বৃহস্পতিবার ● ২৪ জানুয়ারী ২০১৯
প্রথম পাতা » প্রধান সংবাদ » জেএমবি’র নারী সদস্যসহ ময়মনসিংহে ৪ জঙ্গি গ্রেফতারের
জেএমবি’র নারী সদস্যসহ ময়মনসিংহে ৪ জঙ্গি গ্রেফতারের
ময়মনসিংহ প্রতিনিধি :: ময়মনসিংহের বিদ্যাগঞ্জ রেলস্টেশন এলাকা থেকে জামায়াতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশের (জেএমবি) এক নারী সদস্যসহ ৪ ‘জঙ্গি’ গ্রেফতার করেছে র্যাব-১৪। এ সময় তাদের কাছ থেকে বেশ কিছু জিহাদি বই জব্দ করা হয়। গ্রেফতাররা হলেন- সিয়াম আল মাহমুদ (১৯), নাসরিন আক্তার ওরফে যোয়াইরা (২১), শাহীন ইসলাম ওরফে মাহবুব ইসলাম (২২) ও শাখাওয়াত করিম (৩৬)।
আজ বৃহস্পতিবার (২৪ জানুয়ারি) বেলা ১১ টার দিকে ময়মনসিংহের র্যাব-১৪ সদর দপ্তরের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-১৪ অধিনায়ক ইফতেখার উদ্দিন জানান, গ্রেফতাররা সবাই জেএমবি’র সক্রিয় সদস্য বলে প্রাথমিক জিঞ্জাসাবাদে জানায়। টেলিগ্রাম, থ্রিমা ও ফেসবুকের মাধ্যমে এরা একে অপরের সঙ্গে পরিচিত হয়।
টেলিগ্রামে পরিচয় হয়ে সিয়াম ময়মনসিংহ, যোয়াইরা সিলেট, শাখাওয়াত ঢাকা এবং শাহীন চুয়াডাঙ্গা থেকে হিজরতের উদ্দেশ্যে ঢাকার কমলাপুরে এসে মিলিত হয়। পরে তারা কলমাপুর থেকে জামালপুরগামী কমিউটার ট্রেনে ময়মনসিংহ সদরের বিদ্যাগঞ্জ রেলস্টেশনে এসে নামে। কিন্তু আগে থেকে নজরে রাখা র্যাব-১৪ এর একটি আভিযানিক দল ট্রেন থেকে নামার পরপরই তাদের গ্রেফতার করে। তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হছে বলে র্যাব জানায়।
র্যাবের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ময়মনসিংহ সদরের চকছত্রপুর গ্রামের মৃত মোহাম্মদ আলীর ছেলে সিয়াম আল মাহমুদ। তিনি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী। গত নভেম্বর মাসে বাড়ি থেকে নিখোঁজ হন। সেসময় তার মা আঞ্জুমানারা বেগম সন্তান নিখোঁজ বলে র্যাবের কাছে একটি অভিযোগ দায়ের করেন। সিয়াম আল মাহমুদ এর সাথে ফেসবুকে নাসরিন আক্তার ওরফে যোয়াইরা’র পরিচয় হয়।
শাহীন ইসলাম চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার নিশ্চিন্দিপুর গ্রামের রায়হান মন্ডলের ছেলে। দশম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করে বাবার সঙ্গে কৃষি কাজ করতেন। তিনি ফেসবুক পেজে ইসলামিক পোস্ট পড়তেন। সেখানেই ‘ভাবুক মানুষ ভাবুক’ নামে একটি ফেসবুক আইডি’র সঙ্গে পরিচয়ের পর একটি টেলিগ্রাম আইডিও খোলেন তিনি। এভাবেই জিহাদ ও হিজরতের প্রতি অনুপ্রাণিত হয়ে জেএমবি’তে যোগ দেন।
এছাড়া নাসরিন আক্তার ওরফে যোয়াইরা সিলেটের আব্দুর রহমানের মেয়ে। তিনি ফেসবুকের মাধ্যমে জঙ্গিবাদে অনুপ্রাণিত হন।
শাখাওয়াত করিম সীতাকুন্ডের দারুগাহাটের মৃত খায়রুল ইসলামের ছেলে। ফেসবুকের মাধ্যমে গ্রেফতারকৃত বাকিদের সঙ্গে পরিচয় হয় তার। ২০১৬ সালে বাহরাইন থেকে জেল খেটে গত কোরবানি ঈদে দেশে ফিরেছেন তিনি।
উল্লেখ্য, ময়মনসিংহের সদর উপজেলার বিদ্যাগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশন থেকে গতকাল বুধবার রাত ৮ টা ১০ মিনিটে নিষিদ্ধঘোষিত জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) এক নারী ও তিন পুরুষকে আটক করা হয়েছে বলে জানায় র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)-১৪। এসময় বিপুল পরিমান জিহাদী বই উদ্ধার করা হয়।
র্যাব-১৪’র এএসপি তৌফিকুল আলম বিষয়টি নিশ্চিত করে তাৎক্ষণিক জানান, ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে ট্রেনে করে ময়মনসিংহ ও জামালপুর হয়ে ভারত যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল তারা। জামালপুরগামী কমিউটার ট্রেনে করে তারা রাতে সদর উপজেলার কুষ্টিয়া ইউনিয়নের বিদ্যাগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশনে নামে। নামার সাথে সাথেই গতকাল বুধবার রাত ৮ টা ১০ মিনিটে বিদ্যাগঞ্জ রেল স্টেশন থেকে ময়মনসিংহের র্যাব-১৪ সদর দপ্তরের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) তৌফিকুল আলম এবং র্যাবের ক্রাইম প্রিভেনশন স্পেশাল কোম্পানির অধিনায়ক মেজর শিবলী সাদিকের নেতৃত্বে যৌথ দল তাঁদের আটক করে। এসময় তাদের ব্যাগ তল্লাশী চালিয়ে বিপুল পরিমান জিহাদী বই উদ্ধার করে র্যাব।
এসময় তিনি আরো জানান, দীর্ঘদিন ধরেই অনলাইনে তাদের নজরদারিতে রাখা হয়েছে। এছাড়াও তাদের মোবাইল ফোন ট্রেকিং করা হচ্ছিল। ফলে র্যাব সদস্যরা সেখানে ওত পেতে ছিলেন। প্রাথমিকভাবে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হলেও এব্যাপারে এখনো কিছু বলছে না। তবে এ বিষয়ে আজ বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত জানানো হবে বলে ওই সময়ই জানিয়েছিলেন এএসপি তৌফিকুল আলম।