রবিবার ● ৩ জানুয়ারী ২০১৬
প্রথম পাতা » পাবনা » পৌর নির্বাচনের ফলাফল বাতিলের দাবিতে নৌকা সমর্থক গোষ্ঠির মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ
পৌর নির্বাচনের ফলাফল বাতিলের দাবিতে নৌকা সমর্থক গোষ্ঠির মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ
পাবনা থেকে মোবারক বিশ্বাস :: পাবনা পৌরসভার নির্বাচনের ফলাফল বাতিল করে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ পুর্বক বদলীর দাবিতে কালো পতাকা প্রদর্শন, মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে আওয়ামীলীগ নৌকা সমর্থক গোষ্ঠি৷ শনিবার বেলা ৩টার দিকে আব্দুল হামিদ রোডের দলীয় কার্যালয়ের সামনে এ কর্মসুচী পালন করা হয়৷
আওয়ামীলীগ দলীয় নৌকা প্রতিকের প্রার্থী জেলা যুবলীগের সাধারন সম্পাদক রাকিব হাসান টিপুর নেতৃত্বে কর্মসুচীতে বক্তব্য রাখেন আওয়ামীলীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দ৷
বক্তারা অভিযোগ করে বলেন, জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার শিল্পপতি অঞ্জন চৌধুরী পিন্টুর কাছ থেকে টাকা নিয়ে পৌর নির্বাচনের ফলাফল পাল্টে দেয়৷ ফলে জনগনের মতামতের প্রতিফলন ঘটেনি৷ তাই দ্রম্নত এ ফলাফল বাতিল করে পুনরায় নির্বাচনের দাবী জানান৷ অন্যথায় জেলা প্রশাসক কার্যালয়সহ পুলিশ সুপারের কার্যালয় আগামীতে অবরোধের ঘোষনা দেন৷
এর আগে গত বৃহস্পতিবার দুপুরে পাবনা পৌরসভার নির্বাচনের ফলাফল বাতিল করে পুর্নঃ নির্বাচনের দাবীতে পাবনা জেলা আওয়ামীলীগ সংবাদ সম্মেলন ও সড়ক অবরোধ করে৷ দুপুর ৩টার দিকে আব্দুল হামিদ রোডের আওয়ামীলীগের জেলা কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, পাবনা জেলা আওয়ামীলীগের সিনিয়র সহ সভাপতি রেজাউল রহিম লাল, জেলা পরিষদের প্রশাসক এম সাইদুল হক চুন্নু, জেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক ও সদর আসনের এমপি গোলাম ফারুক প্রিন্স, সদর উপজেলার চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মোশাররফ হোসেন, পাবনা পৌর সাধারন সম্পাদক মামুন হোসেন, জেলা যুবলীগের সভাপতি শরিফ প্রধান ও আওয়ামীলীগ দলীয় প্রার্থী ও জেলা যুবলীগের সাধারন সম্পাদক রাকিব হাসান টিপু৷
সংবাদ সম্মেলনে এমপি অভিযোগ করে বলেন, জেলার ৬টি পৌরসভায় ভোট গ্রহনে জনগণের রায়ের প্রতিফলন ঘটলেও পাবনা পৌরসভায় এর ব্যাতিক্রম হয়েছে৷ অথচ ২০০৮ সালের নির্বাচনের পর পাবনা সদরে সবচেয়ে বেশি উন্নয়ন হয়েছে৷ একটি চক্রের ইন্ধনে প্রশাসন প্রভাবিত হয়ে এখানে পক্ষপাতমূলক আচরন করেছে৷ তারা আমার সেন্টারে গিয়ে ভোটার ও নৌকার সমর্থকদের বেধড়ক পিটিয়েছে৷ তারা নৌকা প্রতিকের সমর্থকদের দাড়াতেই দেয়নি৷ এমনকি শিতের সকালে আমি চাঁদর দিয়ে মুখ ঢেকে ছিলাম অবস্থা বেগতিক দেখে আমি দ্রত মুখ খুলে ফেলি না হলে হয়ত তারা আমাকেও আঘাত করত৷ বর্তমান পাবনার প্রশাসন জনগনের আশা আকাংখাকে বাধাগ্রস্থ করেছে৷ তাই এই ভোটের সকল ফলাফল বাতিল করে নতুন নির্বাচনের দাবী জানায়৷
জেলা আওয়ামীলীগের সিনিয়র সহ সভাপতি আক্ষেপ করে বলেন, প্রশাসন নৌকার বিরুদ্ধে কেন অবস্থান নিলেন তা আমার বোধগম্য নয়৷ পাবনা সদরে এত উন্নয়ন হয়েছে যে জনগণ এমপি আওয়ামীলীগের বানিয়েছে, উপজেলা চেয়ারম্যান সেটাও আওয়ামীলীগের৷ জনগণ ভোট না দিলে তো তারা জনপ্রতিনিধি হতে পারতেন না৷ সেদিন ইছামতি স্কুলে দায়িত্বরত এক মহিলা ম্যাজিষ্ট্রেট আমার সাথে খুব খারাপ আচরন করেন৷ আমি নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সভাপতি পরিচয় দেওয়ার পরেও আমার সাথে সৌজন্যমুলক আচরন করেননি৷ পাবনার প্রশাসন হঠাত করে কি কারনে আওয়ামী বিরোধী হয়ে গেল তা আমার বোধগম্য নয়৷
