রবিবার ● ৩ জানুয়ারী ২০১৬
প্রথম পাতা » কৃষি » রাঙামাটিতে শান্তিপূণৃভাবে চলছে পিসিজেএসএস এর ডাকা সকাল-সন্ধ্যা সড়ক ও জলপথ অবরোধ কর্মসূচি
রাঙামাটিতে শান্তিপূণৃভাবে চলছে পিসিজেএসএস এর ডাকা সকাল-সন্ধ্যা সড়ক ও জলপথ অবরোধ কর্মসূচি
ষ্টাফ রিপোর্টার :: রবিবার ৩ জানুয়ারী ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগের মেয়র প্রার্থীর কর্মী ও সমর্থকদের কেন্দ্র দখল, নজিরবিহীন জাল ভোট, ব্যাপক কারচুপি ও অনিয়ম, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ও কর্মীদের উপর হামলা, প্রশাসনিক ক্ষমতার অপব্যবহার, প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা কর্তৃপক্ষের পক্ষপাতিত্বের মধ্য দিয়ে রাঙামাটি পৌরসভা নির্বাচন ২০১৫ অনুষ্ঠিত করার অভিযোগে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি-পিসিজেএসএস(সন্তু গ্রুপ)এর পক্ষ থেকে গত ৩১ ডিসেম্বর তিন পার্বত্য জেলার ভিতর কেবল মাত্র রাঙামাটি জেলায় সকাল-সন্ধ্যা সড়ক ও জলপথ অবরোধের ডাক দেয়। তাদের কর্মসূচির শান্তিপূর্ণ ভাবে চলছে । পিসিজেএসএস এর অভিযোগ সরকার ও নির্বাচন কমিশন কর্তৃক সারাদেশে ২৩৪টি পৌরসভা নির্বাচন সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠানের প্রতিশ্রুতি দেয়া হলেও দেশের অন্যান্য পৌরসভার মতো রাঙামাটি পৌরসভার নির্বাচনেও তার লেশমাত্র লক্ষণ দেখা যায়নি। শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশ দূরের কথা, রাঙামাটি পৌরসভা নির্বাচনের কমপক্ষে ১১টি কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন দলীয় প্রার্থীর কর্মী ও সমর্থকদের হামলা ও সহিংসতা, কেন্দ্র দখল ও ভোট জালিয়াতির মহোৎসবে পরিণত হয়েছে। এসব কেন্দ্রে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের এজেন্টদের অনুপস্থিতিতে ভোট গণনার অভিনয় করে ইচ্ছামাফিক ফলাফল ঘোষণা করা হয়। রাঙামাটি পৌরসভার ভোটার নন এমন ব্যক্তিদেরকে নির্বাচনের পূর্বে রাঙামাটি পৌর এলাকা ত্যাগের জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং করা হলেও ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ তাদের নীল-নকশা অনুসারে রাঙামাটি জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে লোক এনে শহরের বিভিন্ন হোটেল ও বিশ্রামাগারে জড়ো করে রাখে। প্রশাসনের নাকের ডগায় রাঙামাটি শহরে সেসব লোকদের জড়ো করা হলেও প্রশাসনের তরফ থেকে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
ভোট কেন্দ্র দখল ও জাল ভোট প্রদানের মাধ্যমে ক্ষমতাসীন দল কর্তৃক তাদের দলীয় প্রার্থীকে জয়যুক্ত করার পূর্ব-পরিকল্পনার যে গুজব ছড়িয়ে পড়েছিল তা বাস্তবরূপ লাভের মধ্য দিয়ে রাঙামাটি পৌরসভার নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। দুপুর থেকে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী ডাঃ গঙ্গা মানিক চাকমাসহ প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর এজেন্টদের বের করে দিয়ে কেন্দ্র দখল করে নির্বাচনে দায়িত্বরত কর্মকর্তা ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতিতে ক্ষমতাসীন দলীয় প্রার্থীর কর্মী ও সমর্থকদের ভোট জালিয়াতির বিষয়ে জেলা প্রশাসক, জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা নির্বাচন কমিশনকে দফায় দফায় লিখিত ও মৌখিকভাবে জানানো হলেও যথাযথ প্রতিকার পাওয়া