রবিবার ● ২৭ জানুয়ারী ২০১৯
প্রথম পাতা » প্রকৃতি ও পরিবেশ » প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞাকে বৃদ্ধা আঙ্গুলী দেখিয়ে সিলেটে চলছে পাহাড় কাটার মহাউৎসব
প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞাকে বৃদ্ধা আঙ্গুলী দেখিয়ে সিলেটে চলছে পাহাড় কাটার মহাউৎসব
সিলেট প্রতিনিধি :: সিলেটে চলছে পাহাড় কাটার মহাউৎসব। বেপরোয়া ভাবে পাহাড়-টিলা কেটে পাথর উত্তোলন করছে ভূমিখেকো চক্র। ভূমিখেকো চক্র এতই বেপরোয়া যে তারা প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞাকে বৃদ্ধা আঙ্গুলী প্রদর্শন কেটে সাবাড় করছে টিলা। ফলে দেখা দিয়েছে পরিবেশ বিপর্যয়ের আশংঙ্কা।
জৈন্তাপুর উপজেলায় প্রশাসনের নিষেদাজ্ঞা অমান্য করে নতুন করে বাড়ীঘর নির্মান, পাহাড় ও টিলা কর্তন করে পাথর উত্তোলন করছে ভুমিখেকো চক্র। তবে এক্ষেত্রে প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞায়ও গাফলতি প্রলক্ষিত হয়েছে। আর বেপরোয়া টিলা কাটায় সচেতন মহল আশংঙ্কা করছেন যে কোন মুহুর্তে পাহাড় ধস, প্রাণহানি ও পরিবেশ বিপর্যয়ের।
সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার নিজপাট ইউনিয়নের গুয়াবাড়ীর সরকারী পাহাড় হতে দিন রাত ভূমি খেকো চক্রের সদস্যরা বাড়ী ঘর নির্মানের নামে পাহাড় কর্তন করে পাথর উত্তোলন করে যাচ্ছে৷ আর প্রশাসনও দায়সারাভাবে পাহাড় কর্তনের উপরে নিষেদাজ্ঞা জারী নোটিশ টানিয়ে দায়িত্ব্য আদায় করেছে।
কিন্তু প্রভাবশালীরা প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞাসুচক নোটিশকে বৃদ্ধাআঙ্গুলী দেখিয়ে পাহাড় ও টিলার বুক চিরে বাড়ীঘর নির্মান ও পাহাড়ের পাথর সংগ্রহ করছে। ফলে পাহাড়ের একাধিক অংশের মাটি বৃষ্টির পানির সাথে গড়িয়ে স্থানীয় ফসলী জমি ভরাট হচ্ছে। এছাড়া পাহাড়ের পদদেশে বসবাসকারী পরিবার গুলো জীবনের ঝুকি নিয়ে বসবাস করছে। টানা বৃষ্টির ফলে পাহাড় ধসে মারাত্বক প্রানহানীর আশংঙ্কা বিদ্যমান। কিন্তু সংশ্লিষ্ট প্রশাসন এসব দেখেও না দেখার ভান করছে বলে অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্ধাদের।
কোন প্রকার অনুমতি না নিয়ে পাহাড় কেটে পাথর উত্তোলন ও বাড়ী নির্মানকারী জৈন্তাপুর প্লাজা মার্কেটের ব্যবসায়ী কফিল উদ্দিনের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, জায়গা করে করে বাড়ী নির্মান করছেন৷ কিছু দিনের মধ্যে তিনি অফিসের সহায়তায় বরাদ্ধ নিবেন এ জন্য আগে দখল দেখাতে হবে। তবে পাহাড় কেটে বাড়ী নির্মানের তিনি প্রশাসন কিংবা পরিবেশ অধিদপ্তর হতে কোন প্রকার অনুমতি নেননি৷
তবে অভিযোগ উঠেছে জৈন্তাপুর উপজেলা ভূমি অফিসের কতিপয় কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সাথে আতাত করে ভুমিখেকো চক্র সরকারী পাহাড় শ্রেনীর ভূমি ক্রয়-বিক্রয় এবং ভূমি বন্দোবস্থ পাইয়ে দেওয়ার নামে অপরাধ সংগঠিত করছে। উপজেলা ভূমি অফিসের এক কর্মচারীর ইতোপূর্বে সরকারী আদর্শ গ্রামের ভূমি ক্রয় এবং সরকারী ভূমি দখল করে পাহাড় কেটে বাড়ী নির্মান করেছেন৷
এবিষয়ে জৈন্তাপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মৌরীন করিমের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। পরবর্তীতে জৈন্তাপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মুনতাসির হাসান পলাশ নিকট যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান যে জরুরী প্রয়োজনে তিনি কর্মস্থলের বাহিরে অবস্থান করছেন।
কর্মস্থলে ফিরেই তিনি উপজেলার গুয়াবাড়ী এলাকা পরিদর্শন করে পাহাড় কর্তনের সাথে কিংবা ভূমি দখলের সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করবেন। তবে ভূমি অফিসের কেউ জড়িত থাকেলে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
উল্লেখ্য, গত বৎসর পার্বত চট্টগ্রাম সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাহাড়া ধসে প্রাণহানীর ঘটনায় সরকারী ভাবে পাহাড় কর্তনের উপরে নিষেদাজ্ঞা জারী করা হয়৷ এমনকি ২০১৭ সালে স্থানীয় সংসদ সদস্য বর্তমান সরকারের মাননীয় প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রনালয়ের প্রতিমন্ত্রী ইমরান আহমদ এমপি সরজমিন পরিদর্শন করে গুয়াবাড়ী সহ জৈন্তাপুরের পাহাড় ও টিলা শ্রেনীর ভূমি হতে কোন রূপ পাথর উত্তোলন না করার জন্য সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে নির্দেশ প্রদান করেন। সংসদের নির্দেশের পর প্রশাসনের তৎপরতায় কিছুদিন থেমে ছিল পাহাড় কর্তন ও পাথর উত্তোলনের কাজ।