শনিবার ● ২৩ মার্চ ২০১৯
প্রথম পাতা » প্রধান সংবাদ » ময়মনসিংহে পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়ে ২৫ কলেজ শিক্ষার্থী হাসপাতালে
ময়মনসিংহে পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়ে ২৫ কলেজ শিক্ষার্থী হাসপাতালে
ময়মনসিংহ প্রতিনিধি :: ময়মনসিংহ নগরীর ঐতিহ্যবাহী নাসিরাবাদ কলেজ হোস্টেলের ২৫ শিক্ষার্থী পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। ওই শিক্ষার্থীরা বাইরে থেকে পানি এনে পান করেন। এরপরই জ্বর, মাথা ও পেট ব্যাথাসহ বমি শুরু হলে তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
গতকাল শুক্রবার (২২ মার্চ) রাত ১১টার দিকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন তারা। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ওই কলেজের ২২ শিক্ষার্থী হাসপাতালের ১৫নং ওয়ার্ডে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এছাড়া আরও কয়েকজন চিকিৎসা নিয়ে চলে গেছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার রাতে দুই ঘণ্টা বিদ্যুৎ ছিল না। এ সময় ওই শিক্ষার্থীরা বাইরে থেকে পানি এনে পান করেন। এরপর থেকেই তাদের জ্বর, মাথা ও পেট ব্যাথাসহ বমি শুরু হয়।। এভাবে একে একে ৩০ জন ছাত্রের একই ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। পরে শুক্রবার রাত ১১টার দিকে তারা ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন।
নাসিরাবাদ কলেজের শিক্ষক রেজাউল করিম বলেন, রাতে বিদ্যুৎ ছিল না। হোস্টেলের ট্যাংকিতেও পানি ছিল না। কলেজ মসজিদের চাপকল থেকে পানি এনে পান করে শিক্ষার্থীরা। এরপরই সমস্যা দেখা দেয়। এখন ২৫ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের চিকিৎসক ডা. সাদিকুর রহমান বলেন, শিক্ষার্থীরা সবাই পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়েছেন বলে ধারনা করা হচ্ছে। তবে এ ব্যাপারে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পাশাপাশি আক্রান্তদের চিকিৎসা চলছে বলে আরো জানান তিনি।
এদিকে ময়মনসিংহে পানিবাহিত ডায়রিয়া রোগের প্রকোপ বাড়ছে। গত ২৫ ফেব্রুয়ারি থেকে এ রোগে আক্রান্ত হয়ে সহ¯্রাধিক শিশু, নারী ও পুরুষ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। রোগের কারণ অনুসন্ধানে সরেজমিনে কাজ করছে চারটি মেডিকেল টিম।
১১ মার্চ সিটি করপোরেশনের সরবরাহকৃত পানি পরীক্ষার জন্য জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরে লিখিত পত্র দেয় পৌরসভা কর্তৃপক্ষ। এরপর ময়মনসিংহ আঞ্চলিক পানি পরীক্ষাগারের পরীক্ষককরা কাজ শুরু করেন। এ সময় পরীক্ষায় ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের পানিতে মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর ‘ফিকাল কলিফর্ম’ নামক এক ধরনের ব্যকটেরিয়ার সন্ধান পাওয়া গেছে। তাদের ধারণা, ক্ষতিকর এই ব্যাকটেরিয়ার কারণেই পানিবাহিত এ রোগের সৃষ্টি হতে পারে।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল ময়মনসিংহের অঞ্চলিক পরীক্ষাগারের সিনিয়র ক্যামিস্ট মোঃ আনিছুর রহমান খান জানান, সিটি করপোরেশনের চিঠি পেয়ে ওইদিনই নগরীর পুলিশ লাইন, গলগন্ডা, খাগডহর, কাচিঝুলি, কাশর, ঢোলাদিয়াসহ ১০টি স্পট থেকে নমুনা পানি সংগ্রহ করেন তারা। ওই পানি পরীক্ষার পর ঢোলাদিয়া ও কাচিঝুলি এলাকার পানিতে মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর ‘ফিকাল কলিফর্ম’ নামক এক ধরনের ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি পাওয়া গেছে।
পরীক্ষাগারের জুনিয়র ক্যামিস্ট শফিকুল ইসলাম জানান, সাধারণত পানিতে এ ধরনের ব্যাকটেয়ার থাকার কথা নয়। তবে ধারণা করা হচ্ছে, পানি সরবরাহ লাইনের লিকেজ থেকে ক্ষতিকর এ ব্যাকটেরিয়া পানিতে মিশে গেছে। এ সংক্রান্ত রিপোর্ট ইতিমধ্যে সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে।
ময়মনসিংহ স্বাস্থ্য বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ও জেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. এ কে এম আবদুর রব বলেন, ‘শুনেছি পানিতে মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর জীবাণুর উপস্থিতি পাওয়া গেছে। আমি রিপোর্ট দেখি নাই। তাই কিছু বলতে পারছি না।’
ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা বলেছেন, কাচিঝুলি ও ঢোলাদিয়া এলাকার পানিতে এ জীবাণু পাওয়া গেছে। এ দু’টি এলাকার মানুষ বস্তিবাসী। তাদের টয়লেট ও খাবার পানির চাপকল বা সরবরাহ লাইন খুব কাছাকাছি। এ কারণেও পানি দূষিত হতে পারে।
ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, বিষয়টি নিয়ে পানি এবং স্বাস্থ্য শাখার চারটি টিম সরেজমিনে কাজ করছে। ইতিমধ্যে পানি পরীক্ষার রিপোর্ট হাতে পেয়েছি। যে দু’টি এলাকার পানিতে অল্প পরিমাণে ওই ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি পাওয়া গেছে ওইসব এলাকাবাসীকে সরবরাহকৃত পানি পান না করার জন্য পরামর্শ দেয়া হয়েছে বলে আরো জানান তিনি।