শনিবার ● ২ ফেব্রুয়ারী ২০১৯
প্রথম পাতা » প্রকৃতি ও পরিবেশ » খরস্রোতা সুরমা নদী এখন মরা খালে পরিণত
খরস্রোতা সুরমা নদী এখন মরা খালে পরিণত
বিশ্বনাথ প্রতিনিধি :: সিলেট সদর ও বিশ্বনাথ উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত এককালের খরস্রোতা সুরমা নদী অস্তিত্ব হারাতে বসেছে। বর্তমানে নদীটি ছোট খালে পরিণত হয়েছে। নদীর প্রায় ১০ কিলোমিটার অংশ খননের অভাবে ক্রমশ ভরাট হয়ে গেছে। অন্যদিকে, নদীর বিস্তীর্ণ ভূমিতে অবৈধভাবে গড়ে তোলা হয়েছে অনেক ঘর ও দোকানপাট। এক সময় সুরমা নদীর এই অংশ প্রবল স্রোতস্বিনী ছিল। বছরের বারো মাস নদী দিয়ে চলাচল করতো বড় লঞ্চ, স্টিমার ও পালতোলা নৌকা। স্রোত আর ঢেউয়ের তান্ডবে নদী তীরবর্তী গ্রামগুলো চরম ভাঙ্গনের মুখে পড়তো। এ অবস্থায় প্রায় ৩০ বছর পূর্বে তৎকালীন সরকার ধনপুর থেকে হাউশা পর্যন্ত ২ কিলোমিটার বাইপাস নদী খনন করে। এরপর থেকে সুরমার মূল প্রবাহ বাইপাস দিয়ে চলে যায়। স্রোতহীন হয়ে পড়ে ধনপুর থেকে তিলকপুর পর্যন্ত প্রবাহিত সুরমা নদীর বিশাল অংশ। এরপর থেকে ক্রমশ পলি ভরাট হতে থাকে। বর্তমানে দীর্ঘ নদীর প্রায় ১০ কিলোমিটার অংশই ভরাট হয়ে গেছে। ‘মরা গাঙ’ হিসেবে পরিচিত নদীর এই অংশে সুস্বাদু মাছের বংশও হারিয়ে গেছে। এর ফলে নদী তীরবর্তী প্রায় ২০ গ্রামের মানুষ মাছ ধরাসহ প্রাত্যহিক কাজকর্ম সম্পাদন এবং চাষাবাদের ক্ষেত্রে চরম দুর্ভোগের মুখে পড়েছেন। এলাকার প্রকৃতি এবং পরিবেশও বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে।
স্থানীয়রা জানান, পানির অভাবে দু’পারে সেচকাজ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। মরা গাঙের এই অংশে পানি না থাকায় মাছও নেই। ফলে মাছের উপর নির্ভরশীল অসংখ্য পরিবার অসহায় হয়ে পড়েছে। ইতোমধ্যে অনেক জেলে পরিবার অন্যত্র চলে গেছে। আবার অনেক মৎস্যজীবী পরিবারের লোকজন জীবিকার তাগিদে বেছে নিয়েছেন অন্য পেশা। বর্তমানে নদীর প্রায় ১০ কিলোমিটার এলাকা পুরোটাই ভরাট হয়ে গেছে। নদীর বুকে অবৈধভাবে বাড়িঘর ও দোকানপাট নির্মাণ করেছেন স্থানীয় প্রভাবশালী লোকজন। নদীর অধিকাংশ জায়গায় এখন ধান ও সবজি চাষ হচ্ছে। একইভাবে খেলার মাঠ ও গোচারণ ভূমি হিসেবেও ব্যবহার করা হচ্ছে। নদীর নাব্যতা কমে যাওয়ায় প্রতি বছর বর্ষায় পাহাড়ি ঢল এসে সরাসরি পার্শ্ববর্তী বাড়িঘরে আঘাত হানে। ভাসিয়ে নিয়ে যায় ক্ষেতের ফসল, বাড়িঘর ও গাছপালা। এই অবস্থা থেকে জনসাধারণকে বাঁচাতে শিগগিরই নদীটি খননের দাবী জানিয়েছেন এলাকাবাসী। এলাকাবাসী জানান, নদীটি খনন করা হলে মাছের প্রজনন বাড়বে, শুকনো মৌসুমে সেচ সুবিধা বৃদ্ধি পাবে ও বর্ষায় অতিরিক্ত পানি ধারণ করবে। এতে পাহাড়ি ঢলের আঘাত থেকে রক্ষা পাবে বাড়িঘর। এর সাথে অবৈধ দখল প্রক্রিয়া থেকেও রক্ষা পাবে নদীর বিস্তীর্ণ ভূমি। এ ব্যাপারে বিশ্বনাথ উপজেলার লামাকাজি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কবির হোসেন ধলা মিয়া বলেন, উপজেলার মাসিক সমন্বয় সভায় বিষয়টি নিয়ে অনেক বলেছি। কিন্তু কেউ কথা শুনে না। তিনি সুরমা নদী পুনঃখননের উদ্যোগ গ্রহণের জন্য প্রশাসনসহ সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন।
বিশ্বনাথ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) অমিতাভ পরাগ তালুকদার বলেন গতিপথ পরিবর্তন হওয়ায় নদীর এই অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। নদী ভরাটের কারণসমূহ চিহ্নিত করণ ও এই অবস্থায় কি করণীয় তা পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাথে আলোচনা করা হবে এবং সেই আলোকেই প্রয়োজনীয় প্রদক্ষেপ গ্রহনের জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবরে প্রস্তাবনা প্রেরণ করা হবে।