বৃহস্পতিবার ● ১১ এপ্রিল ২০১৯
প্রথম পাতা » জনদুর্ভোগ » গোদাগাড়ীতে গ্রামীণ সড়কের বেহাল অবস্থা
গোদাগাড়ীতে গ্রামীণ সড়কের বেহাল অবস্থা
রাজশাহী প্রতিনিধি :: রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলা প্রকৌশলীর বিলাস বহুল বাড়ী নিয়ে চলছে আলোচনা। স্থানীয় সরকার বিভাগের (এলজিইডি) প্রকৌশলী মোস্তাক আহমেদ রাজশাহী মহানগরের উপশহর এলাকায় প্রায় ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি বহতল ভবন নির্মান করেছে। একমাস আগে এই বিলাস বহুল বাড়ীটির নির্মাণ কাজ সম্পর্ণ হয়। বাড়ী নির্মাণে এত টাকা কোথায় পেল তা নিয়ে চলছে আলোচনা।
গোদাগাড়ীর স্থানীয় লোকজন জানান, প্রকৌশলী মোস্তাক আহমেদ এর বিলাস বহুল বাড়ী তৈরী হলেও উপজেলার বিভিন্ন এলাকার গ্রামীণ সড়কের বেহাল অবস্থা।
গোদাগাড়ী এলজিইডির একটি সূত্র জানায়, ২০১৬ সালের ১৮ জানুয়ারী মোস্তাক আহমেদ উপজেলা প্রকৌশলী হিসাবে যোগদান করেন। এর আগে তিনি চাপাইনবাবগঞ্জ এলজিইডিতে কর্মরত ছিলেন।২০১৬ সাল থেকে ২০১৮ পর্যন্ত প্রকৌশলী মোস্তাক আহমেদের তত্বাবাধায়নে উপজেলা বিভিন্ন এলাকায় রাস্তা, সড়ক, কালভার্ট ব্রিজ, স্কুলের ভবন নিমার্ণসহ প্রায় শত কোটি টাকার উন্নয়ন মুলক কাজ হয়েছে।
এর মধ্যে উপজেলার কোশিায় ৫২ লাখ টাকা ব্যয়ে ১ কিলোমিটার, ৯৫ লাখ টাকা ব্যয়ে চর আষারিয়াদহ ১ কিলোমিটার, মান্ডইল সৈয়দ পুরে ৫৩ লাখ ব্যয়ে ১ কিলোমিটার, ফরিদপুরে ৫৩ লাখ টাকা ব্যায়ে ১ কিলোমিটার, দমদমায় ৯০ লাখ টাকা ব্যয়ে পোনে দুই কিলোমিটার, বিদিরপুর ঘাট ৯১ লাখ টাকা ব্যয়ে১ কিলোমিটার, বাবু পুর ৬৪ লাখ টাকা ব্যয়ে সোয়া ১ কিলোমিটার, ছাতনা পুর ৬৯ লাখ টাকা ব্যয়ে সোয়া ১ কিলোমিটার, সাবব্দী পুরে ৬৬ লাখ টাকা ব্যয়ে ১ কিলোমিটার, জগি ডাইং ৮৫ লাখ টাকা ব্যয়ে দেড় কিলোমিটার ইশ্বরী পুরে ৬৬ লাখ টাকা ব্যয়ে ১ কিলোমিটার, মাছমারায় ৯৪ লাখ টাকা ব্যয়ে দেড় ১ কিলোমিটার সড়ক ও রিশিকুল চৌমনীতে ৮৪ লাখ টাকা ব্যয়ে দুইটি ব্রিজ নির্মাণ করা হয়। এসব সড়ক ও ব্রিজ নির্মানের কিছুদিন পর ক্রটি দেখা দিয়েছে।
স্থানীয় লোকজন জানান, সড়ক ও ভবন নিমার্ণে নিম্ন মানের সামগ্রী ব্যবহার করা হয়েছে। এসব সড়কের বিভিন্ন স্থানে ইট পাথর (কার্পেটিং) উঠে গিয়ে ছোট ছোট গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। উপজেলার বালিয়াঘাটা থেকে দর্গা, সুইজগেট থেকে কাপাশিয়া পাড়া, কামার পাড়া থেকে সাধুর মোড় সড়ক গুলি নতুন ভাবে নির্মাণ করা হলেও এখন সড়ক গুলি খারাপ হতে চলেছে। উপজেলা পরিষদের ভবন ও হলরুম নির্মাণ করা হয়। কিন্ত নির্মাণ কাজ সম্পর্ণ হওয়ার আগেই হলরুমে ফাটল দেখা দেয়। পরে ফাটল গুলি বালু সিমেন্ট বন্ধ করে দিয়ে রং করা হয়। স্থানীয় লোকজনের ধারনা প্রকৌশলী মোস্তাক আহমেদকে ম্যানেজ করে নিম্ন মানের সড়ক, ব্রিজ, কালর্ভাট ও ভবন নির্মাণ করেছে সংশ্লিট ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। আর অবৈধ আয় দিয়ে বিলাস বহুল বাড়ী নির্মাণ করেছে এ প্রকৌশলী।
