বুধবার ● ১৩ ফেব্রুয়ারী ২০১৯
প্রথম পাতা » প্রধান সংবাদ » ১টি ৮০ কেজী ওজনের বার্গার মাছের দাম ১লক্ষ ২০হাজার টাকা : ঐতিহ্যবাহী পোড়াদহ মেলা সম্পন্ন
১টি ৮০ কেজী ওজনের বার্গার মাছের দাম ১লক্ষ ২০হাজার টাকা : ঐতিহ্যবাহী পোড়াদহ মেলা সম্পন্ন
বগুড়া প্রতিনিধি :: আজ বুধবার ব্যাপক উৎসব উদ্দিপনায় মধ্যে দিয়ে বগুড়ার গাবতলী ঐতিহ্যবাহী পোড়াদহ মেলা সম্পন্ন হয়েছে। মেলাকে ঘিরে উত্তরাঞ্চল’সহ বগুড়া জেলা ও গাবতলী উপজেলা জুড়ে ছিল ব্যাপক উৎসবের আমেজ ও সবার ঘরে ঘরে ছিল আনন্দ উল্লাস ও হাসিখুশি’র বাৎসরিক ‘পোড়াদহ মেলা উৎসবের দিন’। মেলা চত্ত্বর এলাকায় আজ হবে বউ মেলা।
একাধিক সূত্রে জানায়, বগুড়ার গাবতলী মহিষাবান ইউনিয়নের গোলাবাড়ী বন্দরের পূর্বধারে গাড়ীদহ নদী ঘেষে পোড়াদহ নামক স্থানে সন্ন্যাসী পূঁজা উপলক্ষে সম্পন্ন ব্যক্তি মালিকানা জমিতে ১দিনের জন্য এই ঐতিহ্যবাহী পোড়াদহ মেলা আজ বুধবার অনুষ্ঠিত হয়েছে। মেলাটি প্রতিবছরের বাংলা সনের মাঘ মাসের শেষ বুধবার অথবা ফাল্গুন মাসের প্রথম বুধবার উদযাপিত হয়। তবে এ বছরে অন্যস্থানে অল্প জায়গায় মেলাটি উদযাপিত হলো। মেলাকে ঘিরে উৎসব আমেজে মেতে উঠেছিল আশপাশের গ্রামের সর্বস্তরের মানুষ। মেলা উপলক্ষে ওই এলাকার গৃহবধুঁরা আগেভাগেই ঘর-দুয়ার পরিস্কার করা, মুড়ি-খৈ ভাজা, পিঠা-পুলি ও নাড়কেলের নাড়– তৈরী করেছে। এমনতি নিকট আত্মীয় স্বজনরা ইতিমধ্যে এসেছে সবার ঘরে ঘরে। মেলার স্থান পোড়াদহ এলাকায় হলেও মেলাটি ছড়িয়ে পড়েছে বিভিন্ন স্থানে। পোড়াদহ মেলাকে ঘিরে মেলা বসেছিল দূর্গাহাটা, বাইগুনী, দাঁড়াইল বাজার, তরনীহাট, পেরীহাট’সহ আশপাশ বন্দরের বিভিন্ন স্থানে।১দিনের মেলা হলেও উৎসব চলে সপ্তাহ জুড়ে। মেলায় হাজার-হাজার মানুষের সমাগম ঘটেছিল। এলাকাবাসী ও দর্শনার্থীরা জানান, প্রায় ৫’শ বছর পূর্ব থেকে মেলাটি উদযাপিত হয়ে আসচ্ছে। ঈদ বা অন্য কোন উৎসবে মেয়ে-জামাইকে দাওয়াত না দিলেও পোড়াদহ মেলায় দাওয়াত দিয়ে ধুমধাম করে খাওয়াতে হয় যা রেওয়াজে পরিণত হয়েছে।
এবারের মেলার মূল আকর্ষণ ছিল দেশী-বিদেশী বিভিন্ন প্রজাতির বড় মাছ, কুল (বরই) ও কাঁঠের তৈরি ফার্নিচার। বিক্রি হয়েছে হাজার হাজার মন হরেক রকমের ছোট-বড় মিষ্টি। এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের আসবাবপত্র, কৃষি সামগ্রী ও খাদ্যদ্রব্য হাট-বাজারের আগের মতই বেচা-কেনা হয়েছে। মেলায় নানা রকমের বিনোদনের ব্যবস্থা ছিল। কাঁঠ-বাঁশ ও মাটির তৈরী পুতুল-খেলনা ও বেলুন’সহ হরেক রকমের জিনিস বিক্রি হয়েছে বেশী। ফার্ণিচার কেনা-বেচা মেলা দিনে চললেও মূলত মেলা পরের দুইদিনেও পুরোদমে কেনা-বেচা হয়। সবার সমাগমে জমে উঠেছিল পোড়াদহ মেলা। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মেলায় আগত দর্শনার্থীদের ভীড় ছিল চোখে পড়ার মত। মেলা’য় হিজরা’দের সমাগম ছিল আগের মতই। ফলে উপস্থিত অর্ধশতাধিক হিজরা’দের জন্য ছিল ‘পোড়াদহ উৎসব মেলা’। এ বছরে মাছের আমদানি ছিল বেশী। যমুনা নদী থেকে ধরা সিরাজগঞ্জের আব্দুস সামাদের মাছের দোকানে একটি ৮০ কেজী ওজনের বার্গার মাছ (প্রতিকেজী ১হাজার ৫শ টাকা) দরে মোট ১লক্ষ ২০হাজার টাকা দাম চাওয়া হয়েছে। তবে ৫০ কেজী থেকে ৮০কেজী পর্য়ন্ত মাছ মেলা বেশী উঠেছিল। তবে মেলার আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ১জন ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন।
মেলার প্রধান আয়োজক মহিষাবান ইউপি চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম সিএইচটি মিডিয়া প্রতিনিধিকে জানান, এবছরে প্রশাসনের সার্বিক সহযোগিতায় পোড়াদহ মেলা সু-শৃঙ্খলভাবে সম্পন্ন হয়েছে।
এ বিষয়ে গাবতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আব্দুল ওয়ারেছ আনসারী সিএইচটি মিডিয়া প্রতিনিধিকে জানান, মেলা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সকল প্রকার সহযোগিতা ছিল। ফলে ব্যাপক উৎসহ উদ্দিপনার মধ্যে দিয়ে মেলাটি উদযাপিত হয়েছে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গাবতলী সার্কেল) তাপস কুমার পাল সিএইচটি মিডিয়া প্রতিনিধিকে জানান, পোড়াদহ মেলায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন ছিল। এছাড়াও মেলায় আগত দর্শাণার্থীদের সেবা দিতে একটি পুলিশ এন্ট্রোল রুম চালু রাখা হয়েছিল। ফলে সকলের সহযোগিতায় মেলাটি সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে। গাবতলী মডেল থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সেলিম হোসেন সিএইচটি মিডিয়া প্রতিনিধিকে জানান, পোড়াদহ মেলা সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দ্বারা নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার ছিল। এ রির্পোট লেখা পর্য়ন্ত কোন অপ্রতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। আগামীকাল বৃহস্পতিবার বউ মেলা।