও সরকারি জায়গা দখলের মহা-উৎসব চলছে। উপজেলায় দুটি বড় নদী রয়েছে। একটি হল বাসিয়া নদী অপরটি মাকুন্দা নদী-খাজাঞ্চি নদী। চরচন্ডি নদী। এখন নালা বলা যায়। উপজেলায় অসংখ্য খাল-বিল রয়েছে। নদী রক্ষার্থে দীর্ঘ দিন যাবত বাঁচাও বাসিয়া নদী ঐক্য পরিষদ সংগঠনের মধ্যে আন্দোলন করে আসছে। সাধারণ মানুষকে সচেতন করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। নদীর অবস্থান সিলেট সদর উপজেলার মাসুকগঞ্জবাজার নামক স্থান থেকে ‘সুরমা নদী’ থেকে বাসিয়া নদীর উৎপত্তি হয়ে সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার খাইয়া-কাইড় নামক স্থানে ‘কুশিয়ারা নদীতে’ গিয়ে শেষ হয়েছে।
বাসিয়া নদী দৈর্ঘ্য ৪২ কিলোমিটার ও মাকুন্দা নদীর দৈর্ঘ্য প্রায় ৩১ কিলোমিটার ও প্রস্থ প্রায় ৫০-৬০ মিটার। এরই মধ্যে প্রায় ১৫ কিলোমিটার পুরো অবৈধ দখলে রয়েছে।
উপজেলা সদরের বাসিয়া নদীর প্রায় এক কিলোমিটার নদীর চর দখল করে দুই শতাধিক দোকাঘর নির্মিত হয়েছে। নদীমাতৃক এই বাংলাদেশে দিন দিন নদী-নালা, খাল-বিল ভরাট হয়ে যাওয়ার ফলে “নদীমাতৃক পরিচয়টি ”হারাতে বসেছে। তেমনি ভূমি খেকো মানুষজনও অবৈধ ভাবে এসকল জায়গা দখল করে গড়ে তুলছেন দোকানকোঠা। এসকল ভূমি খেকো মানুষের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বিশ্বনাথের বেশ কিছু প্রভাবশালীরা ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন নদীর চর দখল করে অবৈধভাবে অট্টালিকা বানাতে। কেউবা আবার বানাচ্ছেন রান্না ঘর, কেউবা গরু ঘর, কেউবা আবার টয়লেট, কেউবা আবার দোকান কোঠা। সিলেটের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলে বিশ্বনাথ উপজেলা অবস্থিত। এ উপজেলার আয়তন ২১৪৫০ বর্গ মিটার। ফসলী জমির পরিমান ১৭২০৫ হেক্টর। দুটি নদীসহ অসংখ্য খাল বিল রয়েছে। গত ২০-২৫ বছরে নদী ও খাল বিল গুলো ভরাট হওয়ায় ফসল উৎপাদন যেমন হ্রাস পেয়েছে তেমনি ভাবে পরিবেশ বিপর্যয়ের আশংকা রয়েছে। বিশ্বনাথ উপজেলার ওপর দিয়ে দুটি নদী প্রবাহিত হয়েছে। একটির নাম বাসিয়া নদী অপরটির নাম খাজাঞ্চি নদী (মাকুন্দা নদী) সিলেট সদর উপজেলার টুকেরবাজারের সোজা দক্ষিণে সুরমা নদী হতে বাসিয়া নদী উৎপত্তি হয়ে কামালবাজার, মুন্সীরবাজার হয়ে উপজেলা সদরের ওপর দিয়ে কালিগঞ্জবাজার হয়ে দেওকলস ইউনিয়নের মধ্য দিয়ে কুশিয়ারা নদীতে সংযুক্ত হয়েছে। খাজাঞ্চি নদীটি লামাকাজি ইউনিয়নের পূর্ব প্রান্ত খাজাঞ্চি গ্রামের সুরমা নদী হতে উৎপত্তি হয়ে রাজাগঞ্জ, বৈরাগী, সিঙ্গেরকাছ লামাটুকেরবাজার হয়ে জগন্নাথপুর উপজেলার রসুলগঞ্জবাজার হয়ে কুশিয়ারা নদীতে পড়েছে। ১৯৯০ সালের পূর্ব পর্যন্ত এসব নদী দিয়ে বড় বড় নৌকা, লঞ্চ, স্টিমার যাত্রী ও মালামাল বহন করতো।
এ ব্যাপারে মানুষের জনগুরুত্বপূর্ন দাবি পুরণে সরকারের প্রতি জোরদাবী জানিয়েছেন মো. ফজল খান।