যায়নি। উক্ত পরিকল্পনা অনুসারে প্রশাসনের ছত্রছায়ায় কেন্দ্র দখল করে নজিরবিহীন জাল ভোট প্রদান করে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীকে জয়যুক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। তাদের অভিযোগে বলা হয়েছে, জনসংহতি সমিতিসহ পৌরবাসীর আশঙ্কা সত্য প্রমাণ হয়ে ক্ষমতাসীন দলের নীল নকশা অনুযায়ী রাঙামাটি পৌরসভা নির্বাচন প্রহসনে পরিণত হয়েছে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি রাঙামাটি পৌরসভার এই প্রহসনমূলক নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করেন। রাঙামাটি পৌরসভা নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপি, চরম অনিয়ম ও প্রশাসনের পক্ষপাতিত্বমূলক ভূমিকার প্রতিবাদে এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের দাবিতে জুম্ম জনগণের চলমান অসহযোগ আন্দোলনের অংশ হিসেবে রাঙামাটি জেলায় রবিবার সকাল-সন্ধ্যা সড়ক ও জলপথ অবরোধ কর্মসূচির পালন করছে।
রাঙামাটি শহর ঘুরে মানিকছড়ি,ভেদ ভেদী, কল্যাণপুর,দেবাশীষ নগর,রাঙামাটি ষ্টেডিয়াম এলাকা,কে কে রায় সড়ক,রাজবাড়ী এলাকা, নিউ কোর্ট বিল্ডীং ও বনরুপা বাজার এলাকায় পিসিজেএসএস এর নেতা ও কর্মীরা পিকেটিং করতে দেখা গেছে।
এবিষয়ে রাঙামাটি জেলা পুলিশ সুপার সাঈদ তারিকুল হাসান জানান গত ৩০ ডিসেম্বর রাঙামাটি জেলায় শান্তিপূর্ণ ভাবে ২৮টি কেন্দ্রে রাঙামাটি পৌরসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে । কিন্তু রাঙামাটি পৌরসভা নির্বাচনে ভোটের ফলাফল পিসিজেএসএস প্রার্থীর পক্ষে না যাওয়াতে তাদের অভিযোগ সরকার ও নির্বাচন কমিশন কর্তৃক সারাদেশে ২৩৪টি পৌরসভা নির্বাচন সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠানের প্রতিশ্রুতি দেয়া হলেও দেশের অন্যান্য পৌরসভার মতো রাঙামাটি পৌরসভার নির্বাচনেও তার লেশমাত্র লক্ষণ দেখা যায়নি।
পিসিজেএসএস একটি আঞ্চলিক রাজনৈতিক সংগঠন, রাজনীতি দল গুলি ভিতর রাজনৈতিক কর্মীসূচি থাকতে পারে। তিনি আরো জানান রাঙামাটি জেলার ১০টি থানায় পিসিজেএসএস তাদের সকাল-সন্ধ্যা সড়ক ও জলপথ অবরোধ কর্মসূচির পালন করছে। এখনো কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। কেউ যদি হামলা বা সহিংসতা ঘটানোর চেষ্টা করেন তাহলে আমাদের পুলিশ প্রশাসন আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করবেন।
রবিবার সকাল-সন্ধ্যা সড়ক ও জলপথ অবরোধ কর্মসূচি চলাকালিন রাঙামাটি শহরে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ ছিল। অফিস - আদালতে কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের উপস্থিতি কম ছিলো। ব্যাংক,বীমা খোলা থাকলেও জনসাধারনের লেন-দেন কম ছিল। সকাল-সন্ধ্যা সড়ক ও জলপথ অবরোধ কর্মসূচির অংশ হিসাবে শহরের দোকানপাট ও প্রধান প্রধান কাঁচা বাজার গুলি বন্ধ ছিল।
বেলা ৩টা পর্যন্ত রাঙামাটি শহরে ও সিএইচটি মিডিয়া টুয়েন্টিফোর ডটকম উপজেলা প্রতিনিধিদের পাঠানো প্রতিবেদনে এখনো কোন ধরনের দুর্ঘটনার ও সহিংসতা সংবাদ পাওয়া যায়নি।
পিসিজেএসএস এর ডাকে রাঙামাটিতে সকাল-সন্ধ্যা সড়ক ও জলপথ অবরোধ কর্মসূচি চলাকালিন রোগীবাহি এ্যাম্বুলেন্স, জরুরী বিদ্যুৎ সরবরাহ ও পৌরসভার আবর্জনা গাড়ী, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও সংবাদ কর্মীদের যান অবরোধের আওতামুক্ত ছিল। শহরে পুলিশ,বিজিবি ও সেনাবাহিনীর টহল জোরধার ছিল।