বৃহস্পতিবার ● ১১ এপ্রিল ২০১৯
প্রথম পাতা » চট্টগ্রাম বিভাগ » দীর্ঘদিন পর পার্বত্য জেলার ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি হচ্ছে
দীর্ঘদিন পর পার্বত্য জেলার ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি হচ্ছে
ফসিহ উদ্দীন মাহতাব :: ভূমি-সংক্রান্ত বিরোধ নিষ্পত্তি হতে যাচ্ছে তিন পার্বত্য জেলায়। দীর্ঘদিন ধরে পাহাড়ি-বাঙালিদের মধ্যে চলে আসছে এই বিরোধ। অতীতে আইন না থাকায় বিভিন্ন সরকার ১৯৮৫ সালের অধ্যাদেশ অনুসরণ করে ভূমি ব্যবস্থাপনা করে আসছিল। ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য একটি কমিশন গঠন করা হয়েছিল এতে। সুফল আসেনি তেমন। এমন প্রেক্ষাপটে বর্তমান সরকার ‘ভূমি জরিপ ও খতিয়ান (পার্বত্য জেলা)’ নতুন আইন প্রণয়ন করতে যাচ্ছে। আইনটি প্রণয়ন হলে পার্বত্য এলাকায় পাহাড়ি ও বাঙালিদের মধ্যে ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি সহজ হবে। আজ বুধবার সচিবালয়ে ভূমি সচিবের সভাপতিত্বে আইনটির চূড়ান্ত খসড়া প্রস্তুত করতে আন্তঃমন্ত্রণালয়ের এক সভা অনুষ্ঠিত হবে। সভায় আইনটি চূড়ান্ত হলে পরবর্তী অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে মন্ত্রিসভায়।
সূত্রে জানা গেছে, প্রস্তাবিত খসড়া আইনে বলা হয়েছে- তিন পার্বত্য জেলায় ভূমি খতিয়ান প্রস্তুত বা সংশোধনের নির্দেশ-সংক্রান্ত কোনো আদেশের বা ভূমি খতিয়ান প্রস্তুত কিংবা সংশোধন সম্পর্কিত বিষয় কোনো আদালতে মামলা বা দরখাস্ত পেশ করা যাবে না। রাজস্ব কর্মকর্তা মৌজাভিত্তিক তৈরি খতিয়ানে সব বিবরণের সঠিকতা যাচাই করে রেজিস্ট্রারে লিখে রাখবেন। অর্ডিন্যান্সের বাইরে তেমন কোনো পরিবর্তন থাকছে না আইনে।
ভূমি বলতে চাষযোগ্য অনাবাদি বা বছরের কোনো সময় জলমগ্ন থাকে; সেইসব ভূমির উদ্ভূত সুবিধা, ঘরবাড়ি, দালানকোঠা ও মাটিতে সংযুক্ত অপরাপর বস্তুকে বোঝাবে। যেসব এলাকার কোনো মৌজার পূর্বনির্ধারিত সীমানাভুক্ত কোনো এলাকা জরিপ ও খতিয়ানের একক হিসেবে অনুপযুক্ত হয়ে গেছে, ওই এলাকার স্থানীয় জনগণের মতামত এবং জেলা প্রশাসকের মতামত যাচাইয়ের পর জরিপের জন্য সরকারের কাছে উপস্থাপন করতে হবে। ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের মাধ্যমে করতে হবে তা। সরকার প্রস্তাব গ্রহণ এবং অনুমোদন করলে ম্যাপ ও ভূমি খতিয়ান, মৌজাসমূহের ম্যাপ ও খতিয়ান প্রস্তুত এবং সংশোধনের জন্য একটি মৌজা হিসেবে ঘোষণা ও গ্রহণ করা হবে। প্রণীত এবং প্রকাশিত খতিয়ানের ভিত্তিতে নির্ধারিত ভূমি মালিকানা ম্যাপ প্রণয়ন করা হবে। মৌজার ভূমি খতিয়ান চূড়ান্তভাবে প্রস্তুত বা সংশোধনের পর রাজস্ব কর্মকর্তা সব ম্যাপ ও ভূমি খতিয়ান পার্বত্য জেলা পরিষদ, জেলা জজ, সহকারী কমিশনার (ভূমি), ইউনিয়ন তহশিল অফিস এবং জেলা প্রশাসকের কাছে হস্তান্তর করবেন। সরকার নির্ধারিত মূল্যে বিক্রির ব্যবস্থা করবেন জেলা প্রশাসক। তিন পার্বত্য জেলায় চূড়ান্ত খতিয়ান প্রকাশের আগে যে কোনো সময় ভূমি জরিপ অধিদপ্তর (ভূরেজ) মহাপরিচালকের প্রস্তাবের ভিত্তিতে ওই এলাকার জন্য এই আইনে সংশোধন এবং বাতিল করতে পারবেন ওই রাজস্ব কর্মকর্তা। ভূমি জরিপ অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের তত্ত্বাবধানে এবং নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত হবে যাবতীয় কাজ। সেটেলমেন্ট ও রাজস্ব কর্মকর্তার যাবতীয় ক্ষমতা প্রয়োগ ও দায়িত্ব পালন করবেন তিনি। জরিপের মাধ্যমে নকশা প্রস্তুত এবং প্রকাশের তথা মুদ্রণের পর বিতরণের ব্যবস্থা করবেন তা। ভূমির খতিয়ান মুদ্রণের পর কমপক্ষে এক মাসের মধ্যে চূড়ান্তভাবে প্রকাশের ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন রাজস্ব কর্মকর্তা। চূড়ান্ত ভূমি খতিয়ান প্রকাশের পর ভূরেজ মহাপরিচালক কর্তৃক নির্ধারিত সময়ের মধ্যে রাজস্ব কর্মকর্তা প্রকাশনার তারিখ উল্লেখ করে প্রত্যয়ন করবেন। সরকার আইনের উদ্দেশ্য পূরণে গেজেট প্রজ্ঞাপনমূলে বিধিমালা তৈরি করতে পারবে। সমতলের মতো তিন পার্বত্য জেলায়ও ১৮৭৫ সালের সার্ভে অ্যাক্ট এবং এর অধীনে প্রণীত বিধিসমূহ প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে।
এ প্রসঙ্গে ভূমি সচিব মো. মাকছুদুর রহমান পাটোয়ারি বলেন, ‘আইনটি প্রণয়নের কাজ চলছে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মতামত চাওয়া হয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মতামত চাওয়া হয়েছে। তারা মতামত পেশ করবে। সভায় আইনটি চূড়ান্ত করার বিষয়ে আলোচনা ও পর্যালোচনা সাপেক্ষে সিদ্ধান্ত হবে।’ সূত্র : সমকাল, ১০ এপ্রিল-২০১৯