এ প্রসঙ্গে গোদাগাড়ী উপজেলা প্রকৌশলী মোস্তাক আহমেদ বলেন, সঠিক নিয়ম মেনে উপজেলায় সড়ক ও ভবনসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ বাস্তবায়ন করা হয়েছে। তবে বিলাস বহুলবাড়ী নির্মাণ সম্পর্কে কোন মন্তব্য না মিটিং এ আছি বলে মুঠোফোন কেটে দেন।
রমরমা কোচিং বাণিজ্য এখন গোদাগাড়ীতে :
রাজশাহী :: শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে চলছে রমরমা কোচিং, প্রাইভেট বাণিজ্য। কেউ কেউ সাইনবোড সরিয়ে, আবার কেউ কেউ পুরানো কৌশল পরিবর্তন করে শিক্ষকরা নতুনভাবে চালিয়ে যাচ্ছেন তাদের এই শিক্ষা বাণিজ্য।
এর মধ্যে উপজেলার সরকারি স্কুল কলেজ ও এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা বাসা ভাড়া নিয়ে বেনামে চালাচ্ছেন এই কোচিং বাণিজ্য। তেমন কোন অভিযান না চলায় তারা আরও বেপরোয়া গতিতে চালাচ্ছেন কোচিং, প্রাইভেট বানিজ্য।
এইচ.এস.সি পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে সকল প্রকার কোচিং বানিজ্য বন্ধ থাকার সরকারী নির্দেশ থাকলেও রহস্যজনক কারণে সেটা মানা হচ্ছে না। কোচিং সংশ্লিষ্ট সকলের বক্তব্য সব কিছু ম্যানেজ করে চালানো হচ্ছে কোচিং বানিজ্য।
আর উপজেলা প্রশাসনের বক্তব্য আমরা অভিযানে গেলে তারা কোনভাবে আগাম সংবাদ পেয়ে তালা লাগিয়ে পালিয়ে যাচ্ছেন। সকাল ৬টা থেকে ৭ টা ৫০ পর্যন্ত আর বিকালে ৪টা থেকে ৬ টা পর্যন্ত চলছে কোচিং বানিজ্য দেখার যেন কেউ নেই।
কোন কোন শিক্ষক নিজের বাড়ীতে ৩০/৩৫ জোড়া বেঞ্চ তৈরী করে ৫০ থেকে ৬০ শিক্ষার্থী নিয়ে চালচ্ছে কোচিং প্রাইভেট বানিজ্য, একদিন পর পর এক এক ব্যাচকে পড়ানো হয়। ৭/৮টি ব্যাচকে পড়ানো হচ্ছে। ফলে ওই স্কুলে বিভিন্ন অজুহাতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অনু উপস্থিত থেকেও দেদারসে চালাচ্ছে কোচিং প্রাইভেট কোচিং বানিজ্য।
কেউ কেউ সরকারী দলের কোটা সেজে চালাচ্ছেন কোচিং সেন্টার এবং বীরদাপটে বলছেন সারাদেশে অভিযান চললেও আমাদের কোচিং সেন্টারে কেউ অভিযান চালাতে পারবেন না, সব ম্যানেজ করা আছে।
উপজেলা আইন শৃংঙ্খলা সভায় কোচিং প্রাইভেট বানিজ্যের বিষয়টি জোরালোভাবে উপস্থাপন করা হলেও প্রশাসনের নাকের ঢগায় এ সব অবৈধ কার্যক্রম চলায় দরিদ্র শিক্ষার্থী, অভিাবক, সচেতন মহল দারুন হতাশ।
আর এসব কোচিং সেন্টারে সকাল সাড়ে ৫টা থেকে দুপুর ও বিকালে এমন কি সন্ধ্যা পর্যন্ত চলেছে শিক্ষকদের প্রাইভেট পাঠদান।
