সোমবার ● ৮ এপ্রিল ২০১৯
প্রথম পাতা » অপরাধ » শিশু ফাহিমকে অমানুষিক নির্যাতনকারীর বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি
শিশু ফাহিমকে অমানুষিক নির্যাতনকারীর বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি
কুষ্টিয়া প্রতিনিধি :: প্লাষ্টিকের একটি কলমদানী ভাঙ্গার কারণে কুষ্টিয়ায় মাদ্রাসার এক শিক্ষক ৯ বছরের শিশু রাসেল শেখ ওরফে ফাহিমকে অমানুষিক নির্যাতন করার অভিযোগে কুষ্টিয়া অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে ২০১৩ সালের শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ আইনের ৭০ ধারায় মামলা হয়েছে। মামলাটি দায়ের করেছেন নির্যাতিত শিশু ফাহিমের বড় ভাই কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার উত্তর চাঁদপুর গ্রামের আব্দুল হামিদ শেখের পুত্র আরজু শেখ । আদালতের বিচারক মো: রেজাউল করিম আজ ৮ এপ্রিল মামলাটি আমলে নিয়ে আসামী আব্দুল জব্বারের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করেছেন । মামলা নং সিআর-৩৪৩/১৯ ।
বাদীর পক্ষে মামলাটি রুজু করেন কুষ্টিয়া বারের সিনিয়র আইনজীবি এ্যাড. আব্দুল বারী, এ্যাড. রফিকুল ইসলাম সবুজ ও এ্যাড. ইকবাল হোসেন ।
মামলার বাদী নির্যাতিত শিশু ফাহিমের বড় ভাই আরজু শেখ মামলার আরজিতে উল্লেখ করেন,তার পিতা দরীদ্র হওয়ার কারণে ছোট ভাই রাসেল শেখ ওরফে ফাহিমকে গত ৯ জানুয়ারী কুষ্টিয়া হাউজিং এষ্টেটের এ-ব্লক ২৩০ নং বাসার মকবুল হোসেন-সামসুন্নাহার হাফেজিয়া মাদ্রাসায় ভর্তি করেন। ফাহিম অত্যন্ত শান্ত প্রকৃতির ছেলে। সে দু-একদিন পর পরই মোবাইল করে তার বড় ভাই এর সাথে কখনো মায়ের সাথে কথা বলতো। কিন্তু গত ৭ মার্চ থেকে ১৫ মার্চ পর্যন্ত ফাহিম মা কিংবা ভাই এর সাথে কথা না বলায় তারা চিন্তিত হয়ে পড়েন। মামলার বাদী আরজু শেখ ওই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক আব্দুল জব্বারের মোবাইলে ফোন দিয়ে যোগযোগের চেষ্টা করলেও তিনি তার ফোন রিসিভ না করায় তারা আরো শংকিত হয়ে পড়ে। বাধ্য হয়ে তিনি তার মাকে সাথে নিয়ে গত ১৬ মার্চ ওই প্রতিষ্ঠানে যায় এবং শিক্ষক আব্দুল জব্বারের সাথে যোগাযোগ করে ফাহিমের সাথে দেখা করতে চান। শিক্ষক আব্দুল জব্বার বলেন, ফাহিম ভালো আছে। আপনাদের সাথে দেখা করানো যাবে না। আপনারা বাড়ি চলে যান। এ সময় বাদীর সাথে শিক্ষক আব্দুল জব্বারের তুমুল বাক-বিতন্ডায় চিল্লাচিল্লি হলে স্থানীয় লোকজন ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন এবং স্থানীয়দের সহযোগিতায় আটকে রাখা ফাহিমকে উদ্ধার করেন।
বাদী আরজু শেখ আরো জানান,নির্যাতিত ফাহিম আমাকে ও মাকে দেখে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে। সে সকলের সামনে শিক্ষক আব্দুল জব্বারের নির্যাতনের করুন কাহিনী তুলে ধরে। ফাহিমের সাথে থাকা সিয়াম (১০) নামের অপর এক শিশু জানায় একটি প্লাষ্টিকের কলমদানী (মাত্র ২০ টাকা দাম) ভাঙ্গার কারনে মাদ্রাসার একটি কক্ষে নিয়ে যেয়ে ফাহিমকে বেতের লাঠি দিয়ে পিটাতে থাকে । ফাহিম মেঝেতে পড়ে গেলে তার পা এর তালুতে চরম আঘাত করে লাঠি ভেঙ্গে ফেলে। ফাহিম ৩/৪ দিন হাটতে পারেনি।
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে ফুলের মত নিষ্পাপ ওই শিশুকে অমানবিক নির্যাতনের পর কোন চিকিৎসা না দিয়ে নরপশু ওই শিক্ষক তাকে ৯ দিন আটক রেখে ঘটনাটি কাউকে না বলার জন্য শাসাতে থাকে। দীর্ঘ ৮দিন শিশু সন্তানের কোন খবর না পেয়ে ফাহিমের মা ও বড় ভাই ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এসে স্থানীয়দের সহযোগিতায় অসুস্থ শিশু ফাহিমকে উদ্ধার করে বাড়ি নিয়ে যায় । এ সময়ও ওই শিক্ষক ফাহিমের মা ও তার বড় ভাইকে হুমকি ধামকি প্রদান করে এবং গালি গালাজ দেয়। এ ঘটনায় এলাকাবাসী ফুঁসে উঠেছে।
নির্যাতিত ফাহিম জানায় তাকে কোন চিকিৎসা দেয়া হয়নি এমনকি একটি কক্ষে আটকে রেখে শাসানো হত এই কথা কাউকে বললে তাকে মেরে ফেলা হবে।
ফাহিমের মা মোছা: মমতা খাতুন বলেন দেশে কি কোন বিচার নেই । আমরা গরীব বলে কি বিচার পাবো না । ফাহিমের ভাই আরজু শেখ বলেন আমার ভাই এর নির্যাতনের বিচার চাই । তিনি বলেন আদালতে মামলা করায় আমাকে ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে । সাংবাদিকদের সহযোগিতা কামনা করে বলেন বিষয়টি দেশের প্রধানমন্ত্রীসহ মানবাদিকার সংস্থা গুলোর কাছে তুলে ধরার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন যাতে আর কোন শিশু যেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এমন ভাবে নির্যাতিত না হয়। তিনি আরো জানান শিক্ষক আব্দুল জব্বার অধিকাংশ সময় ইউটিউব ও ফেসবুক নিয়ে পড়ে থাকেন।
এ ব্যাপারে শিক্ষক আব্দুল জব্বারের সাথে যোগাযোগ করলে তার সেলফোন নাম্বার বন্ধ পাওয়া যায়।