সোমবার ● ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮
প্রথম পাতা » প্রধান সংবাদ » ‘উদীয়মান সূর্য্য’ প্রতীকের একমাত্র প্রার্থী হয়ে ইতিহাস গড়লেন মোকাব্বির খান
‘উদীয়মান সূর্য্য’ প্রতীকের একমাত্র প্রার্থী হয়ে ইতিহাস গড়লেন মোকাব্বির খান
বিশ্বনাথ প্রতিনিধি :: গণফোরাম তথা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীরা বিভিন্ন আসনে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ‘ধানের শীষ’ প্রতীকে অংশগ্রহন করলেও সারা দেশের মধ্যে একমাত্র সিলেট-২ আসনে নিজ দলের প্রতীক ‘উদীয়মান সূর্য্য’ নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিজয়ী হয়ে ইতিহাস গড়লেন গণফোরামের মোকাব্বির খান। বিশ্বনাথ ও ওসমানীনগর উপজেলায় গণফোরাফের গণভিত্ত্বি না থাকলেও বিএনপি-জামায়াত জোট এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট সমর্থন দেওয়ায় ও স্থানীয় বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা তার পক্ষে নির্বাচনী মাঠে কাজ করায় মোকাব্বির খান বিপুল ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হয়েছেন। এটি একটি নিরব ভোট বিপ্লব হয়েছে বলে নির্বাচনী পর্যবেক্ষকেরা মনে করছেন।
সিলেট-২ আসনের ১২৭টি কেন্দ্রে ‘উদীয়মান সূর্য্য’ প্রতীকে ৬৯ হাজার ৪২০ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন মোকাব্বির খান। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী নেতা মুহিবুর রহমান ‘ডাব’ প্রতীকে পেয়েছেন ৩০ হাজার ৪২০ ভোট। এছাড়া মহাজোটের প্রার্থী জাতীয় পার্টির বর্তমান সংসদ সদস্য ইয়াহ্ইয়া চৌধুরী ‘লাঙ্গল’ প্রতীকে পেয়েছেন ১৮ হাজার ৩২ ভোট, স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামীলীগ ঘরনার হিসেবে পরিচিত অধ্যক্ষ ড. এনামুল হক সরদার ‘সিংহ’ প্রতীকে পেয়েছেন ২০ হাজার ৭৪৫ ভোট, খেলাফত মজলিসের প্রার্থী মুহাম্মদ মুনতাছির আলী ‘দেয়াল ঘড়ি’ প্রতীকে পেয়েছেন ৫হাজার ১৭১ ভোট, স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুর রব মল্লিক ‘কার’ প্রতীকে পেয়েছেন ১হাজার ১৭০ ভোট, ইসলামী আন্দোলনের মোঃ আমির উদ্দিন ‘হাত পাখা’ প্রতীকে পেয়েছেন ১হাজার ৭৪০ ভোট, এনপিপির মনোয়ার হোসাইন ‘আম’ প্রতীকে পেয়েছেন ১হাজার ১৫৬ ভোট ও বিএনএফ’র মোশাহিদ খান ‘টেলিভিশন’ প্রতীকে পেয়েছেন ২৭৬ ভোট।
সিলেটের একটি গুরুত্বপূর্ণ আসন হচ্ছে বিশ্বনাথ ও ওসমানীনগর উপজেলা নিয়ে গঠিত সিলেট-২ আসন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনে ২৩ দলীয় ঐক্যজোট ও ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন কমিশনে মনোনয়নপত্র জামা দেন নিখোঁজ এম ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসিনা রুশদীর লুনা ও তার পুত্র ইলিয়াস আবরার অর্নব। মনোনয়নপত্র বাচাই শেষে ইলিয়াস পুত্র অর্নব মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করলে ধানের শীষের চুড়ান্ত প্রার্থী হয়ে নির্বাচনী মাঠে প্রচার প্রচারণা শুরু করেন তাহসিনা রুশদীর লুনা এবং প্রতীক বরাদ্ধের দিন লুনাকে সমর্থন জানিয়ে যুক্তরাজ্য চলে যান গণফোরামের প্রার্থী মোকাব্বির খান। কিন্ত প্রচার প্রচারণার মধ্যখানে আদালত কর্তৃক লুনার প্রার্থীতা স্থগিত হওয়ায় হতাশ ও নির্বাচন বিমুখ হয়ে পড়েন বিএনপি-জামায়াত জোটের নেতাকর্মীরা। একপর্যায়ে ঐক্যফ্রন্টের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের নির্দেশে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে যুক্তরাজ্য থেকে দেশে ফিরেন গণফোরামের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোকাব্বির খান এবং নির্বাচনের সপ্তাহ খানেক পূর্বে তাকে ২৩ দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে আনুষ্ঠানিক সমর্থন জানায় বিশ্বনাথ-ওসমানীনগর উপজেলার বিএনপি-জামায়াত। এরপর থেকে বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা অনেকটার নিরবে মোকাব্বির খানের ‘উদীয়মান সূর্য্য’ প্রতীকের পক্ষে প্রচার প্রচারণা চালিয়ে যান। অসুস্থ তাহসিনা রুশদীর লুনার নির্দেশে নিখোঁজ এম ইলিয়াছ আলীর ছোট ভাই এম আছকির আলী ও ইলিয়াস পুত্র অর্নব অংশ নেন প্রচারণায়। তারা বিভিন্ন সভা সমাবেশে আবেগময়ী বক্তব্য দেওয়ায় ভোটার সাধারণের মাঝে বিপুল সাড়া জাগে। পাশাপাশি ইলিয়াস আলীর প্রতি এই আসনের ভোটারা বেশ আবেগপ্রবন হওয়ায় ‘ধানের শীষ’ প্রতীকের স্থলে ‘উদীয়মান সুর্য্য’ প্রতীক চলে আসে মূল আলোচনায়। মোকাব্বির খান বা তাঁর দল এলাকার সাধারণ মানুষের কাছে পরিচিত না হলেও নিখোঁজ ইলিয়াস আলীর প্রতি এই আসনের মানুষের ভালোবাসা ও আবেগ এবং ইলিয়াসপত্নী তাহসিনা রুশদীর লুনার নির্বাচনে অংশগ্রহন করতে না পারার কারণে নিরব ভোট বিপ্লবের মাধ্যমে ‘উদীমান সূর্য্য’ প্রতীকে মোকাব্বির খান বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়েছেন এমনটাই মন্তব্য করেছেন নির্বাচনী পর্যবেক্ষকেরা।