শুক্রবার ● ২২ মার্চ ২০১৯
প্রথম পাতা » নওগাঁ » রাণীনগরে বিলে মাছ ধরা নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে দ্বন্দ্ব
রাণীনগরে বিলে মাছ ধরা নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে দ্বন্দ্ব
নওগাঁ প্রতিনিধি :: নওগাঁর রাণীনগরের মিরাট ইউনিয়নের সরকারি বিল মুনছুরের শাখা বিল চোরের খাস ক্যানেলে মাছ ধরা নিয়ে মৎস্যজীবী ও গ্রামের কতিপয় ব্যক্তিদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনায় ঘটনাস্থল থেকে সোহেল নামের এক যুবককে ভ্রাম্যমান আদালত আটক করে ১৫দিনের স্বশ্রম কারাদন্ড প্রদান করেছে।
এই দ্বন্দ্বের জের ধরে বৃহস্পতিবার বিকেলে হরিশপুর গ্রামে মৎস্যজীবীদের অন্যস্থানের মাছ ধরার জাল রোদে শুকানোর সময় পুড়ে দিয়েছে গ্রামের প্রতিপক্ষ কতিপয় ব্যক্তিরা। প্রতিপক্ষের বিভিন্ন হুমকি-ধামকীর কারণে ভয়ে মৎস্যজীবীরা কোথাও মাছ ধরার জন্য যেতে পারছেন না। এতে করে ওই গ্রামে মৎস্যজীবী ও গ্রামের কতিপয় ব্যক্তিদের মধ্যে যে কোন সময় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কা করছেন গ্রামবাসীরা।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, দীর্ঘদিন যাবত মিরাট ইউনয়িনের সরকারি বিল মুনছুরে নয়া হরিশপুর গ্রামের মৎস্যজীবীরা মাছ ধরে জীবিকা ধারন করে আসছে। এই বিলকে মাছ চাষের অভয়ারন্য হিসেবে ঘোষনা করেছে সরকার। এই বিল শুকিয়ে মাছ ধরার অধিকার কারো নেই। শুধুমাত্র মৎস্যজীবীরা এই বিল থেকে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতে পারবে। কিন্তু একই ইউনিয়নের হরিশপুর উজানপাড়া গ্রামের কতিপয় লোকজন জোর করে বৃহস্পতিবার দুপুরে বিলের পানি মেশিন দিয়ে শুকিয়ে মাছ ধরছিল। তখন মৎস্যজীবীরা বাধা দিতে গেলে উভয় পক্ষের মধ্য দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়। তারা মৎস্যজীবীদের মারপিট করে। এসময় মৎস্যজীবীদের ২জন আহত হয়। মৎস্যজীবীরা সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাটি প্রশাসনকে জানালে সহকারি কমিশনার (ভ’মি) টুকটুক তালুকদার সঙ্গীয় ফোর্সসহ ঘটনাস্থলে পৌছলে হরিশপুর গ্রামের ফয়াজ আলীর ছেলে জলিল (৪৫), আলেপ উদ্দিনের ছেলে নাইম (২২), বাবুর ছেলে জুয়েল (৩২) সহ কয়েকজন ব্যক্তি ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। এসময় সেখান থেকে উপজেলার কাশিমপুর গ্রামের সোহেল (২৫) কে আটক করে ১৫দিনের স্বশ্রম কারাদন্ড প্রদান করেন ভ্রাম্যমান আদালতের বিচারক ও সহকারি কমশিনার (ভ’মি) টুকটুক তালুকদার। এই সূত্র ধরে ওইদিন বিকেলে হরিশপুর গ্রামের মাঠে মৎস্যজীবী জলিলের মাছ ধরার জাল রোদে শুকাতে দিলে প্রতিপক্ষরা সেই জাল পুড়িয়ে দেয়। এতে করে মৎস্যজীবী জলিলের ত্রিশ হাজার টাকার জাল পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।
নয়া হরিশপুর মৎস্যজীবী গ্রামের মৃত-যতীন মন্ডলের ছেলে মৎস্যজীবী আব্দুল জলিল মন্ডল বলেন আমি ওইদিন নদী থেকে মাছ ধরে জাল রোদে শুকানোর জন্য মাঠে দিলে প্রতিপক্ষরা দ্বন্দ্বের জেরে আমার জাল আগুনে পুড়িয়ে দিয়েছে। আমি গরীব-অসহায় এক মৎস্যজীবী। আমি এখন কি দিয়ে মাছ ধরবো? কিভাবে আমার সংসার চালাবো? এছাড়াও প্রতিপক্ষরা আমাদেরকে মারপিটের হুমকি-ধামকী দিচ্ছে যার কারণে আমরা বিলে কিংবা নদীতে মাছ ধরতে যেতে পারছি না। আমাদের এখন কি হবে? আমি সরকারের কাছে জাল পুড়িয়ে দেওয়ার বিচার চাই।
একই গ্রামের মৎস্যজীবী আলতাফসহ অনেকেই বলেন, আমরা উন্মুক্ত বিল ও নদী থেকে মাছ ধরে জীবন-যাপন করে আসছি। কিন্তু অন্যগ্রামের কতিপয় ব্যক্তিরা দীর্ঘদিন যাবত আমাদের সঙ্গে বিলে মাছ ধরা নিয়ে দ্বন্দ্ব করে আসছে। আমরা অনেকবার প্রশাসনকে লিখিত ভাবে অভিযোগ দিলেও বিষয়টি আজও সমাধান না হওয়ায় প্রতিপক্ষরা একের পর এক আমাদের ক্ষতি করে আসছে। অন্যায় ভাবে দিনে-দুপুরে জাল পুড়িয়ে দেওয়ার দৃষ্টান্তর মূলক শাস্তি চাই এবং বিলে মাছ ধরার বিষয়ে স্থায়ী সমাধান চাই।
সহকারি কমিশনার (ভূমি) টুকটুক তালুকদার বলেন বিলের পানি শুকিয়ে মাছ ধরার অপরাধে একজনকে শাস্তি প্রদান করেছি। বিলের পানি শুকিয়ে মাছ ধরার অধিকার কারো নেই। বিলটি মাছের অভয়ারন্য হিসেবে ঘোষনা করা হয়েছে। এটি সরকারি সম্পদ। আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ওই বিলে বর্তমানে মাছ ধরার জন্য সবাইকে নিষেধ করেছি। অতিদ্রুত উভয়পক্ষকে নিয়ে বসে আমরা বিলে মাছ ধরার বিষয়টি সমাধান করবো।