রবিবার ● ৩ মার্চ ২০১৯
প্রথম পাতা » কৃষি » ব্রহ্মপুত্রের চর জুড়ে ফসলের বিপ্লব
ব্রহ্মপুত্রের চর জুড়ে ফসলের বিপ্লব
গাইবান্ধা প্রতিনিধি :: গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার ব্রহ্মপুত্রের চরের কৃষকরা রবি ফসলের বিপ্লব ঘটিয়েছেন। ক্রমশ পাল্টে যাচ্ছে ব্রহ্মপুত্র নদীর চিত্র। নদী হারাচ্ছে তার বৈশিষ্ট্য। শুস্ক মৌসুমে ব্রহ্মপুত্রর বুকে জেগে উঠা চরের অস্তিত্ব স্বাভাবিক মনে হলেও তা এখন ভিন্নরূপ ধারণ করেছে। খরস্রোতা ব্রহ্মপুত্র এখন যেন মরুভূমি। ইতিমধ্যেই নদীতে জেগে উঠা অনেক চরের বিস্তৃতি বৃদ্ধির পাশাপাশি তা স্থায়ী চরে পরিণত হয়েছে। এক সময় ব্রহ্মপুত্র ছিল এ অঞ্চলের মানুষের দুঃখের কারণ। আর এখন সেই নদীর বালু চরে বিভিন্ন ফসল ফলিয়ে কৃষক তাদের ভাগ্য পরিবর্তন করছে।
সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, সাঘাটা উপজেলার ব্রহ্মপুত্র নদের বুকে জেগে ওঠা চরে আমন ও বোরো ধানের আবাদ না হলেও রবি ফসলের চাষ করে বাম্পার ফলন পাচ্ছে কৃষক। গত কয়েক বছর ধরে বর্ষা মৌসুমে এই চর গুলোতে বন্যার পানি না ওঠায় চরবাসি সেখানে স্থায়ী বসতি গড়েছে। কিছুদিন আগেই ছিল। যখানে জনবসতিহীন দুর্গম চর এখন সেখানে বসেছে প্রাণের মেলা। এখন দেখা মেলে চোখ ধাঁধাঁনো বর্ণিল সবুজ ফসলের সরব উপস্থিতি। নাব্যতা সংকট প্রমত্তা ব্রহ্মপুত্র নদের বেহাল দশাই কৃষকের ভাগ্য উন্নয়নে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। এক সময়ের ধু-ঁধুঁ সাদা বালুচর গুলোতে পলিমাটির স্তর পড়ে এখন আবাদি জমিতে পরিণত হয়েছে। বৈদ্যুতিক সেচ ব্যবস্থা না থাকলেও স্যালো মেশিন বা অগভীর নলকুপের সাহায্যে জমিতে পানি সেচ দিয়ে অসম্ভবকে সম্ভব করেই বালুচরে ভুট্রা, গম, জব, চিনা, কাউন, কালোজিরা, কুমড়া, লাউ, টমেটো, মুলা, আলু, পালংশাক, লালশাক, বেগুন, পিয়াজ, মরিচ, শসা, শিম, করলা, গাজর, ধনিয়া বিভিন্ন শাকসবজি সহ বিভিন্ন অর্থকরী ফসলের বিপ্লব ঘটিয়েছে কৃষকরা।
গাড়ামারা চরের কৃষক রবিউল ইসলাম জানান, তিনি গত বছর এক একর জমি থেকে ১২০ মণ ভুট্টা ঘরে তুলেছেন। এবার তিনি ওই জমিতে আরো বাম্পার ফলনের আশা করছেন। কৃষক আব্দুর রাজ্জাক প্রায় ৩০ বছর আগে তাদের পূর্ব পুরুষদের ভেঙ্গে যাওয়া জমিতে নতুন উদ্যমে চাষ শুরু করেছেন। তিনি জানান, প্রথম দিকে চরের জমিতে শুধু কালাই, চিনা, কাউন, বাদাম, তিলের চাষ করলেও এখন রীতিমতো ভুট্টা, গম চাষ করেছি। আর এ থেকে অনেক অর্থ আয় করছেন এখন তাদের কোন অভাব নেই।
গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার এ চরগুলোর পূর্বে জামালপুর জেলার ইসলামপুর ও দক্ষিণে বগুড়া জেলার সারিয়াকান্দি উপজেলার সীমানা জুড়ে জেগে উঠেছে এসব চর। কিন্তু জেগে ওঠা এই সকল জমির সঠিক কোন পরিসংখ্যান কিংবা তথ্য স্থানীয় কৃষি দপ্তরগুলোতে নেই। এমনকি এসমস্ত জমির ভোগ দখলকারীরাও জানে না তাদের জমি গুলোর সঠিক পরিমাপ ও সীমানা কোথায়। পাতিলবাড়ী চরের কৃষক পূর্ব পুরুষদের স্মৃতি জড়ানো জমির আইলে বসে থাকা মনির হোসেন (৫৫) জানালেন, কৈশর বয়সে এই সব জমি ব্রহ্মপুত্রতে বিলিন হয়েছিল। বিলিন হওয়া জমি গুলো আবারো জেগে উঠে আবাদি জমিতে পরিণত হতে পারে তা তিনি কখনো ভাবেননি।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্ত রংপুর অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক শাহ আলম সম্প্রতি চর গুলো ঘুরে কৃষকদের এসব ক্ষেত দেখে বলেন, মুল ভুখন্ডের জমির চেয়ে এসব চরের জমির ফসলের ফলন অনেক বেশী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। চরের জমিতে কৃষকরা এমন ফসল ফলাবে কল্পনা করা যায় না। এখনও যে সব জমি পরিত্যক্ত রয়েছে সে গুলো চাষের আওতায় আনা হলে এসব চরে ভুট্টা ও গম চাষে অপার সম্ভাবনা রয়েছে।