রবিবার ● ১০ ফেব্রুয়ারী ২০১৯
প্রথম পাতা » গাইবান্ধা » নাব্যতা সংকটে গাইবান্ধার নৌ-শ্রমিকদের মানবেতর জীবন
নাব্যতা সংকটে গাইবান্ধার নৌ-শ্রমিকদের মানবেতর জীবন
গাইবান্ধা প্রতিনিধি :: গাইবান্ধা সদর, সুন্দরগঞ্জ, সাঘাটা ও ফুলছড়ি উপজেলা দিয়ে প্রবাহিত ব্রহ্মপুত্র, যমুনা ও তিস্তা নদের নাব্যতা সংকটে নদীপথে নৌ-চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে কাজ হারিয়ে হাজারও নৌ-শ্রমিক একদিকে যেমন বেকার হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন, অন্যদিকে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। সেইসাথে মালামাল পরিবহনসহ যাতায়াতে দুর্ভোগ বেড়েছে চরাঞ্চলের মানুষদের।
গাইবান্ধার উপজেলা গুলো দিয়ে প্রবাহিত ব্রহ্মপুত্র, যমুনা ও তিস্তা নব্যতা হারিয়ে এখন মৃতপ্রায়। স্বাধীনতার পর এখানে হয়নি ড্রেজিং, খনন, সংরক্ষণ বা সংস্কার। সে কারণে দিনের পর দিন উজান থেকে নেমে আসা পলি জমে খরস্রোতা রাক্ষুসি ব্রহ্মপুত্র, যমুনা ও তিস্তা ভরাট হয়ে ধূ-ধূ বালুচর এবং আবাদি জমিতে পরিনত হয়েছে। নদ গুলোর গতিপথ পরিবর্তন হয়ে অসংখ্য খাল ও শাখানদীতে রুপ নিয়েছে। শুকনা মৌসুমে নদীপথে চলাচল অত্যন্ত দুরহ্ ব্যাপার হয়ে দাড়িয়েছে। নদীপথে চলাচলের একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে পায়ে হেঁটে, ঘোড়ার গাড়ীতে, বাঁশের সাঁকো, মোটরসাইকেল ও বাইসাইকেল। ফলে বন্দর বা নৌ-ঘাটের কাজ হারিয়ে হাজারও নৌ-শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছেন। নষ্ট হচ্ছে জেলেদের নৌকা, জাল, বাঁশের তৈরি মাছ ধরার যন্ত্র। নদী কেন্দ্রিক এসব শ্রমিক ও জেলেরা এখন বাপ দাদার পেশা ছেড়ে দিয়ে রিকসা, ভ্যান, অটোবাইক চালান। অনেকে রাজ মিস্ত্রি ও বিভিন্ন কলকারখানায় দিনমজুরের কাজ করছেন।
নদী ড্রেজিং, খনন, সংরক্ষন ও সংস্কার না করায় গতিপথ পরিবর্তন হয়ে প্রতিবছর ভাঙ্গনে জমি বসতবাড়ী নদীগর্ভে বিলিন হচ্ছে। নদীর পানি কমে যাওয়ায় হারিয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ, পাখিসহ ঐতিহ্যবাহী প্রাণীকুল। এ কারনে দিনের পর দিন পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। বন্ধ হয়ে গেছে নৌ-পথের ব্যবসা-বাণিজ্য। বন্ধ হয়ে গেছে তিস্তা সেতু, জামালগঞ্জ, বাহাদরাবাদ, দেওয়ানগঞ্জ, নারায়নগঞ্জ, চট্টগ্রাম, ঢাকাসহ অভ্যন্তরীন বিভিন্ন রুটে নৌ-চলাচল।
কথা হয় বালাসীঘাটের নৌ-মালিক ছাত্তার মিয়ার সাথে। তিনি বলেন, নদী ভরে যাওয়ায় এখন আর নৌকা চলে না। শুধুমাত্র বর্ষাকালে ২-৩ মাস নৌকায় চলাচল করা যায়। সে কারনে মাঝি মাল্লারা পেশা ছেড়ে দিয়েছেন। জেলেরা জানান, নদীতে আর মাছ পাওয়া যায়না। মুল নদী এখন নালা ও খালে রুপ নিয়েছে। সারাদিন বিভিন্ন শাখা নদীতে মাছ ধরে বিক্রি করে একদিনের সংসার চালানোর মত টাকা রোজগার করা যায়না।
হরিপুর ইউপি চেয়ারম্যান নাফিউল ইসলাম জিমি জানান- নাব্যতা সংকট দুর করতে হলে প্রয়োজন নদী ড্রেজিং ও খনন করা।
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারি প্রকৌশলী মোখলেছুর রহমান জানান, নদী ড্রেজিং ও খনন করা একটি দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা। সরকারের উপরের মহলের সিদ্ধান্ত ছাড়া এটি সম্ভব নয়।