বুধবার ● ১৩ ফেব্রুয়ারী ২০১৯
প্রথম পাতা » শিরোনাম » এক পরিবারের সকলেই প্রতিবন্ধী
এক পরিবারের সকলেই প্রতিবন্ধী
বিশ্বনাথ প্রতিনিধি :: সিলেটের বিশ্বনাথে একটি হতদরিদ্র পরিবারের ৪জন সদস্যের সকলেই প্রতিবন্ধী। তাদের মধ্যে ৩ জন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী (অন্ধ) ও ১জন শ্রবণ প্রতিবন্ধী (বধির)। তারা উপজেলার লামাকাজী ইউনিয়নের পাঠানেরগাঁও (তালুজগত) গ্রামের মৃত মন্টাই মিয়ার মেয়ে রুবিনা বেগম (২৮), মিনারা বেগম (২৫), রুকসানা বেগম (১৮) ও পুত্র লিলু মিয়া (২৩)। পিতা-মাতা বিহীন অসহায় এই প্রতিবন্ধীরা মানবেতর জীবন যাপন করছেন। অনাহারে-অর্ধাহারে কাটছে তাদের জীবন। কখনো একবেলা খেয়ে আবার কখনো না খেয়ে উপোষ থাকতে হচ্ছে এই পরিবারের সদস্যদেরকে।
জানা গেছে, পাঠানেরগাঁও (তালুজগত) গ্রামের মন্টাই মিয়া ও ফুলতেরা বেগম দম্পতির ঘরে জন্ম নেয় ৪ কন্যা ও ১ পুত্র সন্তান। বড় মেয়ে কেগন বেগম সুস্থ অবস্থায় জন্ম নিলেও অন্য দুই মেয়ে মিনারা বেগম, রুকসানা বেগম ও পুত্র লিলু মিয়া দৃষ্টি প্রতিবন্ধী এবং আরেক মেয়ে রুবিনা বেগম বধির (শ্রবন প্রতিবন্ধী) হিসেবে জন্মগ্রহন করেন। রুকসানা বেগম জন্ম গ্রহনের দুই বছর পর অর্থাৎ প্রায় ১৬ বছর পূর্বে হতদরিদ্র এই পবিারের প্রতিবন্ধী সন্তানদের অভিভাবক তাদের পিতা মন্টাই মিয়া মৃত্যুবরণ করেন। এরপর তাদের মা ফুলতেরা বেগম অন্যের বাড়ীতে দিনমজুরের কাজ করে কোনমতে সন্তানদের লালন পালন করেন এবং প্রায় ৮ বছর পূর্বে পরিবারের বড় মেয়ে কেগন বেগম সুস্থ থাকায় তাকে বিয়ে দেন। মেয়ের বিয়ের ৬মাস পরই মৃত্যুবরণ করেন ফুলতেরা বেগমও। তিনি মারা যাওয়ার পর প্রতিবেশীরা ২য় মেয়ে বধির (শ্রবন প্রতিবন্ধী) রুবিনা বেগমকে বিয়ে দেন। কিন্ত সে কিছু দিন সংসার করার পর বধির হওয়ায় সেই সংসার টিকেনি বেশীদিন। ফলে তাকে পিত্রালয়ে ফিরে আসতে হয়। বর্তমানে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ২ বোন ও ১ ভাইকে দেখাশুনা করছেন রুবিনা বেগম।
সরেজমিনে পাঠানেরগাঁও (তালুজগত) গ্রামে গিয়ে দেখাগেছে, মৃত মন্টাই মিয়ার প্রতিবন্ধী ৪ সন্তান অভিভাবকহীন অবস্থায় একটি কুড়েঘরে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে শ্রবণ প্রতিবন্ধী রুবিনা বেগম বলেন- ‘‘আমি কানে শুনি না। আমার দৃষ্টি প্রতিবন্ধী একমাত্র ভাই ও দুই বোনকে দেখাশুনা করছি আমি। তারা তিনজনের প্রতিবন্ধী ভাতায় এবং প্রতিবেশীদের সহযোগীতায় কোন মতে চলছে আমাদের সংসার। আমরা কখনো খাই আবার কখনো উপোষ থাকি। আমাদের ভিটেমাটি ছাড়া আর কিছুই নেই।’’
তাদের প্রতিবেশী ও গ্রামের অনেকের সাথে আলাপকালে জানাগেছে, ওই প্রতিবন্ধী পরিবারের শ্রবণ প্রতিবন্ধী (বধির) ২ মেয়ে ও ১ ছেলে সরকারী সামান্য ভাতা দিয়ে ৪ জনের পরিবার চালিয়ে যেতে অনেকটা হিমশিম খাচ্ছেন। পরিবারে উপার্জনের কোন ব্যক্তি না থাকায় কখনো একবেলা খেয়ে আবার কখনো না খেয়ে উপোষ থাকতে হচ্ছে তাদেরকে। অনাহারে-অর্ধাহারে কাটছে তাদের জীবন। যার ফলে এ পরিবারের দুঃখের ও কষ্ঠের সীমা নেই। মানবিক কারণে হলেও এই পরিবারের সদস্যদের প্রতিবন্ধী রক্ষা করার জন্য সরকারী-বেসরকারী সাহায্য একান্ত প্রয়োজন। যদি প্রতিবন্ধী ভাতা প্রদানের পাশাপাশি সরকারী-বেসরকারী উদ্যোগে এই প্রতিবন্ধীদেরকে আর্থিক সহায়তা করা হয় তাহলে হয়ত অসহায় প্রতিবন্ধীদের বেঁচে থাকাটা সহজ হবে। এজন্য মানবিক কারনে হলেও সরকারী-বেসরকারী উদ্যোগের পাশাপাশি বিশ্বনাথের প্রবাসী ও বিত্তবানদেরকেও এ অসহায় পরিবারকে সহযোগীতার হাত প্রসারিত করা বড়ই প্রয়োজন।