বৃহস্পতিবার ● ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০১৯
প্রথম পাতা » চট্টগ্রাম বিভাগ » আলীকদমে ইট ভাটা মালিকদের রাম রাজত্ব নিরব দর্শকের ভূমিকায় স্থানীয় প্রশাসন
আলীকদমে ইট ভাটা মালিকদের রাম রাজত্ব নিরব দর্শকের ভূমিকায় স্থানীয় প্রশাসন
আলীকদম (বান্দরবান) প্রতিনিধি :: বান্দরবানের আলীকদম উপজেলায় ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইননা মেনেই ইট তৈরি করছে তিনটি ভাটায়। নিরব দর্শকের ভূমিকায়র স্থানীয় প্রশাসন। প্রশাসনকে দিবানিদ্রা দিয়েই ভাটা মালিকরা অবৈধভাবে এসব ভাটায় ইট তৈরী ও পোড়ানোর কাজ করে যাচ্ছে। অজ্ঞাত কারণে সাইট লাইনে দাঁড়িয়ে ধ্বংসযজ্ঞ অবলোকন করছে প্রশাসন।
একদিকে ভাটার পাশ্ববর্তী এলাকার পাহাড় কেটে মাটি নেয়া হচ্ছে এসব ভাটায়। যার কারণে এলাকার প্রাকৃতিক পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে, পাহাড় ধ্বস হচ্ছে, প্রকৃতি পড়ছেি বপর্যয়ের মুখে। অপরদিকে ভূমির টপসয়েল ব্যবহার করায় ফসলের উৎপাদ ক্ষমতা ব্যহত হচ্ছে।
পাহাড় থেকে নির্বিচারে কাটা হচ্ছে গাছ। বিপন্ন প্রকৃতি। প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ মন কাঠ পোড়ানো হয় এসব ভাটায়। যার ফলে পরিবেশ ভারসাম্য হারাচ্ছে। বৃক্ষ শুণ্য হয়ে পড়ছে পাহাড় গুলো। পাহাড়ে বন্য পশু পাখির বালাই নেই বললেই চলে। এর সবই ঘটছে প্রশাসনের নাকের ডগায়। ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উদ্বোধন করেন দেশের সব চেয়ে উচ্চতার সড়ক আলীকদম-থানচি সড়ক। এ সড়কের দাধারে নানা গাছ পালায় প্রকৃতি ছিল সুসজ্জিত। যা এখন আর চোখে পড়েনা। আলীকদম থেকে থানচি পর্যন্ত ৩৩ কিলোমিটার সড়ক অতিবাহিত করতে রাস্তার দুপাশে চোখে পড়ে শুধু ন্যাড়া পাহাড়। সেসময় থেকে শুরু করে এসব পাহাড় থেকে গাছ কেটে পোড়ানো হচ্ছে এসব ইট ভাটায়। ইতিপূর্বে বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ করা হলে প্রশাসন এসবের কোন ব্যবস্থা গ্রহন করে নাই। সম্প্রতি ফাতেমা ব্রীক্স ম্যানুফেক্সারে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় ভাটা এবং ভাটার আশে পাশের এলাকায় হাজার হাজার মন কাঠ মজুদ করা রয়েছে। একই ভাবে ইউবিএম এবং এবিএম-এ গিয়েও একই দৃশ্য দেখতে পাওয় যায়। এসব ভাটা গুলোর মধ্যে উপজেলার ১নং সদর ইউনিয়নে অবস্থিত দুটি ভাটাই ড্রামশিটের চিমনি দিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে। ফলে আশে পাশের এলাকায় বায়ু দুষণ মাত্রা তিরিক্ত হারে বেড়ে গেছে। এসবইট ভাটায় লাকড়ি পরিবহনের কারণে গ্রামীণ সড়ক গুলো সারা বছরই ক্ষতবিক্ষত থাকে। ভারি যানবাহন চলাচলের ফলে রাস্তা, ব্রিজ ও কালভার্ট ভেঙে জনসাধারণের চলাচলে দুর্ভোগ চরমে ওঠে। রাস্তাঘাটধুলায় একাকার হয়ে সর্বসাধারণের চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি হয়।
এসব বিষয়ে ভাটা মালিকরা সাংবাদিকদের সাথে কথা বলতে নারাজ। একাধিক ভাটা মালিকের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে তারা কৌশলে প্রসংগ এড়িয়ে যান।
ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০১৩-এর ৬ ধারায় উল্লেখ আছে, কোনো ব্যক্তি ইট ভাটায় ইট পোড়ানোর কাজে জ্বালানি হিসেবে কোনো জ্বালানি কাঠ ব্যবহার করতে পারবেন না। এ আইন অমান্য করলে অনধিক তিন বছর কারাদন্ড বা অনধিক তিন লাখ টাকা অর্থ দন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন। সম্প্রতি একটি পর্যটক দল এসব বিষয় নিয়ে বিরুপ মন্তব্য করেছে। পর্যটক দলের একজন বলেন, আমরা শহর ছেড়ে প্রকৃতির মাঝে কিছুটা প্রশান্তি খুঁজে পাওয়ার জন্যই আসি। কিন্তু আমাদের ১ ঘন্টার যাত্রায় ১০ থেকে ১৫ টি কাঠ বোঝাই গাড়ি আমাদেরকে হতাশ করেছে। এখনি যদি এর প্রতিকার করা না যায় তাহলে প্রকৃতিকে হত্যা করা হবে।
এবিষয়ে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে আলীকদম উপজেলা নির্বাহী অফিসার নজিমুল হায়দার বলেন, আলীকদমে কোনো ইট ভাটার লাইসেন্স নেই। আমরা বিভিন্ন সমস্যার কারণে কোন ব্যবস্থা নিতে পারিনি। তবে শীগ্রই আমরা ব্যবস্থা নেব।