মঙ্গলবার ● ১৫ জানুয়ারী ২০১৯
প্রথম পাতা » জাতীয় » একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনের মধ্যে জাল ভোট পড়েছে ৮২ শতাংশ : টিআইবি
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনের মধ্যে জাল ভোট পড়েছে ৮২ শতাংশ : টিআইবি
ঢাকা প্রতিনিধি :: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনের মধ্যে জাল ভোট পড়েছে ৮২ শতাংশ আসনে। আর ৬৬ শতাংশ আসনে নির্বাচনের আগের রাতে ব্যালট বাক্সে সিল মারা হয়েছে। আর ৯৪ শতাংশ আসনে নির্বাচনী অনিয়ম হয়েছে বলে দাবি করেছে বেসরকারি গবেষণামূলক সংগঠন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি)।
টিআইবির গবেষণায় দেখা গেছে, ৫০টি আসনে গবেষণা করে তার মধ্যে ভোটের আগের রাতে ৩৩টি আসনের এক বা একাধিক কেন্দ্রে সিল মেরে রাখা হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার ১৫ জানুয়ারী রাজধানীর ধানমন্ডিতে অবস্থিত টিআইবি কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান ও প্রতিবেদন পাঠ করেন গবেষক দলের শাহজাদা এম আকরাম।
টিআইবি জানায়, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনের মধ্যে থেকে দ্বৈবচয়নের ভিত্তিতে ৪৫টি জেলার ৫০টি আসনে গবেষণা করা হয়। এর মধ্যে টিআইবি প্রকাশিত প্রাথমিক গবেষণা প্রতিবেদনে জানানো হয় এ ৫০টি আসনের মধ্যে ৪৭টি আসনে কমবেশি অনিয়ম হয়েছে। গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত আসনগুলোতে আওয়ামী লীগ ৪০, জাতীয় পার্টি ৬, বিএনপি ১, গণফোরাম ২ এবং অন্যান্য দল একটি আসনে জয়ী হয়েছে।
টিআইবির গবেষণার ৫০টি আসনে নির্বাচনের দিন সংঘটিত অনিয়মগুলোর মধ্যে রয়েছে, প্রশাসন ও আইন প্রয়োগকারী বাহিনীর নীরব ভূমিকা ৪২ আসনে, জাল ভোট দেওয়া ৪১ আসনে, নির্বাচনের আগের রাতে ব্যালটে সিল মেরে রাখা ৩৩ আসনের এক বা একাধিক কেন্দ্রে, বুথ দখল করে প্রকাশ্যে সিল মেরে জাল ভোট ৩০ আসনে, পোলিং এজেন্টকে কেন্দ্রে যেতে বাধা দেওয়া ও কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া ২৯ আসনে, ভোটারদের কেন্দ্রে যেতে বাধা দেওয়া ২৬ আসনে, ভোটারদের জোর করে নির্দিষ্ট মার্কায় ভোট দিতে বাধ্য করা ২৬ আসনে, ব্যালট পেপার শেষ হয়ে যাওয়া ২২ আসনে, আগ্রহী ভোটারদের হুমকি দিয়ে তাড়ানো ২১ আসনে, ব্যালট বাক্স আগে থেকে ভরে রাখা ২০ আসনে, প্রতিপক্ষ দলের প্রার্থীর নেতাকর্মীদের মারধর করা ১১ আসনে এবং ১০ আসনে কোনো এজেন্ট ছিল না।
জাতীয় পর্যায়ে আওয়ামী লীগ ২৫৭, জাতীয় পার্টি ২২, বিএনপি ৫, গণফোরাম ২, স্বতন্ত্র ৩ ও অন্যান্য দল ৯ আসনে জয়ী হয়। ভোটের দিন সারা দেশে ২৪ জেলায় নির্বাচনি সহিংসতার ফলে ১৮ জনের মৃত্যু হয় এবং ২০০ জন আহত হন।
এ সময় টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘আচরণবিধি লঙ্ঘিত হয়েছে, সেই পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। গণতন্ত্রের জন্য এ ধরনের নির্বাচন ইতিবাচক নয়। এ জন্য আমরা বিচারবিভাগীয় তদন্ত দাবি করেছি।’
এ সময় সুলতানা কামাল বলেন, এই নির্বাচনে প্রচুর ত্রুটি রয়েছে। আগামী নির্বাচনগুলোতে যাতে এ ত্রুটিগুলো না হয়, সেজন্য যে সরকারই আসুক না কেন, তাদের প্রতি আহ্বান থাকবে।
সংস্থাটির প্রতিবেদনের সুপারিশে বলা হয়, সৎ ও নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের প্রধান নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ দেয়া; নির্বাচন কমিশন, প্রশাসন, আইন প্রয়োগকারী সংস্থাসহ অন্যান্য অংশীজনদের দলীয় প্রভাবমুক্ত ও নিরপেক্ষ রাখতে হবে; নির্বাচনে সহিংসতা ও বলপ্রয়োগসহ নির্বাচনী আচরণবিধির বহুমুখী লঙ্ঘনের যেসব অভিযোগ উঠেছে, সেগুলোর সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত ও তার ওপর ভিত্তিতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। সরকারের পক্ষ থেকে এসব অভিযোগ আমলে নিয়ে বিচারবিভাগীয় তদন্তের উদ্যোগ নেয়া, আচরণবিধি লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনকে তাদের ব্যর্থতা নিরূপণ করা, নির্বাচন প্রক্রিয়া ডিজিটালাইজ করা, নির্বাচন পর্যবেক্ষক ও গণমাধ্যমের তথ্য সংগ্রহের জন্য অবাধ পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।
গত বছরের নভেম্বর থেকে শুরু করে ভোটের দিন ও চলতি বছরের ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত তথ্যের ভিত্তিতে এই প্রাথমিক প্রতিবেদন তৈরি করা হয়। আগামী ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত তথ্য সংগ্রহ করে চূড়ান্ত প্রতিবেদক প্রকাশ করবে প্রতিষ্ঠানটি।