শুক্রবার ● ৪ জানুয়ারী ২০১৯
প্রথম পাতা » কৃষি » চলনবিল এলাকায় ২৫ কোটি টাকার মধু উৎপাদনের সম্ভাবনা
চলনবিল এলাকায় ২৫ কোটি টাকার মধু উৎপাদনের সম্ভাবনা
মো. নূরুল ইসলাম, চাটমোহর (পাবনা) প্রতিনিধি :: বিখ্যাত কবি নবকৃষ্ণ ভট্রাচার্য তার কাজের লোক কবিতায় বহু কাল পূর্বে লিখেছেন, “মৌমাছি, মৌমাছি, কোথা যাও নাচি’ নাচি দাঁড়াও না একবার ভাই। ওই ফুল ফোটে বনে, যাই মধু আহরণে দাঁড়াবার সময় তো নাই।” নবকৃষ্ণ ভট্রাচার্য অনেক বছর পূর্বে তার কবিতায় যে চরণ গুলো লিখেছিলেন চলনবিল এলাকার বর্তমান প্রেক্ষাপটে মিলছে তার সত্যতা। এ এলাকার বিস্তীর্ণ সরিষা ক্ষেতে নেচে নেচে মধু সংগ্রহ করছে মৌবক্সে জমা করছে। মৌমাছিদের যেন দাড়াবার কোন সময় নেই। সরিষার ফুলে ফুলে ছুটে মৌমাছি যে মধু সংগ্রহ করছে মৌখামারীরা সেগুলি সংগ্রহ করে বিক্রির জন্য ক্রেতার অপেক্ষায় দিন কাটাচ্ছেন। সূত্র মতে চলতি মৌসুমে চলনবিল এলাকা থেকে প্রায় ২৫ কোটি টাকার মধু উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে।
সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা গেছে, প্রতি বছর পৌষ মাসে চলনবিল এলাকার চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া, ফরিদপুর, বড়াইগ্রাম, গুরুদাসপুর, তাড়াশ, সিংড়া, উল্লাপাড়ার পশ্চিমাংশসহ এর আশপাশ এলাকার মাঠগুলো ছেয়ে যায় হলুদ সরিষা ফুলে। পাবনা নাটোর সিরাজগঞ্জের বিভিন্ন এলাকার মৌখামারীদের পাশাপাশি সাতক্ষিরা, খুলনা, বাগেরহাট, নড়াইল, গাজীপুর, রংপুর, দিনাজপুর, চাপাইনবাবগঞ্জ, পঞ্চগড়, ঠাকুরগাও, নীলফামারীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মৌখামারীরা মধু সংগ্রহের জন্য চলনবিল এলাকার মাঠ গুলোতে অস্থায়ী আবাস গড়ে তোলেন। খামারের মৌবক্স গুলো তারা সরিষা খেতের পাশে স্থাপন করেন এবং কয়েক দিন পর পর মধু সংগ্রহ করেন।
সাতক্ষিরার কালিগঞ্জের রফিকুল ইসলাম, তানভীর, হাশেম ও নাসির এ চারজন যৌথ ভাবে গড়ে তুলেছেন একটি মৌখামার। এ বছর চলনবিল এলাকায় মধু সংগ্রহে এসেছেন তারা। চাটমোহরের নিমাইচড়া ইউনিয়নের মির্জাপুর গ্রামের পাশে সরিষা ক্ষেতে স্থাপন করেছেন তাদের ১’শ ৪০ টি মৌবক্স। তারা জানান, তিন সপ্তাহ যাবত চলনবিল এলাকায় মধু সংগ্রহ করছেন তারা। দুই টানে তারা ইতিমধ্যে ৬ মন মধু সংগ্রহ করলেও পাইকারী ক্রেতার অভাবে তা বিক্রি করতে পারছেন না। স্থানীয় বাজারে সামান্য মধু বিক্রি করতে পারছেন। বর্তমান প্রতিমন মধুর দাম চলছে ৫ হাজার থেকে ৫ হাজার ৭শ টাকা। চাটমোহর-মান্নাননগড় সড়কের পাশে চাটমোহরের গুয়াখাড়া গ্রামের মহরম হোসেন ১শ ৩০ টি মৌবক্স স্থাপন করেছেন। তিনি জানান, নভেম্বর থেকে এপ্রিল এ ৬ মাস সরিষা ক্ষেত ও লিচু বাগানে মৌবক্স স্থাপন করেন। সরিষা ক্ষেতে মৌবক্স স্থাপন করে গত দেড় মাসে ৪ বারে প্রায় ২০ মন মধু সংগ্রহ করতে পেরেছেন তিনি। গত বছর এসময় প্রতি মন মধুর দাম ছিল ৬ হাজার টাকার মতো। এবার অপেক্ষাকৃত দাম একটু কম বলে জানান তিনি। তিনি আরো জানান, এখনো পাইকাররা মধু কিনতে না আসায় অধিকাংশ মধুই মজুদ করতে হচ্ছে তাদের।
এ ব্যাপারে পাবনা মৌচাষী সমবায় সমিতির সভাপতি ও উত্তরবঙ্গ মৌচাষী সমিতির সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম জানান, প্রায় আটশ থেকে এক হাজার খামারী চলনবিলের বিভিন্ন মাঠে মধু সংগ্রহ করছেন। প্রায় সারা দেশের মৌচাষীরা মধু সংগ্রহের জন্য এসময় চলনবিল এলাকায় আসেন। এ বছর ১ হাজার ৫শ মেট্রিক টন মধু উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে যার বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ২৫ কোটি টাকা।