বুধবার ● ৯ জানুয়ারী ২০১৯
প্রথম পাতা » প্রধান সংবাদ » রাজশাহীতে জনপ্রিয়তায় এগিয়ে নারী নেত্রী শাহীন আক্তার রেণী
রাজশাহীতে জনপ্রিয়তায় এগিয়ে নারী নেত্রী শাহীন আক্তার রেণী
রাজশাহী প্রতিনিধি :: একাদশ জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত আসনের এমপি হতে এবার রাজশাহীর নারী নেত্রীরা দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। স্থানীয় আওয়ামী লীগের অন্তত পাঁচজন নেত্রী এ নিয়ে দল এবং সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করেছেন বলে জানিয়েছেন তাদের ঘনিষ্ঠরা।
দশম সংসদে রাজশাহী থেকে সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি হন বেগম আক্তার জাহান। এবার তিনি ছাড়াও অন্তত আরও চার নারী নেত্রী দলের মনোনয়ন চাইবেন। তারা হলেন, রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি শাহীন আক্তার রেণী, সহ-সভাপাতি নিঘাত পারভীন, সংরক্ষিত আসনের সাবেক এমপি ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী জিনাতুন নেসা তালুকদার ও জেলা মহিলা লীগের সভাপতি মর্জিনা পারভীন। এদের মধ্যে জনপ্রিয়তা ও মনোনয়ন দৌড়ে অনেক এগিয়ে রাজশাহীর নারী নেতৃত্বের আইকন শাহীন আক্তার রেণী ।
বেগম আক্তার জাহান এমপি বলেন, ‘‘আমি আবার মনোনয়ন চাইব। কারণ, আমি পাঁচ বছর যে কাজ করেছি তার কিছু অসম্পূর্ণ রয়েছে। সেগুলো সম্পন্ন করতে চাই। প্রথমবার এমপি হয়ে সবকিছু বুঝে উঠতে সময় লেগেছে। আরেকটা সুযোগ পেলে প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়তে কাজ করতে পারব।’’
সাবেক প্রতিমন্ত্রী জিনাতুন নেসা তালুকদার বলেন, ‘‘আমি সংরক্ষিত আসনের এমপি ছিলাম। একাদশ সংসদ নির্বাচনে রাজশাহী-৩ ও ৪ আসন থেকে নির্বাচন করতে দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলাম। তবে পাইনি। সে জন্য সংরক্ষিত আসনে মনোনয়ন চাইব। দল যোগ্য মনে করলে আমাকে দেবে।’’
শাহীন আক্তার রেণী রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের সহধর্মিণী। স্বামীর সঙ্গে সমানতালে দলের হাল ধরায় এরই মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন রেণী। বিশেষ করে সংগঠনে নারীর অবস্থান নিশ্চিতকরণ ও নারীদের সংগঠিত করার পেছনে তার বড় অবদান রয়েছে বলে মনে করেন নেতাকর্মীরাও।
শাহীন আক্তার রেণী সর্বশেষ নগর আওয়ামী লীগের সম্মেলনে সহ-সভাপতি হন। এর আগে তিনি নগর মহিলা আওয়ামী লীগের সদস্য ছিলেন। মূলত: ২০০৮ সালের সিটি নির্বাচনের পর রাজনীতিতে সক্রিয় হন শাহীন আক্তার রেণী। সততা, যোগ্য ও সাংগঠনিক কর্মকান্ড দিয়ে রাজশাহীর নারী নেত্রীদের মধ্যে তিনি এখন জনপ্রিয়তার শীর্ষে রয়েছেন। অনেকেই তাকে রাজশাহী নারী নেতৃত্বের আইকন হিসেবে অভিহিত করেন।
নগর আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, ‘‘শাহীন আক্তার রেণী বর্তমানে ঢাকায় অবস্থান করছেন। মঙ্গলবার রাতে রাসিক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন ও শাহীন আক্তার রেণী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাত করেছেন। চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হওয়ায় শেখ হাসিনাকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান তারা।’’
আওয়ামী লীগের ওই নেতা আরও বলেন, ‘‘সংরক্ষিত আসনে এবার নতুন মুখ চায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। রাজশাহীতে যতগুলো নারী নেত্রী রয়েছেন তাদের মধ্যে জনপ্রিয়তায় অনেক এগিয়ে রয়েছেন শাহীন আক্তার রেণী। এ জন্য আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের পক্ষে থেকে সংরক্ষিত আসনে শাহীন আক্তার রেণীকে মনোনয়ন দেয়ার দাবি উঠেছে। ফলে মনোনয়ন পাওয়ার আলোচনায় অনেক এগিয়ে রয়েছেন তিনি।’’
নগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল আলম বেন্টু বলেন, গত সিটি করপোরেশন ও সদ্য অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারীদের নৌকার পক্ষে ঐক্যবদ্ধ করতে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করেন শাহীন আক্তার রেণী। এছাড়া দলীয় কার্যক্রমের পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত থাকার কারণে ইতোমধ্যে তিনি বিশিষ্ট সমাজসেবী হিসেবেও পরিচিতি পেয়েছেন। এছাড়াও তিনি জাতীয় চার নেতার অন্যতম শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামানের পুত্রবধু। এ সব কারণে শাহীন আক্তার রেণীকে সংরক্ষিত আসনের এমপি করতে এবার জোরালো দাবি উঠেছে নগর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে। আমরা আশা করছি আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবার শাহীন আক্তার রেণীর দলীয় ত্যাগের বিষয়টি মূল্যায়ন করবেন।
