শিরোনাম:
●   ভারতের তীর্থ মেলায় বাংলাদেশের জনসাধারনকে নিষেধাজ্ঞা ●   পথচারীকে বাঁচাতে গিয়ে মোটরসাইকেল আরোহীর মৃত্যু ●   জাতীয় নির্বাচনের মূল কর্তব্য থেকে বিচ্যুত হওয়ার কোন সুযোগ নেই ●   এআই ভিত্তিক বিশ্বের জন্য তরুনদের প্রস্তুত করতে হবে : চুয়েট ভিসি ●   কবি এ কে সরকার শাওনের প্রথম উপন্যাস “অতল জলে জলাঞ্জলি” প্রকাশিত ●   নবীগঞ্জে পাহাড় কাটার দায়ে এক্সেভেটর ও ট্রাকসহ আটক-৪ ●   মিরসরাইয়ে চুরি করা ডিজেলসহ চোর গ্রেফতার ●   ভরাট হওয়া রাউজান খাল এখন কৃষকের গলার কাঁটা ●   ঈশ্বরগঞ্জে পুলিশের বিশেষ অভিযানে গ্রেফতার-১১ ●   কুষ্টিয়ায় উৎসাহ সংগঠনের উদ্যোগে শীতবস্ত্র বিতরণ ●   রাবিপ্রবির নতুন ভিসি ড. আতিয়ার রহমান ●   নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের কাছে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র পরিষদের ১১টি নির্বাচন সংস্কার প্রস্তাবনা ●   রাঙামাটির ডিসি ও এডিসির বিরুদ্ধে আওয়ামীলীগের পরামর্শে কাজ করার অভিযোগ ●   পানছড়িতে ৩২বিজিবির পক্ষ থেকে শীতবস্ত্র বিতরণ ●   মিরসরাইয়ে শীতার্তদের মাঝে শীত উপকরণ বিতরণ ●   রাবিপ্রবিতে ভিসি নিয়োগের দাবিতে শিক্ষার্থীদের রাঙামাটিতে সড়ক অবরোধ : ৭২ ঘন্টার আল্টিমেটাম ●   গাজীপুরে নাগরিক ঐক্যের কার্যালয়ে বিএনপির নেতৃত্বে অগ্নিসংযোগ ও হামলার নিন্দা জানিয়েছে গণতন্ত্র মঞ্চ ●   ঈশ্বরগঞ্জে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের ৪ নেতা আটক ●   বেদে সম্প্রদায় ঝাড়ফুক দিয়েই চলে জীবন সংসার ●   তরুণ সংঘের উন্মুক্ত নক আউট ফুটবল টুর্নামেন্টের পুরস্কার বিতরণী ●   সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজ মুক্ত রাউজান গঠন করতে বদ্ধপরিকর : গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী ●   সমাবেশ শেষে ফেরার পথে স্বদলীয় প্রতিপক্ষের মামলা ●   মিরসরাইয়ে জামালপুর দারুননাজাত মাদরাসার উদ্বোধন ●   সিলেট চট্টগ্রাম ফ্রেন্ডশিপ ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে হোমিও চিকিৎসা বিষয়ক সেমিনার অনুষ্ঠিত ●   হরিনা অমৃতধাম বিহারে বুদ্ধ মূর্তি দান ও সংবর্ধনা অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত ●   চাঁদাবাজ ও দখলদারমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে চাই : ডা.শফিকুর রহমান ●   সফল হতে চাইলে সরকারকে এজেন্ডা কমিয়ে আনা দরকার ●   খাগড়াছড়ি প্রেসক্লাবের নির্বাচিত নতুন কমিটির প্রথম সভা ●   খেজুর গাছের দায়িত্ব নিলো মানুষ যে সেচ্ছাসেবী নামের সংগঠন ●   শ্রমিক নেতা শহীদুল্লাহ চৌধুরীর মৃত্যুতে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির শোক
রাঙামাটি, শুক্রবার, ১০ জানুয়ারী ২০২৫, ২৬ পৌষ ১৪৩১



CHT Media24.com অবসান হোক বৈষম্যের
বুধবার ● ২৩ জানুয়ারী ২০১৯
