রবিবার ● ৭ এপ্রিল ২০১৯
প্রথম পাতা » ঢাকা » তামাকের ব্যাপারে আমরা আপোশহীন : এনবিআর চেয়ারম্যান
তামাকের ব্যাপারে আমরা আপোশহীন : এনবিআর চেয়ারম্যান
ঢাকা প্রতিনিধি :: বাংলাদেশে তামাকপণ্যের দাম সস্তা এবং তা ক্রমশ আরও সস্তা হচ্ছে। এছাড়া বিদ্যমান তামাক কর-কাঠামো অত্যন্ত জটিল। একাধিক মূল্যস্তর এবং বিভিন্ন দামে তামাকপণ্য ক্রয়ের সুযোগ থাকায় তামাকের ব্যবহার হ্রাসে কর ও মূল্যপদক্ষেপ সঠিকভাবে কাজ করছেনা। পাশাপাশি তামাক কোম্পানিগুলো উচ্চস্তরের সিগারেট নিম্নস্তরে ঘোষণা দিয়ে রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ার সুযোগ পাচ্ছে। বাংলাদেশে বর্তমানে তামাক ব্যবহারকারীদের মধ্যে ৫০ শতাংশেরও বেশি মানুষ ধোঁয়াবিহীন তামাক ব্যবহার করেন, অথচ মোট তামাক রাজস্বের মাত্র ০.২ শতাংশ আসে ধোঁয়াবিহীন তামাক থেকে। এমতাবস্থায় তরুণ, নারী এবং দরিদ্র জনগোষ্ঠিকে তামাকের ছোবল থেকে সুরক্ষা প্রদান করতে কার্যকর তামাক করের দাবিতে আজ রবিবার ৭ এপ্রিল জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাথে এক প্রাক-বাজেট আলোচনা সভায় অংশগ্রহণ করে অ্যান্টি টোব্যাকো মিডিয়া এলায়েন্স- আত্মা। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড চেয়ারম্যান মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়াসহ অন্যান্য কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে আলোচনা সভায় আত্মা’র প্রতিনিধি হিসেবে অংশ নিয়েছেন মনির হোসেন লিটন, জয়েন্ট চিফ নিউজ এডিটর, একাত্তর টেলিভিশন; কাওসার রহমান, সিটি এডিটর, দৈনিক জনকন্ঠ; মীর মাশরুর জামান রনি, সিনিয়র নিউজ এডিটর, চ্যানেল আই; মর্তুজা হায়দার লিটন, চিফ ক্রাইম করেসপন্ডেন্ট, বিডিনিউজ২৪.কম এবং কনভেনর, আত্মা; নাদিরা কিরণ, নিউজ এডিটর, এটিএন বাংলা ও কো-কনভেনর, আত্মা; দৌলত আক্তার মালা, স্পেশাল করেসপনডেন্ট, দি ফাইনানশিয়াল এক্সপ্রেস; এবং মিজান চৌধুরী, সিনিয়র রিপোর্টার, দৈনিক যুগান্তর ও কো-কনভেনর, আত্মা । আত্মা’র পক্ষ থেকে ২০১৯-২০ অর্থবছরের জন্য তামাক-কর বিষয়ক বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয় এবং প্রস্তাবনার একটি কপি মাননীয় চেয়ারম্যানের নিকট হস্তান্তর করা হয়। এসময় এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা রয়েছে ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার, সুতরাং তামাকের ব্যাপারে আমরা আপোশহীন।’ তামাকপণ্যে করারোপের জন্য প্রাক-বাজেট বৈঠকে ২০১৯-২০ বাজেট প্রস্তাব হিসেবে নিম্নোক্ত দাবিসমূহ তুলে ধরা হয়:
বাজেট প্রস্তাব:
১. সিগারেটের মূল্যস্তর সংখ্যা ৪টি থেকে কমিয়ে ২টিতে (নিম্ন এবং উচ্চ) নিয়ে আসা: ৩৫ টাকা এবং ৪৮ টাকা এই দুইটি মূল্যস্তরকে একত্রিত করে একটি মূল্যস্তর (নিম্নস্তর) এবং ৭৫ টাকা ও ১০৫ টাকা মূল্যস্তরকে একত্রিত করে আরেকটি মূল্যস্তরে (উচ্চস্তর) নিয়ে আসা; নিম্নস্তরে ১০ শলাকা সিগারটের খুচরা মূল্য ৫০ টাকা নির্ধারণ করে ৬০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা এবং উচ্চস্তরে ১০ শলাকা সিগারেটের খুচরা মূল্য ন্যূনতম ১০৫ টাকা নির্ধারণ করে ৬৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা; এবং সকল ক্ষেত্রে প্রতি ১০ শলাকা সিগারেটে ৫ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা।
২. বিড়ির ফিল্টার এবং নন-ফিল্টার মূল্য বিভাজন তুলে দেওয়া: বিড়ির মূল্য বিভাজন তুলে দিয়ে ফিল্টারবিহীন ২৫ শলাকা বিড়ির খুচরা মূল্য ৩৫ টাকা নির্ধারণ করে ৪৫% সম্পূরক শুল্ক ও ৬ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা; এবং ফিল্টারযুক্ত ২০ শলাকা বিড়ির খুচরা মূল্য ২৮ টাকা নির্ধারণ করে ৪৫% সম্পূরক শুল্ক এবং ৪.৮ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা।
৩. ধোঁয়াবিহীন তামাকপণ্যের (জর্দা ও গুল) ট্যারিফ ভ্যালু প্রথা বিলুপ্তকরণ: ট্যারিফ ভ্যালু প্রথা বিলুপ্ত করে সিগারেট ও বিড়ির ন্যায় ‘খুচরা মূল্যের’ ভিত্তিতে করারোপ করা; প্রতি ১০ গ্রাম জর্দার খুচরা মূল্য ৩৫ টাকা এবং প্রতি ১০ গ্রাম গুলের খুচরা মূল্য ২০ টাকা নির্ধারণ করে ৪৫% সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা; এবং প্রতি ১০ গ্রাম জর্দার উপর ৫ টাকা ও প্রতি ১০ গ্রাম গুলের উপর ৩ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা।
৪. সকল তামাকপণ্যের খুচরা মূল্যে ১৫ শতাংশ ভ্যাট বহাল রাখা।
উল্লিখিত প্রস্তাবসমূহ গ্রহণ করা হলে প্রায় ৩.২ মিলিয়ন প্রাপ্তবয়স্ক ধূমপায়ী (১.৩ মিলিয়ন সিগারেট ধূমপায়ী এবং ১.৯ মিলিয়ন বিড়ি ধূমপায়ী) ধূমপান ছেড়ে দিতে উৎসাহিত হবে। সিগারেটের ব্যবহার ১৪% থেকে হ্রাস পেয়ে প্রায় ১২.৫% এবং বিড়ির ব্যবহার ৫% থেকে হ্রাস পেয়ে ৩.৪% হবে । দীর্ঘমেয়াদে ১ মিলিয়ন বর্তমান ধূমপায়ীর অকাল মৃত্যু রোধ করা সম্ভব হবে এবং ৬ হাজার ৬৮০ কোটি থেকে ১১ হাজার ৯৮০ কোটি টাকার মধ্যে (জিডিপি’র ০.৪ শতাংশ পর্যন্ত) অতিরিক্ত রাজস্ব আয় অর্জিত হবে।