সরজমিন ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলা সদরেই রয়েছে প্রায় অর্ধশতাধিক কোচিং সেন্টার। এর মধ্যে উপজেলার পশু হাসপাতাল রোড, সততা ক্লিনিকের গা ঘেষে রাজকীয় ভবনে চলছে কোচিং সেন্টার, শহিদ ফিরোজ চত্ত্বরের বিদ্যুৎ অফিসে পাশে, গোদাগাড়ী আফজি পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের আশেপাশে, সুলতানগজ্ঞ, মহিশালবাড়ীতে ১০ টি স্থানে রয়েছে কোচিং ও প্রাইভেট সেন্টার।
শিবসাগর, পিরিজপুর, বিদিরপুর, প্রেমতলী, রাজাবাড়ী, বাসুদেবপুর, ফরিদপুর, কাশিমপুর, কাঁকনহাটসহ কামারপাড়া, হুজরাপুরসহ পাড়া মহল্লায় বিভিন্ন স্থানে শিক্ষকরা গড়ে তুলেছেন তাদের বাণিজ্য প্রাইভেট কেন্দ্র। গোদাগাড়ী পৌরসভা, কাঁকনহাট পৌরসভা ও উপজেলায় রয়েছে দেড় শাতাধিক কোচিং প্রাইভেট বানিজ্য। আইন থাকলেও এর বাস্তব প্রয়োগ না থাকায় দিনে দিনে কোচিং, প্রাইভেট সেন্টার ব্যাঙের ছাতার মত গড়ে উঠেছে। আর গোদাগাড়ীতে কোচিং প্রাইভেট সেন্টার গুলিতে রহস্যজনক ভাবে কোন অভিযান না চলার কারণে এ সুযোগটি জামায়াত শিবির ক্যাডার তাদের দলীয় নেতাদের বাড়ীকেও কোচিং সেন্টারের আড়ালে দলীয় কার্যক্রম পরিচালনা করছনে বলওে অভিযোগ রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার প্রায় সব বিদ্যালয়ের কোনো না কোনো শিক্ষক কোচিং, প্রাইভেট বানিজ্যের সাথে জড়িত রয়েছেন। দেখা গেছে, ছোট্ট একটি ঘরে বেঞ্চে বসিয়ে ১ ঘণ্টার কোচিংয়ে ৪০ থেকে ৫৫ জন শিক্ষার্থীকে একত্রে পড়ানো হচ্ছে। এতে দায়সারা গোছের পাঠদান হলেও মূলত শিক্ষার কোনো পরিবেশ নেই।
গোদাগাড়ী পৌর সদরের শিক্ষার্থী নাইম, ইসরাইল সহ কয়েক জনের সাথে কথা বলে জানা যায়, ১ ঘণ্টা করে মাসে ১২ দিন তাদের পড়ানো হয়। তাদের কোচিং ফি বাবদ মাসে ৫ ’শত থেকে ১৯’শত টাকা করে দিতে হচ্ছে।
কোচিংয়ের বিষয়ে শিক্ষার্থীদের কাছে জানতে চাইলে তারা বলেন, ‘কি করবো, কোচিংয়ে না পড়লে পরীক্ষায় পাস করবো কিভাবে? ক্লাসে তো আর সব কিছু শেখানো হয় না। আর স্কুল কলেজ মাদ্রাসায় জানুয়ারী মাসের বিনামূল্যে বই দেয়া হলেও ভর্তি, পরীক্ষা নানা অজুহাতে এখনও পুরো ক্লাস শুরু হয়নি। সকাল ৯ টায় ক্লাস শুরু করে দুপুরের পূর্বে তালা ঝুলানো হয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে। তাই কোচিং প্রাইভেট ছাড়া আর কি উপায় বলেন ? বাবা মা খুব কষ্ট করে কোচিং প্রাইভেটের টাকা আমাদেরকে দেন যদি প্রতিষ্ঠানে সরকারী নির্দেশ মত ৬ ঘন্টা ক্লাস হত তা হলে আমাদের এত টাকা নষ্ট কওে কোচিং প্রাইভেট বানিজ্যের সাথে যুক্ত হতে হত না। আমরাও চাই একেবারেই বন্ধ হউক।
এএম শাহিন নামের এক অভিভাবক বলেন, ‘স্কুল কলেজ মাদ্রাসা গুলিতে ঠিকভাবে ক্লাস হয় না। বছরের শুরুতে বিনামূল্যে বই সরকার দেন, শিক্ষার মান উন্নয়নের জন্য কিন্তু ক্লাস শুরু হয় না। বিভিন্ন অজুহাতে জানুয়ারী মাস পার করে ফেব্রুয়ারী মাসেও অনেক স্কুল কলেজে ফুল ক্লাস শুরু হয়নি।
