সোমবার ● ১৮ ফেব্রুয়ারী ২০১৯
প্রথম পাতা » অপরাধ » আদালতে ঘাতক বাবার জবানবন্দি : পরকীয়ায় আসক্ত স্ত্রীকে শাস্তি দিতে সন্তান খুন
আদালতে ঘাতক বাবার জবানবন্দি : পরকীয়ায় আসক্ত স্ত্রীকে শাস্তি দিতে সন্তান খুন
গাজীপুর জেলা প্রতিনিধি :: ‘বাবা আমার ভালো লাগতাছে না, আমি তোমার বুকে ঘুমাবো।’ সাত বছরে কন্যা মনিরার এমন অনুরোধ ফেলতে পারেনি বাবা রফিকুল ইসলাম। দুপুরে খেয়েই রফিকুল একমাত্র কন্যাকে বুকে নিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। বিকেল ৪টার দিকে হঠাৎ ঘুম ভেঙে দেখে কন্যা তার বুকেই ঘুমিয়ে আছে। আস্তে আস্তে মেয়েকে বুকের কাছ থেকে সরিয়ে মুখে রুমাল চেয়ে ধরে বাবা। মৃত্যু নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত ছোট্ট মনিরার নাকে-মুখে রুমালটি চেপে রাখা হয়।
গাজীপুরের শ্রীপুর পৌরসভার কেওয়া পূর্বখন্ড গ্রামের রফিকুল ইসলাম আদালতের কাছে এভাবেই নিজ কন্যাকে হত্যার বর্ণনা দেয়।
১১ ফেব্রুয়ারি সোমবার দুপুরে গাজীপুরের বিচারিক হাকিম শামীমা আক্তার ১৬৪ ধারায় এ জবানবন্দি রেকর্ড করেন। পরকীয়ায় আসক্ত স্ত্রীকে শাস্তি দিতেই নিজ হাতে সন্তানকে হত্যা করে বলে আদালতকে জানিয়েছে রফিকুল ।
আদালতে দেওয়া রফিকুলের জবানবন্দি উদ্ধৃত করে শ্রীপুর থানার ওসি জাবেদুল ইসলাম জানান, স্বামী-স্ত্রী দু’জনই পোশাক কারখানার শ্রমিক। ২০১২ সালে তাদের বিয়ে হয়। এর আগে স্ত্রী নাছরিনের দুটি বিয়ে হয়েছিল। তবে সে বিষয়টি গোপন রেখে রফিকুলকে তৃতীয় বিয়ে করেন নাছরিন। তার সঙ্গে সংসার করার সময়ও নাছরিন অন্য এক যুবকের সঙ্গে পরকীয়ায় লিপ্ত হয়ে পড়েন। এ কারণে বছরখানেক আগে রফিকুলকে তালাক দিয়ে মেয়েকে নিয়ে চলে যান নাছরিন। পরে রফিকুল অনুনয়-বিনয় করে আবার নাছরিনকে ঘরে তুলে আনে। কিন্তু অন্য যুবকের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রেখে চলেন নাছরিন। বিষয়টি মেনে নিতে পারেনি রফিকুল। এ নিয়ে তাদের মধ্যে প্রায়ই মারামারি ও ঝগড়া হতো। গত ৮ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার দুপুরে বাসায় মিলাদের আয়োজন করেন তারা। নাছরিন তার দুই বন্ধুকে নিজ হাতে তুলে খাওইয়ে দেয়। এতে রফিকুল ভেতরে ভেতরে ফুঁসতে থাকে। এ ঘটনা নিয়ে শনিবার রাতেও দু’জনের মধ্যে মারামারি হয়।
ওসি আরও জানান, রবিবার সকালে রান্নাবান্না শেষ করে কন্যা মনিরাকে স্কুলে দিয়ে কাজে চলে যান নাছরিন। রফিকুল বাসাতেই থেকে যায়। দুপুরের বিরতির সময় বাসায় ফিরে নাছরিন স্বামী-সন্তানকে নিয়ে খাবার খেয়ে আবার কাজে চলে যান। এ সময় রফিকুল তার কন্যাকে বুকে নিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে স্ত্রী নাছরিনকে শাস্তি দিতে কন্যাকে হত্যার সিদ্ধান্ত নেয় সে। কন্যাকে হত্যার পর স্ত্রীকে টেলিফোন করে রফিকুল বলে- ‘থাক এবার শান্তিতে, আমারে আর তোর মাইয়ারে আর কোনোদিন পাবি না।’
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান বলেন, শিশু মনিরাকে ঘটনার কয়েকদিন আগে স্থানীয় হাজী মোহাম্মদ আলী কিন্ডারগার্টেনের প্লে শ্রেণিতে ভর্তি করে দেওয়া হয়েছিল। রবিবার পোশাক কারখানা থেকে বাসায় ফিরে কন্যাকে খুঁজে না পেয়ে পুলিশে খবর দেন নাছরিন। পরে পুলিশ গিয়ে তাদের বসতঘরের খাটের নিচে সিলভারের (অ্যালুমিনিয়ম) একটি পাতিলের ভেতর থেকে শিশুটির মৃতদেহ উদ্ধার করে। ওই ঘটনায় গত সোমবার ভোরে জয়দেবপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে পলাতক রফিকুলকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে দুপুরে আদালতে হাজির করা হলে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে সন্তানকে হত্যার কথা স্বীকার করে সে।
জানা গেছে, জেলার কাপাসিয়ার চাঁপাত গ্রামের মাঈন উদ্দিনের ছেলে রফিকুল স্ত্রী নাছরিন ও মেয়ে মনিরাকে নিয়ে ওই বাসায় থাকত। দু’জন একই পোশাক কারখানায় চাকরি করেন।