শুক্রবার ● ২২ ফেব্রুয়ারী ২০১৯
প্রথম পাতা » চট্টগ্রাম বিভাগ » পাঠ্যবইয়ে কোমলমতি শিশুদেরকে শেখানো হচ্ছে অমুসলিমরা মিথ্যাবাদী, লোভী, পশুর মত অধম
পাঠ্যবইয়ে কোমলমতি শিশুদেরকে শেখানো হচ্ছে অমুসলিমরা মিথ্যাবাদী, লোভী, পশুর মত অধম
সিএইচটি মিডিয়া ডেস্ক :: সরকারি পাঠ্যবইয়ে অমুসলিমদেরকে যেভাবে তুলে ধরা হয়েছে, তা নিতান্তই আপত্তিকর এবং বিব্রতকরও বটে। তাদেরকে মিথ্যাবাদী,সম্পদ আত্মসাৎকারী এমনকি ‘পশুর চেয়ে অধম’ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে।
পঞ্চম শ্রেণির ‘ইসলাম ধর্ম ও নৈতিকতা শিক্ষা’ বইয়ের ১৬ ও ১৭ নম্বর পৃষ্ঠায় এভাবেই অমুসলিমদেরকে পরিচয় দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি জানতে পেরে স্বয়ং শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেছেন, এই বিষয়টি মোটেও ভালো হয়নি। এগুলো পাল্টাতে হবে।
শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল মনে করেন, অমুসলিমদের এভাবে উপস্থাপনই ইসলামবিরোধী। এটি এক ধরনের চক্রান্ত। আর যারা এই কাজ করেছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন তারা।
চলতি বছর যে পাঠ্যবই বিতরণ করা হয়েছে তাতে এই বর্ণনা উল্লেখ আছে। জাতীয় পাঠ্যক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড এনসিটিবি এই বই চূড়ান্ত করেছে। বইটি লেখা ও সম্পাদনার দায়িত্বে ছিলেন মুহাম্মদ তমীজুদ্দিন, মুহাম্মদ কুরবার আলী, মোহাম্মদ হেলাল উদ্দীন ও মেহেরুন্নেসা।
এই বিষয়ে এনসিটিবির সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে এটির চেয়ারম্যান নারায়ন চন্দ্র সাহা বলেন, ‘আমি এখন বৈঠকে আছি। এ বিষয়ে এখন কিছু বলতে পারব না।’
আখেরাতে বিশ্বাসে নৈতিক উপকার প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে এতসব কথা বলা হয়েছে অমুসলিমদের বিষয়ে। সেখানে বিভিন্ন বিষয়ে মুসলমানরা কী বলেন, আর অসুমলমানরা কী বলেন, সে বিষয়ে বর্ণনা দেওয়া হয়েছে।
‘একজন অমুসলিমের চরিত্র’ হিসেবে পাঠ্যবইয়ে ইসলাম কী বলে এবং অমুসলিম কী বলে এভাবে কথা এগিয়েছে বইয়ে।
এতে বলা হয়: ইসলাম বলে: ‘ইসলাম বলে আল্লাহর পথে গরিবদের জাকাত দাও।’
জবাবে সে (অমুসলিম) বলে: জাকাত দিতে গেলে আমার সম্পত্তি করে যাবে। আমার অর্থের ওপর আমি সুদ নেব।
ইসলাম বলে: সবসময় সত্য কথা বলো। আর মিথ্যা থেকে বিরত থাকো।
উত্তরে সে (অমুসলিম) বলে: এমন সত্য গ্রহণ করে আমি কী করব? যাতে আমার কেবল ক্ষতিই হবে, লাভ হবে না।
আর এমন মিথ্যা থেকে আমি বিরত থাকব কেন? যা আমার জন্য লাভজনক হবে। যাতে কোনো দুর্নামের ভয় পর্যন্ত নেই।