অপরদিকে, এবার প্রথমবারের মতো সংরক্ষিত আসনের জন্য মনোনয়ন চাইবেন নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি নিঘাত পারভীন নিঘাত পারভীন। তিনি দলের প্রয়াত নেতা জাহাঙ্গীর আলম হারানের সহধর্মিণী। আওয়ামী লীগের সক্রিয় নেত্রী ছাড়াও বিশিষ্ট সমাজসেবী হিসেবে পরিচিত নিঘাত পারভীন।
তিনি বলেন, ‘‘এক সময় তার স্বামীর অর্থে আওয়ামী লীগ চলেছে। এছাড়াও রাজশাহীতে যে প্রথম শহীদ মিনার নির্মিত হয়ে ছিল তার খবর বহন করেছিল আমার স্বামী। ফলে রাজনীতিতে আমার স্বামীর বড় অবদান রয়েছে।’’
নিঘাত পারভীন বলেন, ‘‘বরাবরই নিজেও আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় থেকেছি। রাজনীতির পাশাপাশি সমাজ সেবামূলক সামাজিক কর্মকান্ডও চালিয়েছি। এ জন্য আমাকে নগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি পদ দেয়া হয়েছে। আমার নিজের জন্য কিছু করার নেই। আমি মানুষের সেবা করতে চাই। এ জন্য এবার সংরক্ষিত আসনে মনোনয়ন চাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চাইলে এমপি হয়ে আরো বেশী জনসেবা করতে ইচ্ছুক।’’
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর সংরক্ষিত আসনের এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন জিনাতুন নেসা তালুকদার। পরে তিনি সরকারের মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী হন। এর পর ২০০৮ সালে আবার আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে দ্বিতীয়বারের মতো সংরক্ষিত আসনের এমপি হন জিনাতুন নেসা। বর্তমানে তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি।
তবে ২০১৪ সালে তৃতীয় দফায় আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের সময় বাদ পড়েন জিনাতুন নেসা। রাজশাহী থেকে সংরক্ষিত আসনে নতুন মুখ হিসেবে এমপি নির্বাচিত হন জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি বেগম আক্তার জাহান। এবারও দলীয় মনোনয়ন চাইবেন রাজশাহীর এই নারী নেত্রী। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি রাজশাহী-৩ আসনের মনোনয়ন চেয়েছিলেন।
রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি অধ্যক্ষ শফিকুর রহমান বাদশা বলেন, মনোনয়ন অনেকেই চাইবেন। তবে এর মধ্যে যিনি সৎ, যোগ্য ও সাংগঠনিক, তার জন্য হাইকমান্ডের কাছে সুপারিশ করা হবে। এক্ষেত্রে শাহীন আক্তার রেণীকেই এবার তারা এগিয়ে রাখছেন বলেও জানান বাদশা।
আইন প্রণয়নে নারীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে ১৯৭২ সালে সংবিধানে বিশেষ কোটা চালু করা হয়। সেই থেকে প্রতিটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনেই নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসন বরাদ্দ থাকছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ আরও ২৫ বছর নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসন বহাল রাখতে সংবিধান (সপ্তদশ সংশোধন) বিল-২০১৮ পাস করা হয়েছে। এর আগে ২০০৪ সালে সংবিধানের চতুর্দশ সংশোধনীর মাধ্যমে ৪৫টি নারী আসন ১০ বছরের জন্য সংরক্ষণ করা হয়।
এরও আগে সংসদে সংরক্ষিত নারী আসন ছিল ৩০টি। পরে নবম সংসদে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে ৫০টি সংরক্ষিত নারী আসন করা হয়। একাদশ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট ২৮৮টি আসন পেয়েছে। তবে জাতীয় পার্টি ২২ আসন নিয়ে বিরোধী দলে থাকছে। এতে সংসদে ১৪ দলীয় জোটের এমপি দাঁড়িয়েছেন ২৬৬ জনে। এক্ষেত্রে এই জোট পাবে ৪৪টি সংরক্ষিত নারী আসন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ ২৫৭ আসনে জয়লাভ করায় দলটি পাবে ৪২টি আসন এবং ১৪ দলের বাকি শরিকরা পাবে ২টি। আর জাতীয় পার্টি পাবে ৩টি সংরক্ষিত আসন। রাজশাহী থেকে আওয়ামী লীগের কে হচ্ছেন নারী এমপি তা নিয়ে এখন আলোচনা সর্বত্র।
আইন অনুযায়ী, সংসদ নির্বাচনের ভোটের ফলাফল গেজেট আকারে প্রকাশের পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে সংরক্ষিত নারী আসনের নির্বাচনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এক্ষেত্রে আগামী ১ এপ্রিলের মধ্যে এ নির্বাচন সম্পন্ন করতে হবে। এ নিয়ে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
রাজশাহীর সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ফরিদুল ইসলাম বলেন, ‘‘মার্চের মধ্যে সংরক্ষিত আসনের নির্বাচন সম্পন্ন করতে হবে। যে কোনো সময় তফসিল ঘোষণা হতে পারে।’’