শুক্রবার ● ১৫ ফেব্রুয়ারী ২০১৯
প্রথম পাতা » গাইবান্ধা » স্মৃতির অতলে হারিয়ে যেতে বসেছে শহীদ মিনার
স্মৃতির অতলে হারিয়ে যেতে বসেছে শহীদ মিনার
গাইবান্ধা প্রতিনিধি :: মহান ভাষা শহীদদের স্মরণে গাইবান্ধায় নির্মিত অর্ধশতাধিক শহীদ মিনারের এখন বেহাল দশা। ফলে স্মৃতির অতলে হারিয়ে যেতে বসেছে শহীদ মিনারসহ ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস। ভাষার মাসে কিছুটা যতœ নেয়া হলেও, বছরের বাকি সময় পড়ে থাকে অযতেœ-অবহেলায়। মাতৃভাষা বাংলার দাবিতে ১৯৫২ সালে যারা বুকের তাজা রক্তে রাঙিয়েছিলেন রাজপথ, মহান শহীদদের স্মরণে গাইবান্ধায় সরকারী-বেসরকারী উদ্যোগে, বিভিন্ন সময় নির্মাণ করা হয় প্রায় অর্ধ শতাধিক শহীদ মিনার। কিন্তু অযতœ-অবহেলায় এগুলোর বেহাল দশা। আড়াই যুগ আগেও ছিল শহীদ দিবস পালনসহ সকল আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দু। অযতœ-অবহেলায় পড়ে আছে গাইবান্ধা জেলার অর্ধশতাধিক শহীদ মিনার। শহীদ মিনারের গাঁ ঘেঁসে গড়ে উঠেছে দোকান-পাঠ। এ অবস্থায় সুষ্ঠু তদারকির দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, জেলা সদর উপজেলা কুপতলা ইউনিয়নের চাপাদহ বিএল উচ্চ বিদ্যালয়ের ভবনের বারান্দায় শহীদ মিনারের বেহাল দশা। বিদ্যালয় বন্ধ থাকায় কতৃপক্ষের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে স্থানীয়রা জানান বিদ্যালয় কতৃপক্ষের উদাসীনতার কারণে এমন অবস্থা হয়েছে। একই ইউনিয়নের পশ্চিম কুপতলা উচ্চ বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে, শহীদ মিনারের জীর্ণ দশা। বিদ্যালয়ের মাঠ প্রাঙ্গনে শহীদ মিনার অবস্থিত। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ আব্দুল ওয়াদুদ মিয়া জানান, ২০১৪ সালে সংসদ সদস্য জাতীয় সংসদের হুইপ মাহবুব আরা গিনি শহীদ মিনারটি উদ্বোধন করেন। তারপর কোন প্রকার বরাদ্দ না পাওয়ায় শহীদ মিনারটি এভাবেই পড়ে রয়েছে। বিদ্যালয়ের সভাপতি ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক বলেন, এবার বরাদ্দ পেলেই শহীদ মিনারটির কাজ শুরু করা হবে। সদর উপজেলার লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের লেংগা বাজার সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে, এ বিদ্যালয়ের শহীদ মিনারটিরও একই অবস্থা। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তোজাম্মেল হক জানান, সরকারি বরাদ্দ না পাওয়ায় শহীদ মিনারের এমন অবস্থা। অপরদিকে সদর উপজেলার বোর্ড বাজারে মেইন সড়কের নতুন শহীদ মিনার নির্মাণ করায় শহীদ মিনারটির গুরুত্ব হারিয়েছে বলে জানান স্থানীয়রা।
এছাড়াও সদর উপজেলার লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নে হাটের ভেতরে রয়েছে একটি শহীদ মিনার। এ শহীদ মিনারটিও বর্তমানে বেহাল দশা। লক্ষ্মীপুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান বাদল বলেন, এলজিইডিতে বরাদ্দ চেয়েছি। বরাদ্দ পেলে এক মাসের মধ্যেই শহীদ মিনারের কাজ শুরু করা হবে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় কয়েকজন ব্যবসায়ি জানান, আমরা দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে দেখে আসছি এই শহীদ মিনারটি কোন সংস্কার করা হয় না। মাতৃভাষা দিবস কিংবা ২৬ মার্চ উপলক্ষে এই শহীদ মিনারে কোন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় না। অন্যদিকে সুন্দরগঞ্জ উপজেলার ৮নং ধোপাডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদ সংলগ্ন গাইবান্ধা-সুন্দরগঞ্জ সড়কে অবস্থিত শহীদ মিনারটির আরও জীর্ণ দশা। শহীদ মিনারটির কিছু অংশ পুকুরে ভেঙ্গে পড়ছে। শহীদ মিনারের পাশেই রয়েছে গণসৌচাগার ও ধোপাডাঙ্গা বাজার। এ শহীদ মিনারটিও দীর্ঘদিন হলো কোন সংস্কার করা হচ্ছে না। এব্যাপারে ধোপাডাঙ্গা চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মোখলেছুর রহমান রাজু বলেন, ইউনিয়ন পরিষদে কোন বরাদ্দ নাই। ফলে শহীদ মিনারটি সংস্কার করতে পারছি না। বরাদ্দ পেলেই শহীদ মিনারটির কাজ শুরু করা হবে।
গাইবান্ধা জেলা শিক্ষা অফিসার এনায়েত আলী জানান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শত ভাগ শহীদ মিনার নির্মাণ সম্ভব হয়নি। প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণের জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে।