রবিবার ● ৭ এপ্রিল ২০১৯
প্রথম পাতা » প্রধান সংবাদ » স্ত্রীর মর্যাদা পেতে তরুণীর লড়াই
স্ত্রীর মর্যাদা পেতে তরুণীর লড়াই
বিশ্বনাথ প্রতিনিধি :: বিয়ের প্রলোভন দিয়ে ১০ বছর থেকে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন। তিনবার গর্ভপাত ঘটানো। বিয়ের জন্য চাপ প্রয়োগ করলে মারপিট। আর প্রেম ও শারীরিক সম্পর্কের কথা অস্বীকার করে অবশেষে মিথ্যা মামলা দিয়ে ঘরবাড়ি ছাড়ানো সহ নানা অভিযোগ উঠেছে বিশ্বনাথের দৌলতপুর ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য ও ধর্ষিতার আপন চাচাতো ভাই ইরন মিয়ার বিরুদ্ধে। ধর্ষিতা এ সকল বিষয় নিয়ে সামাজিকভাবে কোনো সমাধান না পেয়ে বিয়ের প্রলোভন দিয়ে নিয়মিত ধর্ষণ করার অভিযোগে আদালতে মামলা করেছেন। মামলাটি বর্তমানে সিলেটের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন রয়েছে।
এই মামলার আক্রোশে ধর্ষিতাকে মিথ্যা মামলা দিয়ে বাড়ি ছাড়া করেছেন ইউপি সদস্য ও তার পরিবারের লোকজন। এ বিষয়ে গতকাল সংবাদ সম্মেলেন করেছেন ভুক্তভোগী বিশ্বনাথ থানার নোয়াগাঁও পূর্বপাড়া গ্রামের ইদ্রিস আলীর মেয়ে।
তিনি সংবাদ সম্মেলনে জানান, বিশ্বনাথ থানার দৌলতপুর ইউনিয়নের নোয়াগাঁও পূর্বপাড়া গ্রামের ইদ্রিস আলীর বড় মেয়ে আমি। ২০০৯ সালে পড়া লেখা করতেন ৭ম শ্রেণিতে। তখন তার বাবা ছিলেন প্রবাসে।
আর আপন চাচাতো ভাই হিরণ মিয়া তাদের পরিবারের দেখাশুনা করতেন। সেই সুবাদে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে প্রেমের ফাঁদে ফেলে ২০০৯ সাল থেকে দৈহিক সম্পর্ক স্থাপন করে ইরন। একাধিকবার মিলনের ফলে অন্তঃসত্ত্বা হলে ২০১৪ সালে ডা. ইয়াসমিনের প্রাইভেট চেম্বারে, ২০১৫ সালে রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ও ২০১৭ সালে সুনামগঞ্জের একটি প্রাইভেট ক্লিনিকে ইরন মিয়া স্বামী পরিচয় দিয়ে তিনবার গর্ভপাত ঘটায়। পরবর্তীতে ২০১৭ সালের ১৩ই আগস্ট পুনরায় ফুসলিয়ে তার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক ঘটায়। ঘটনাটি জানাজানি হওয়ায় আত্মহত্যার চেষ্টা করেও ভাগ্যক্রমে বেঁচে ইরনের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানাতে থানা পুলিশের দ্বারস্থ হয়। পুলিশ উল্টো তাকে আটকের ভয় দেখিয়ে ফিরিয়ে দেয়।
এ নিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। পরে ১৮ সালে ১৯ সেপ্টেম্বর বিয়ের দাবিতে অনশন করে কোনো ফল পায়নি। পরবর্তীতে বিয়ের জন্য চাপ দেয়া হয় ইরন মিয়াকে। রাজি না হলে এলাকায় কয়েকবার সালিশ বৈঠকও হয়। তাতে কোনো সমাধান হয়নি। এ নিয়ে বাদী হয়ে বিশ্বনাথ থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা করেন। এই মামলায় পুলিশ তদন্ত করে আদালতে ইরনকে অভিযুক্ত করে বিয়ের প্রলোভন ও ধর্ষণের অভিযোগে চার্জশিট দাখিল করেন। এই মামলায় চলতি বছরের ৩রা এপ্রিল আদালত চার্জ গঠন করে বিচারকার্য শুরু করেন। এই মামলা দাখিলের পর থেকে ধর্ষিতা ও তার মা বোনের ওপর কয়েকবার আক্রমণ করে বাড়ি ছাড়া করে ইরন ও তার লোকজন।
এ নিয়ে বিশ্বনাথ থানায় ২০১৭ সালের ১৭ই নভেম্বর জিডি করেন। পরবর্তীতে এ সকল মামলা তুলে নেয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করে ইরন ও তার লোকজন। মামলা তুলে না নেয়ায় সে ও তার মা বোনের উপর হামলা করে। তাদের রক্ষা করতে ওই গ্রামের ফখরুল ও ফাহিম এগিয়ে এলে তাদেরকেও মারপিট করে রক্তাক্ত জখম করে। পরবর্তীতে ইরন মেম্বার তার ভাই চন্দনকে বাদী করে তাদের বিরুদ্ধে বিশ্বনাথ থানায় অভিযোগ দাখিল করে। আর তার দাখিলকৃত অভিযোগও মামলা হিসাবে নেয় পুলিশ। সংবাদ সম্মেলনে আরো জানানো হয়, তিনি ইরনের ভাইয়ের দাখিলকৃত মামলায় জামিন নিয়েছেন। কিন্তু তার মামলার আসামি ইরন প্রকাশ্যে ঘুরলেও বিশ্বনাথ থানা পুলিশ আসামি ধরছে না। যার ফলে ইরন মেম্বারের লোকজন তাদেরকে বাড়িতে উঠতে দিচ্ছে না। তিনি জানান, তিনি তার অধিকার চান। আর ইরন মেম্বারের সন্ত্রাসী কার্যকলাপ থেকে তিনি ও তার পরিবার মুক্তি চান। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন- তার মা, ছোট বোন ও শিশু দুই ভাই।
এ ব্যাপারে ইউপি মেম্বার ইরন মিয়া বলেন, তিনি তাকে চিনেন। তবে তার সঙ্গে কোনো শারীরিক মিলন ঘটেনি বলে দাবি করেন তিনি। বলেন, তার বাবা বিদেশ থাকাবস্থায় তিনি তাদেরকে দেখাশোনা করেছেন। তবে ঘনিষ্ট হননি। বিশ্বনাথ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শামসুদ্দোহা পিপিএম বলেন, তিনি বর্তমানে ঢাকায় অবস্থান করছেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা তদন্তের ভিত্তিতে পর্যাপ্ত সাক্ষ্য-প্রমাণ পেলে আসামিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ ব্যাপারে দৌলত ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আমির আলী জানিয়েছেন- বিষয়টি তার কাছেও এসেছে। তিনি এ নিয়ে বেশ কয়েকবার উভয়পক্ষকে নিয়ে বৈঠক করেন। কিন্তু কোনো সুরাহা হয়নি। অবশেষে তারা মামলায় গেছেন। এখন আদালত তাদের ব্যাপারে ফয়সালা করবে বলে জানান তিনি।