প্রথম পাতা » খুলনা বিভাগ » সুন্দরবনে শিকারি চক্র বেপরোয়া : উজাড় হচ্ছে মায়াবী চিত্রল হরিণ
প্রথম পাতা » খুলনা বিভাগ » সুন্দরবনে শিকারি চক্র বেপরোয়া : উজাড় হচ্ছে মায়াবী চিত্রল হরিণ
বুধবার ● ২৩ জানুয়ারী ২০১৯
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

সুন্দরবনে শিকারি চক্র বেপরোয়া : উজাড় হচ্ছে মায়াবী চিত্রল হরিণ

--- এস.এম. সাইফুল ইসলাম কবির, বাগেরহাট অফিস :: সুন্দরবনের অভ্যন্তরে শীত মৌসুমে সংঘবদ্ধ হরিণ শিকারি চক্র বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। নাইলনের ফাঁদ, জাল পেতে, স্প্রীং বসানো ফাঁদ, বিষটোপ, গুলি ছুঁড়ে, কলার মধ্যে বর্শি দিয়ে ঝুলিয়ে রাখা ফাঁদসহ পাতার ওপর চেতনানাশক ওষুধ দিয়ে হরিণ শিকারিরা হরিণ শিকার করে তা মংলার জয়মনি, চিলা, বাঁশতলা, বৌদ্ধমারী, কাটাখালী, মোড়েলগঞ্জ, শরণখোলা, ধানসাগর, বগি, দাকোপের ঢাংমারী, বানিশান্তা, খাজুরা, সাতক্ষীরা, খুলনার কয়রা, আংটিহারাসহ সুন্দরবন সংলগ্ন গ্রামগুলোতে গোপনে বসে ঐসকল হাট সহ দেশের ভিন্ন স্থানে চড়া দামে বিক্রি করছে। বনসংলগ্ন এলাকাবাসীরা জানায়, হরিণের মাংস বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি ও পৌছে দেয়ার জন্য ব্যবসায়ীদেও সিন্ডিকেট রয়েছে। তারা পেশাদার শিকারিদের অগ্রিম মোটা অংকের টাকা দাদন দিয়ে মাংস এনে তা বিভিন্ন কৌশলে বিক্রি করে থাকে। এজন্য স্থানীয় কয়েকটি গ্রামে হরিণের মাংস বেচাকেনার নিয়মিত গোপন হাট বসে বলেও জানান তারা। সেখানে প্রতি কেজি হরিণের মাংস বিক্রি হচ্ছে ৪ থেকে ৫শ’ টাকায়।মংলার জয়মনির স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য নজরুল ইসলাম বলেন, ‘বর্তমানে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ফাঁদ, বিষ, টোপ, এমনকি ক্ষেত্রবিশেষে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করেও হরিণ শিকার চলছে। কোন কোন সময় শিকারি চক্র জেলেদের ছদ্মবেশে বনের গহীনে গিয়ে হরিণ শিকার করে তা গোপনে লোকালয়ে নিয়ে আসে। পরে হরিণের মাংস, চামড়া, শিং কৌশলে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাচার করা হয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে মংলা সহ খুলনার কয়রা,সাতক্ষীরার শ্যামনগর এলাকার অনেকেই বলেন,‘সংঘবদ্ধ শিকারি চক্রের লোকালয়ে নির্দিষ্ট এজেন্ট নিয়োজিত রয়েছে। এসব এজেন্টের মাধ্যমে ৩ থেকে ৪শ’ টাকা কেজি দরে হরিণের মাংস সংগ্রহ করা যায়। পরিস্থিতি ভাল থাকলে টাকার পরিমাণ বেশি থাকলে এজেন্টরা সরাসরি রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে গিয়ে হরিণের মাংস পৌঁছে দিয়ে আসে।’