কলেজগুলিতে শিক্ষকদের কথিত অফডের কারণে সপ্তাহের ৩/৪ দিন পালা করে শিক্ষকগন কলেজে আসেন না। কলেজে ৯ টায় ক্লাস শুরু করে দুপুরের আগে তালা ঝুলিয়ে দেন। শিক্ষক শিক্ষার্থী শূন্য হয়ে যায়। কোন কোন শিক্ষক ক্লাসের ৫/১০ মিনিট পূর্বে আসেন আর ক্লাস করে চলে যান। এদের শিক্ষার্থীর অবস্থা আরও করুন, পাবলিক পরীক্ষায় ফেল করেন অনেকে ।
বেশীরভাগ স্কুল কলেজ মাদ্রাসায় সরকারী নির্দেশ মানা হয়না। সরকারী নির্দেশমত ৬ ঘন্টা না চালিয়ে চালানো হয় ৩/৫ ঘন্টা। আর বৃহস্পতিবারে কথিত হ্যাফডের কথা বলে প্রতিষ্ঠান চালানো হয় ২ থেকে ৩ ঘন্টা। সিলেবাস শেষ না। বাধ্য হয়েই ছেলে মেয়েদের কোচিং, প্রাইভেট বানিজ্যে পড়তে দিতে হচ্ছে।
এমনও শিক্ষক রয়েছে তার কাছে প্রাইভেট না পড়লে পরীক্ষায় ভালো নম্বর পাওয়া যায় না।’ কোচিংয়ে পড়ানোর বিষয়ে একাধিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের কাছে জানতে চাওয়া হলে তারা বিষয়টি স্বীকার করেন। তবে অনেকেই বলেন, ‘আমাদের আমাদের এলাকায় এমন কোন প্রতিষ্ঠান নেই যার ২/৪ জন্য শিক্ষক প্রাইভেট কোচিং বানিজ্যের সাথে যুক্ত নাই। কিন্তু আমরা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করতে পারি না। কারণ তার অনেক প্রভাবশালী, দলীয় অনেক প্রভাব। কিছু কিছু শিক্ষক তাদের বাসা বাড়িতে প্রকাশ্যে প্রাইভেট পড়িয়ে থাকেন।’ তাদের বাসায় লাইন দিয়ে অগ্রীম টাকা দিয়ে ছেলে মেয়েদের কোচিং প্রাইভেটে ভতি হয়।
এ ব্যপারে গোদাগাড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার শিমুল আকতারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমরা কোচিং বাজ শিক্ষক ও কোচিং সেন্টারে অভিযান চাললে তার লোক বসিয়ে রাখেন আমাদের দেখে তা লাগিয়ে পালিয়ে যায়। পুলিশ সংকটের কারণে অনেক সময় সময়মত অভিযান পরিচালনা করা সম্ভব হয় না। আগামীতে কিছু আনসার রেখে অভিযান পরিচালনার চেষ্টা করবো। তবে তিনি জোর দিয়ে বলেন কোচিং প্রাইভেট বালিজ্যের সাথে তাদের কোন ভাবে ছাড় দেয়া হবে না।
২/১ কোচিং প্রাইভেট বাজ শিক্ষকদের ও কোচিং সেন্টারে যুক্তদের শাস্তির ব্যবস্থা করলে এগুলি আপনা আপনি বন্ধ হয়ে যাবে, স্কুল কলেজ মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠান প্রধান ও সভাপতিগন সরকারী নির্দেশমত চালাচ্ছেন কি না তা যদি প্রশাসনের লোকজন নিয়মিত তদারর্কী করেন তা হলেই শিক্ষার মান বৃদ্ধি পাবে এবং কোচিং প্রাইভেট বানিজ্য চিরতরে বন্ধ হয়ে যাবে। ভুক্তভোগী অভিভাবক, শিক্ষার্থী সচেতন মহল গোদাগাড়ীর অবৈধ কোচিং, প্রাইভেট বানিজ্য বন্ধের জন্য শিক্ষা মন্ত্রী, শিক্ষা সচিব, প্রধান মন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট উদ্ধোর্তন কতৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।