বুধবার ● ২৭ ফেব্রুয়ারী ২০১৯
প্রথম পাতা » গাইবান্ধা » নাব্যতা সংকটে হুমকির মুখে চরাঞ্চলের জীব বৈচিত্র
নাব্যতা সংকটে হুমকির মুখে চরাঞ্চলের জীব বৈচিত্র
গাইবান্ধা প্রতিনিধি :: ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা ও যমুনা নদী বেষ্টিত গাইবান্ধা জেলা। নদী গুলোর তলানীতেও আর পানির দেখা মিলছে না। নদীর তলদেশ বালুতে ভরাট থাকায় সামান্য পানিতেই বন্যার দেখা মেলে। ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা ও যমুনা নদী এখন পানির অভাবে শুকিয়ে মরুভূমিতে পরিণত হয়েছে। ভারতের এক তরফা পানি নিয়ন্ত্রণের কারণে নদ-নদী গুলো এখন মৃত প্রায়। চরাঞ্চলের অববাহিকায় জীব বৈচিত্র হুমকির মুখে। নদী পাড়ের জেলে আর মাঝিদের নেই আর আগের মত কর্মব্যস্ততা। থমকে গেছে ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা ও যমুনার পাড়ের হাজারো পরিবারের উপার্জন। নদী গুলোর নাব্যতা হারিয়ে ধুঁ ধুঁ বালুচরে পরিণত হয়েছে। প্রভাব পড়ছে কৃষি, মাছ, পরিবেশ ও জীববৈচিত্রের ওপর। পানি শূন্য নদ-নদীতে মাছ ধরতে না পেরে জেলেরা পড়েছেন নিদারুণ কষ্টে। নদ-নদী গুলোর এ বৈরী আচরণে অনেক জেলে পরিবার তাদের বাপ-দাদার পেশা ছেড়ে জীবন-জীবিকার তাগিদে চলে যাচ্ছেন অন্য পেশায়। আর প্রকৃতি হারাচ্ছে তার আপন সৌন্দর্য। উপার্জনের পথ বন্ধ হয়ে পড়ায় নদী গুলোতে দিনভর মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করা জেলেরা আজ কর্মহীন হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন।
নদ-নদী গুলোতে পানি না থাকায় বর্তমানে হেঁটেই নদী গুলো পারি দেওয়া যায়, তাই খেয়া ঘাটের মাঝিদের আর নৌকা বাইতে হয় না। এ কারণে বেকার ও কর্মহীন হয়ে পড়েছেন তারা। বালু চরে বেঁধে রাখা নৌকা কেউ পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় গেলেও পানির অভাবে শুকিয়ে মরে যাচ্ছে গাছপালা ও বিভিন্ন প্রজাতির পাখিও চলে গেছে অন্যত্র। নদীর বুকে জেগে ওঠা চরের বালুতে ভুট্টা, আলুসহ বিভিন্ন সবজি চাষাবাদ হলেও সেচের অভাবে তা মরে যাচ্ছে। অধিক পরিশ্রম করে প্রতিদিন সেচ দিয়ে কৃষক চাষাবাদ করছেন। তবে আশানুরূপ ফলন না পাওয়ায় প্রতিবছরই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন চাষিরা।
জেলে সুশিল চন্দ্র জানান, স্ত্রী ও তিন ছেলে-মেয়ে নিয়ে তার সংসার চলে নদীতে মাছ ধরে। দিনভর মাছ ধরে ৪/৫শ টাকা আয় হলেও এখন পানি কম থাকায় মাছ কম তাই আয়ও কম। বালাসীঘাটের নৌকার মাঝি রফিকুল ইসলাম জানান, বর্ষাকালে খেয়া পাড়ে ও জেলেদের নৌকা ভাড়া দিয়ে দৈনিক ৫/৬ শত টাকা আয় হতো। কিন্তু এখন পানি শুন্যতায় নৌকাও চলে না। চরাঞ্চলের কৃষক মজিবর রহমান বলেন, বর্ষাকালে প্রচুর পানিতে সৃষ্ট বন্যায় ফসলহানীসহ ঘরবাড়ি হারা হয় এ অঞ্চলের মানুষ। আবার শুষ্ক মৌসুমে ফসল রক্ষায় পানির প্রয়োজন হলেও নদীতে পানি নাই ফলে শুষ্ক মৌসুমেও পানির অভাবে ফসল নষ্ট হচ্ছে।
জীব বৈচিত্র টিকিয়ে রাখতে নদ-নদী গুলো শাসন করে জনগণের কল্যাণে সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে। নচেৎ নদী পাড়ের মানুষ দেশের উন্নয়নের বোঝা হয়েই থাকবে। পানি প্রবাহ সচল ও নদী শাসন হলে নদী তীরের জমিতে ফসলের বিপ্লব ঘটবে ও জীববৈচিত্র রক্ষা পাবে বলে মনে করছেন সচেতন মহল।