বন বিভাগ, কোস্ট গার্ড ও অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নজরদারীর মধ্যেও চোরা শিকারিরা কৌশলে সুন্দরবন থেকে হরিণ শিকার করছে। গত দু’সপ্তাহের ব্যবধানে বন বিভাগ ও কোস্ট গার্ড পৃথক তিনটি অভিযান চালিয়ে সুন্দরবন থেকে শিকার করে আনা ৬৩ কেজি হরিণের মাংস, মাথা, চামড়াসহ শিকারিদের ব্যবহত হরিণ শিকারের সরঞ্জামাদি জব্দ করেছে। এর আগে গত ২১ থেকে ২৩ নভেম্বর রাসমেলা চলাকালীন সময়ে বন বিভাগ ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা অভিযান চালিয়ে হরিণের মাংস, হরিণ ধরার ফাঁদ, সরঞ্জাম ও নৌকাসহ ৫৭ জনকে আটক করে। আটককৃতদের নামে বন আইনে মামলাও দেওয়া হয়। এ সময় হরিণের মাথা, চামড়াসহ বিভিন্ন অস্ত্রশস্ত্র উদ্ধার করেছে বনবিভাগের সদস্যরা। এ ছাড়া ২২ জনকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়।
রাসমেলা ও বর্তমান সময়ে ব্যাপকভাবে হরিণ শিকারের ঘটনায় পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো উদ্বেগ জানিয়ে এ জন্য প্রশাসন ও বনবিভাগকে আরও কঠোর হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
একাধিক বনজীবী জানান, রাস মেলায় যত হরিণ শিকার হয়েছে এখন তার পরিমাণ কম। তবে একবারে বন্ধ হয়নি। বিভিন্নভাবে চোরা শিকারিরা হরিণ শিকার করে লোকালয়ে তা বিক্রি করছে। নাইলনের ফাঁদ, জাল পেতে, স্প্রীং বসানো ফাঁদ, বিষটোপ, গুলি ছুঁড়ে, কলার মধ্যে বর্শি দিয়ে ঝুলিয়ে রাখা ফাঁদসহ পাতার ওপর চেতনানাশক ওষুধ দিয়ে হরিণ শিকারিরা বিপুল সংখ্যক হরিণ শিকার করে থাকে। এরপর চামড়া, শিংসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ পাঠিয়ে দেওয়া হয় উপযুক্ত ক্রেতাদের কাছে। কখনো কখনো ঝামেলা এড়াতে তা মাটিতে পুঁতে বা সাগরে ফেলে দেওয়া হয়। আর মাংস ‘রাজ মাংস’ নামে মোংলাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ৭শ থেকে দেড় হাজার টাকা পর্যন্ত কেজি প্রতি স্থানভেদে বিক্রি করা হয়।
সর্বশেষ গত ১৯ জানুয়ারি দিনগত রাতে সুন্দরবন থেকে আট কেজি হরিণের মাংসসহ একটি চামড়া ও একটি মাথা উদ্ধার করেছে কোস্ট গার্ড পশ্চিম জোন। মোংলা উপজেলার আমবাড়িয়া খাল সংলগ্ন এলাকা থেকে এগুলো উদ্ধার করা হয়।
বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড পশ্চিম জোনের গোয়েন্দা কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট বিএনভিআর আল-মাহমুদ জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে শনিবার দিনগত রাতে অভিযান চালিয়ে হরিণের মাথা, মাংস ও চামড়া উদ্ধার করা হয়। এসময় পাচারকারীরা পালিয়ে যাওয়ায় তাদের আটক করা যায়নি। পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নিতে উদ্ধার হওয়া হরিণের মাথা, মাংস ও চামড়া জোংরা ফরেস্ট অফিসে হস্তান্তর করা হয়েছে বলেও জানান তিনি। এর আগে ১৭ জানুয়ারি পশ্চিম সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্চের তেরকাটি খাল এলাকা থেকে ২৫ কেজি হরিণের মাংস জব্দ করেছে বন বিভাগ। এ ছাড়া ৭ জানুয়ারি বন বিভাগ মোংলার পশুর নদীর চিলা বাজার সংলগ্ন কানাইনগর এলাকা থেকে একটি ডিঙ্গি নৌকাসহ ৩০ কেজি হরিণের মাংস উদ্ধার করে। অবশ্য এসব ঘটনায় কাউকে আটক করতে পারেনি উদ্ধারকারীরা।