এক জনশূন্য রাস্তা অতিক্রম করতে করতে সে (একজন ব্যক্তি) দেখলো একটি মূল্যবান বস্তু। এ ক্ষেত্রে ইসলাম এবং অমুসলিমের অবস্থান কী হবে সেখানেও আছে আপত্তিকর উপস্থাপনা।
এতে বলা হয়, ‘ইসলাম বলে এ তোমার সম্পদ নয়। কিছুতেই তুমি এই জিনিস গ্রহণ করতে পার না।’ সে (অমুসলিম) উত্তর দেয়, ‘আপনাআপনি যে জিনিস আসে তা কেন ছেড়ে দেব? এখানে তো এমন কেউ নেই যে দেখে পুলিশকে খবর দেবে বা আদালতে সাক্ষ্য দেবে। এরপর কেন আমি কুড়িয়ে পাওয়া অর্থ থেকে লাভবান হবো না।’
শেষে বলা হয়েছে, ‘সোজা কথায় জীবনের পথে প্রত্যেক পদক্ষেপে ইসলাম তাকে এক বিশেষ পথে চলার নির্দেশ দেবে। আর সে তার সম্পূর্ণ বিপরীত পথ অনুসরণ করে চলবে। কেননা ইসলামের প্রতিটি জিনিসের মূল্য নির্ধারিত হয় আখিরাতের ফলাফলের উপর। কিন্তু সে (অমুসলিম) ব্যক্তি প্রত্যেক ব্যাপারে চিন্তা করে ইহকালের ফলাফলের ওপর।’
অধ্যায়ের শেষে বলা হয়েছে, ‘কেন আখিরাতের ওপর ঈমান ব্যতীত মানুষ মুসলমান হতে পারে না তা সুষ্পষ্টভাবে বোঝা গেল। মুসলমান হওয়া তো দূরের কথা প্রকৃতপক্ষে আখিরাতকে অস্বীকার করে মানুষ পশুর চেয়েও নিম্নস্তরে চলে যায়।’
ঘৃণা লাগছে হাসান আজিজুল হকের
পুরো বিষয়টি জানতে পেরে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক। ঢাকাটাইমসকে তিনি বলেন, ‘আমি প্রথম এই বিষয়গুলো শুনলাম আপনার কাছ থেকে। যদি ঠিক হয় তাহলে আমি প্রতিবাদ করব। আসল মানুষ তৈরি করতে হলে কোন সম্প্রদায় বা ধর্মান্ধ হলে সেটা মনুষ্যবিরোধী কাজ।’
‘এসব লেখা দেখে আমার ভেতর ভেতর অসম্ভব ঘৃণা জন্মায়। এতে শিক্ষা ব্যবস্থার উপর আস্থা চলে গেছে। অবিলম্বে সরকারের নীতি নির্ধারণীদের এখানে নজর দেওয়া উচিত। না হলে জাতি ধ্বংস হয়ে যাবে। মানুষকে অমানুষ বানিয়ে দেবে, সঙ্গে মানুষকে ধর্মান্ধ বানিয়ে দেবে। আর শেষ পর্যন্ত একটি দেশে নানান সম্প্রদায়ের মানুষ আর এক সঙ্গে বাঁচতে পারবে না। এই রকম জুলুমবাজ প্রচার বইয়ের মধ্যে রয়েছে আমি কল্পনা করতে পারি না।’
মন্ত্রীরা যা বলছেন
এ বিষয়ে জানতে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেনের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তিনি ফোন না ধরায় তার বক্তব্য জানা যায়নি।
নতুন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনিকে বইয়ের এই অধ্যায়ের ছবি তুলে পাঠানো হলে তিনি এগুলো মোটেও সমর্থন করেন না বলে জানান। ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘এগুলো ভালো কাজ না। এগুলো পাল্টাতে হবে।’
শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, ‘এই কথাগুলো ইসলাম পরিপন্থী। ইসলাম ধর্মের কোথাও অমুসলিমদের সম্পর্কে এ রকম কথা বলা নাই। ইসলাম সকল ধর্মের মানুষকে মর্যাদা দিয়েছে।’
সূত্র : ঢাকা টাইমস