মঙ্গলবার ● ৮ জানুয়ারী ২০১৯
প্রথম পাতা » চট্টগ্রাম বিভাগ » বান্দরবানে আ’লীগ নেতা পরিচয়ে বন বিভাগের অনুমোদন ছাড়া সড়কের দেড় হাজার গাছ কাটছে প্রভাবশালীরা
বান্দরবানে আ’লীগ নেতা পরিচয়ে বন বিভাগের অনুমোদন ছাড়া সড়কের দেড় হাজার গাছ কাটছে প্রভাবশালীরা
বান্দরবান প্রতিনিধি :: বান্দরবানে ইউনিয়নের রেইছা-গোয়ালিয়াখোলা সড়কে এলজিইডির লাগানো দেড় হাজার বিভিন্ন প্রজাতির ছায়া গাছ কেটে ফেলার অভিযোগ পাওয়া গেছে। নিয়ম নিতি না মেনে কোনও ধরণের বিজ্ঞপ্তি ছাড়া প্রকাশ্যে নিলাম বা বনবিভাগের অনুমোদন ছাড়া সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সদর ইউপি চেয়ারম্যান হিসেবে নাম ভাঙ্গিয়ে সাচ প্রু মারমা (সাবুখয়) তার লোকজন দিয়ে এজিইডির লাগানো সরকারি রাস্তার পাশের ছায়াগাছ কেটে বিক্রয় করে দিচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন স্থানীয়রা। অভিযোগ অস্বীকার করে সাচ্ প্রু মারমা দাবি করে বলেন, সড়ক প্রশস্ত করার প্রয়োজনে নিলামের মাধ্যমেই গাছ কাটা হচ্ছে। তবে এবিষয়ে খবর নিলে দেখা যায় স্থানীয় সরকার কৌশল অধিদফতরের কর্মকর্তারা ‘নিলামের’ বিষয়ে কিছুই জানেন না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় কয়েকজন অভিযোগ করে বলেন, সড়ক প্রশস্ত করার অজুহাতে সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সদর ইউপি চেয়ারম্যান সাচ প্রু মারমা (সাবুখয়) অবৈধ ভাবে বনবিভাগের অনুমোদন ছাড়া গোপনে ৪ লাখ ১ হাজার টাকায় নিলাম দেখিয়ে দেড় হাজার গাছ কেটে নেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন। স্থানীয় নামধারি আওয়ামী লীগ নেতা আমান উল্লাহকে সঙ্গে নিয়ে গাছগুলো কাটা হয়েছে বলে জানান এলাবাসী। সড়কের দুই পাশে প্রায় দেড় হাজার বিভিন্ন প্রজাতির গাছ রয়েছে। কিন্তু গত ২৮ নভেম্বর তারিখের এক নিলামপত্রে ৬৬৬টি মেহগুনি এবং ৩৩৪টি শিশু গাছ মাত্র ৪০১ টাকা (গাছ প্রতি) দামে বিক্রি দেখানো হয়। নিলাম বাবদ বান্দরবান সদর ইউপি চেয়ারম্যানের অ্যাকাউন্টে গত ৩ ডিসেম্বর বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে ৪ লাখ ১ হাজার টাকা জমা দেওয়া হয়। অপরদিকে নিলামেপত্রে ইউপি চেয়ারম্যান ইউপি সদস্য নুরুল নবী, থোয়াইচিংউ মারমা, প্রসাং থুই মারমা, এলজিইডির (সিও) জিষু প্রিয় বড়ুয়া সদস্য ও ইউপি সচিব আকলীমা সুলতানাকে সদস্য সচিব করে যে ৬ জনের একটি কমিটির রেজুলেশন দেখানো হয়, কমিটির রেজুলেশন পত্রে তাদের কারও কোনও স্বাক্ষর পাওয়া যায়নি। সদর উপজেলার রেইছা থেকে গোয়ালিয়াখোলা ব্রিজের প্রায় ৭ কিলোমিটার সড়কের দুই পাশে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি) বিভাগের উদ্যোগে মেহগুনি, গর্জন, ফুল কড়ইসহ বিভিন্ন জাতের প্রায় দেড় হাজার গাছ লাগানো ছিল। গাছগুলোর মধ্যে ২০ থেকে ২৫ বছর আগে লাগানো অনেক গাছও ছিল। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, প্রায় সব গাছই কেটে ফেলা হচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে ইউপি চেয়ারম্যান সাচ প্রু মারমা (সাবুখয়) বলেন, প্রকাশ্যে নিলাম দেওয়া রেইছা-গোয়ালিয়াখোলা সড়কের গাছগুলো ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকায় কিনে নেন ব্যবসায়ী আমান উল্লাহ। তবে ব্যাংকে জমা দেওয়া হয়েছে ৪ লাখ ১ হাজার টাকা। বাকি টাকা আমরা কমিটির লোকজন খরচ হিসেবে নিয়েছি। বনবিভাগের অনুমোদন নিয়েই গাছগুলো কাটা হচ্ছে।
এলজিইডি’র সদর উপজেলা ইঞ্জিনিয়ার মো. জামাল উদ্দিন জানান, রেইছা-গোয়ালিয়াখোলা সড়কটি এলজিইডির সড়কটি প্রশস্তকরণের পরিকল্পনা রয়েছে। তাই সড়কের গাছগুলো সরকারি সব প্রক্রিয়া অনুসরণ করে কেটে ফেলতে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানকে বলা হয়েছিল। তবে নিলামের ব্যাপারে আমরা কিছুই জানি না।
বান্দরবানের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা বিপুল কৃষ্ণ দাস বলেন, সরকারি গাছ কাটার জন্য অবশ্যই বনবিভাগের অনুমোদন নিতে হবে। কিন্তু গোয়ালিয়াখোলা সড়কের গাছ কাটার কোনও অনুমোদন দেওয়া হয়নি। কোনও গাছ কাটার পর গাছগুলো পরিবহণের জন্য বন বিভাগ থেকে একটি অনুমোদনপত্র নিতে হয়। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দেওয়ার জন্য বনবিভাগকে নোটিশ দেওয়া হয়েছে। তবে গাছগুলো কেটে ফেলা ও নিলামের বিষয়ে আমি কিছু জানি না।