এবার রাসমেলা ও পরবর্তী সময়ে বিপুল সংখ্যক হরিণ শিকারের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা প্রকাশ করেছে বিভিন্ন পরিবেশবাদী সংগঠন। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)’র বাগেরহাট জেলার সমন্বয়কারী নূর আলম অভিযোগ করে বলেন, বন বিভাগ ও প্রশাসনের নির্লিপ্ততায় এবার রাসমেলায় অনেক বেশি হরিণ নিধনের ঘটনা ঘটেছে। এখন একটু কমলেও হরিণ শিকার চলছে। বন বিভাগ ও প্রশাসনকে হরিণ শিকার রোধে আরও বেশি কঠোর হতে হবে।
সুন্দরবন নিয়ে গবেষণাকারী বেসরকারি সংগঠন ‘সেভ দ্যা সুন্দরবন’র চেয়ারম্যান ফরিদুল ইসলাম বলেন, হরিণ শিকার রোধে দৃশ্যত বাইরে থেকে বনবিভাগ কঠোর নজরদারি করছে মনে হলেও হরিণ শিকার কিন্তু বন্ধ হয়নি। বন আইনের কঠোর প্রয়োগের পাশাপাশি বন সংলগ্ন লোকালয়গুলোতে বিভিন্ন সচেতনতামূলক প্রচারেরও আহ্বান জানান তিনি।
পূর্ব সুন্দরবনের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মাহমুদুল হাসান বলেন, নানা সীমাবদ্ধতা ও লোকবল সঙ্কটের মধ্যেও হরিণ শিকারিদের অপতৎপরতা রোধ করতে বন বিভাগ সবসময় তৎপর রয়েছে। আমাদের স্মার্ট পেট্রোল দল সবসময় কাজ করছে। যাদেরকে আমরা আটক করে আদালতে প্রেরণ করি তাদেরকে কঠোর শাস্তির আওতায় আনা প্রয়োজন। তাহলে এই জাতীয় অপরাধ সংঘটনের হার বহুলাংশে হ্রাস পাবে। এছাড়া আমরা বিভিন্নভাবে সুন্দরবন সংলগ্ন লোকালয়গুলোতে সচেতনতামূলক কর্মকা- গ্রহণ করছি।খুলনা বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আমির হোসেন চৌধুরী বনবিভাগের জনবল সংকট ও আধুনিক অস্ত্রেও অপ্রতুলতার কথা স্বীকার করে বলেন, তারা হরিণের মাংস বিক্রি বা পাচারের খবর পেলেই তাদের আটক করে আইনের আওতায় আনেন। তিনি বলেন, বনকর্মীদের কাজের গতি ও আধুনিক বন ব্যবস্থাপনার সুন্দরবনকে গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেমের (জিপিএস) আওতায় এনে ডিজিটালাইজড করা হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রাথমিকভাবে সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জে এর কার্যক্রম শুরু হয়েছে। সব রেঞ্জেই অতিদ্রুত এ ব্যবস্থা চালু হবে বলেও জানান তিনি। এটি চালু হলে বনকর্মীদের কাজের গতিবিধি সহ শিকারি চক্রের গতিবিধিও স্যাটেলাইটের মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব হবে। কঠোর আইন ও অব্যাহত অভিযানেও বন্ধ হচ্ছেনা হরিণ শিকার। ফলে সুন্দরবন থেকে ক্রমশ দ্রুত গতিতে কমতে শুরু করেছে মায়াবি চিত্রল হরিণ।





আর্কাইভ

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)