বুধবার ● ২৭ ফেব্রুয়ারী ২০১৯
প্রথম পাতা » কৃষি » চলনবিলের কৃষকরা ঝুঁকছে নতুন জাতের ধান চাষে
চলনবিলের কৃষকরা ঝুঁকছে নতুন জাতের ধান চাষে
চাটমোহর প্রতিনিধি :: শস্য ভান্ডার খ্যাত ঐতিহ্যবাহী চলনবিলের কৃষকরা অধিক ফলনের আশায় ইরি-বোরো ধানের প্রচলিত জাত ছেড়ে উন্নত নতুন জাতের ধান চাষের দিকে ঝুঁকেছে। গত বছর স্বল্প পরিসরে নতুন জাতের ধান ব্রি-৬৩, ৮১, ৮৯ ও ৭৪ চাষ শুরু হয়। আশানুরুপ বেশি ফলন পাওয়ায় এ বছরেও উৎসাহিত হয়ে চাষাবাদ শুরু করেছে কৃষকরা।
চলনবিলের চাষীরা দীর্ঘকাল ধরে প্রচলিত ইরি-বোরো ধানের আবাদ করে আসছেন। চলনবিলের অপেক্ষাকৃত উঁচু জমিতেও ধান চাষ হচ্ছে। এ বছর মৌসুমের শুরু থেকেই বেশিরভাগ কৃষক নতুন জাতের উদ্ভাবিত ধানের বীজ সংগ্রহ করেছেন। বিশেষ করে জিরা শাইলের বিপরিতে ব্রি ধান-৮১ জাত। ব্রি-২৮ ও ২৯ এর বিপরিতে ৫৮, ৮১ ও ৮৪ জাত এবং স্বর্নার বিপরিতে ব্রিধান-৮২ চাষ করছেন। তবে ইরি-বোরো ধানের চেয়ে নতুন জাতের ধান বিঘা প্রতি ২/৩ মন বেশি উৎপাদন হয় এবং এক সপ্তাহ আগেই কাটা যায়। চাল চিকন হওয়ায় বাজারে নতুন জাতের ধানের চাহিদা ও দাম বেশি পরিলক্ষিত হচ্ছে। এই ধানে পোকা মাকড়ের আক্রমন কম থাকায় বালাই নাশক অপেক্ষাকৃত কম ব্যবহার করতে হয়। তাছাড়া প্রাকৃতিক দুর্যোগ সহনশীল। ফলে পাবনার চাটমোহর উপজেলাসহ চলনবিলের কৃষকদের মাঝে আশা জাগিয়েছে নতুন জাতের ধান।
জেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, এ বছর ইরি-বোরো মৌসুমে উপজেলা ভিত্তিক লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে গুরুদাসপুরে ৪ হাজার ৮২ হেক্টর, নাটোর সদরে ২ হাজার ৭০৮ হেক্টর, নলডাঙ্গায় ৭ হাজার ৮৬০ হেক্টর, সিংড়ায় ৩৪ হাজার ৫৬৩ হেক্টর, বড়াইগ্রামে ৪ হাজার ৯৯৫ হেক্টর, লালপুরে ১ হাজার ১০১ হেক্টর এবং বাগাতিপাড়ায় ৬৮৪ হেক্টর।
ইতিমধ্যেই বীজতলা থেকে চারা তুলে জমিতে রোপনে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন চলনবিলের কৃষকরা।
চাটমোহর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান বলেন, গত বছর উপজেলার ৩০ জন কৃষক নতুন জাতের ধান চাষ করেছিলেন। এতে তাঁরা বেশ লাভবান হয়েছিলেন। নতুন জাতের ধান চাষীদের মধ্যে সাইকোলা মন্ডপাড়া গ্রামের ভিম মন্ড, সেনগ্রামের জহুরুল ইসলাম বলেন, পৈত্রিক সূত্রে তারা প্রচলিত ইরি-বোরো ধানের আবাদ করে অভ্যস্ত।
উপজেলা কৃষি বিভাগের পরামর্শে পরীক্ষামূলকভাবে ২-৩ বিঘা করে নতুন জাতের ধানের আবাদ করে লাভবান হয়েছিলেন। এ বছর বেশি জমিতে নতুন জাতের ধানের চারা রোপন করেছেন। একই রকম তথ্য জানান চলনবিলের কৃষক নজরুল ইসলাম, সাইফুল ইসলাম, মোহাম্মদ আলীসহ অনেকে।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারন উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. হাসান রশীদ হুসাইনী বলেন, ইতিমধ্যেই নতুন জাতের অধিক ফলনশীল ও রোগ বালাই সহনশীল ধানের চাষ জেলা তথা চলনবিল জুড়ে আলোড়ন ফেলেছে। এ বছর বেশি আবাদ হলে এই জাতের বীজ উৎপাদনও বাড়বে। এতে কৃষক ভালো এবং গুনগত মানের বীজ সহায়তা পাবে। আগামীতে বীজের জন্য অপেক্ষা বা ধর্না দিতে হবেনা। ১৫ ডিসেম্বর থেকে আগামী ১৫ মার্চ পর্যন্ত রোপনের কার্যক্রম চলবে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবারে বোরো ফসলের বাম্পার ফলন হবে বলে আশা করছেন কৃষি অধিদপ্তর। সেই লক্ষ্যে মাঠ পর্যায়ে কৃষকদেরকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও উৎসাহ দেয়া হচ্ছে।