এদিকে নৌকা প্রতিকের দলীয় মেয়র প্রার্থী টিপু অভিযোগ করে বলেন, যে ব্যাক্তিকে প্রশাসন জয়ী করেছে তিনি পাবনার একজন শিল্পপতির দালাল৷ আর এই শিল্পপতি নিজের ক্ষমতা ও অবৈধ সুবিধা নিতে প্রশাসনসহ এক শ্রেনীর নেতা গোছের দালালদের টাকার বিনিময়ে নিজের পৰে রাখেন৷ এই শিল্পপতি তার শ্রমিকদের ন্যায্য পারিশ্রমিক দেন না৷ শ্রমিকরা আন্দোলন করতে গেলে ওই শিল্পপতির সন্ত্রাসীবাহিনী দিয়ে হুমকি দিয়ে থাকেন অথবা চাকুরিচু্যত করেন৷ ইতিপুর্বে ওই প্রতিষ্ঠানের ২জনকে হত্যা করা হয়েছে৷ এ জন্য জীবনের ভয়ে অনেকে কোন টু শব্দ পর্যনত্ম করে না৷ তিনি পাবনার শ্রমিকদের ও সরকারী ট্রাঙ্রে শত শত কোটি টাকা মেরে সন্ত্রাসী পালন করে থাকেন তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তার জন্য৷ উক্ত প্রতিষ্ঠানের সকল হিসাব নিকাশ সরকারী কর্মকর্তারা অডিট করলে কর ফাঁকির সব তথ্য বেরিয়ে আসবে৷ পাবনা পৌরসভার মধ্যে তার শিল্প প্রতিষ্ঠান হওয়ায় ট্রাঙ্ ফাঁকি দিতে ওই শিল্পপতি বার বার প্রশাসনকে ম্যানেজ করে মিন্টুকে মেয়র বানিয়ে থাকেন৷ একজন অরাজনৈতিক জনবিছিন্ন ব্যাক্তি কিভাবে বার বার মেয়র নির্বাচিত হয় তা জনগন বুঝে গেছে৷ তাই এবার আর প্রশাসনকে ছাড় দেওয়া হবে না৷ তারা টাকা খেয়ে বার বার একই ব্যাক্তিকে নির্বাচিত করবে তা মেনে নেওয়া হবে না৷ তারা মুখে প্রধানমন্ত্রীর গুন কির্তন গাইবেন৷ আর টাকার বিনিময়ে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত নৌকা প্রতিকের প্রার্থীকে পরাজিত করবেন এটা হতে দেওয়া যায়না৷ প্রয়োজন হলে প্রশাসনের বিরুদ্ধে আমরা ব্যাপক আন্দোলন গড়ে তুলবো৷ মিন্টু বিএনপি থেকে বহিস্কৃত৷ তা ছাড়া তার বাড়ি ঈশ্বরদীর আওতাপাড়ায় এমনকি জনবিচ্ছিন্ন একজন নেতা৷ অথচ সে বার বার মেয়র নির্বাচিত হয়৷ শুধুমাত্র শিল্পপতির দালালির কারনে ওই শিল্পপতি তাকে মেয়র বানিয়ে থাকেন৷ এবারেও প্রশাসনকে কোটি কোটি টাকা ঘুষ দিয়ে মিন্টুকে মেয়র বানিয়েছেন ওই শিল্পপতি ৷ যে ব্যক্তি মেয়র হয়েছে সেই মিন্টু ১০টি কেন্দ্রেও পোলিং এজেন্ট দিতে পারে নাই৷ সে মেয়র হয় কিভাবে৷ তাছাড়া গত ৭বছর পুর্বে বিএনপি থেকে সে বহিস্কৃত হয়৷ টিপু ওই শিল্পপতির বিরুদ্ধে পাবনা পৌরসভার চেয়ারম্যান শেখ শহিদুল্লাহ বাচ্চু হত্যার সাথে জড়িত দাবি করেন৷ প্রশাসন সঠিকভাবে ও নিরপেক্ষ তদন্ত করলে এর সত্যতা পাওয়া যাবে৷
অন্যান্য বক্তারা প্রশাসনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন, প্রশাসন একটি শীর্ষ স্থানীয় ব্যবসায়ীর কাছ থেকে টাকা খেয়ে নৌকা প্রতিককে পরাজিত করেছেন৷ তারা বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে৷ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিককে পরাজিত করেছে৷ তারা বর্তমান সরকারের অধিনে চাকুরী করে সেই সরকারের সাথে শিল্পপতির কাছ থেকে টাকা খেয়ে বেইমানি করেছে৷ আমরা প্রশাসনসহ ওই শিল্পপতির বিরুদ্ধে আগামীতে ধারাবাহিকভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলবো৷ তারা আরো বলেন, ওই শিল্পপতির টেলিভিশন চ্যানেলে ডিসির মেয়ে সংবাদ পাঠিকা৷ পরে জেলা আওয়ামীলীগের নেতৃত্বে পাবনা বাইপাশ টার্মিনাল এলাকা অবরোধ করেন৷ বিকাল সাড়ে ৪টায় এ অবরোধ তুলে নেন৷ পরবর্তি কর্মসুচী দলীয় ফোরামে আলোচনার মাধ্যমে ঘোষনা করবেন বলে জানান৷ এ সময় সড়কের উভয় পাশে যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়৷ বক্তারা ৩০ তারিখের পাবনা পৌরসভার নির্বাচনের ফলাফল বাতিল করে পুনঃরায় নির্বাচনের দাবী জানান৷