শুক্রবার ● ১২ এপ্রিল ২০১৯
প্রথম পাতা » পটুয়াখালী » মির্জাগঞ্জের ঐতিহ্য হযরত ইয়ার উদ্দিন খলিফা (রাঃ) মাজার
মির্জাগঞ্জের ঐতিহ্য হযরত ইয়ার উদ্দিন খলিফা (রাঃ) মাজার
পটুয়াখালী প্রতিনিধি :: মির্জাগঞ্জের ঐতিহ্য হযরত ইয়ার উদ্দিন খলিফা (রাঃ) মাজার। মির্জাগঞ্জের সাধক মরহুম হযরত ইয়ার উদ্দিন খলিফা(র:) সাহেব একজন আধ্যাত্মিক ওলী ছিলেন। তাঁর লেখাপড়ার বিষয়ে সঠিক জানা না গেলেও কোরআন তেলোয়াত করতেন বিধায় প্রমাণিত হয় যে, তিনি আরবী লেখাপড়া জানতেন। তাঁর জন্মস্থান শরিয়তপুর জেলার ধামসী গ্রামে। তবে জন্মতারিখ সঠিক কারো জানা নেই। তাঁর প্রকৃত নাম ইয়ার উদ্দিন খাঁ। পিতার নাম সরাই খাঁ। তাঁর বয়স যখন ৩৮ বছর তখন তাঁর স্ত্রী ও একমাত্র পুত্র কলেরা রোগে মারা যাওয়ার আঘাত সহ্য করতে না পেরে বেশিরভাগ সময়ই তিনি মসজিদে থাকেন এবং জায়নামাজে বসে কোরআন শরীফ তেলোয়াত করতেন। অতঃপর একদিন পটুয়াখালী জেলার মির্জাগঞ্জ থানায় এসে জামাটুপি সেলাই করতে করতে ইয়ার উদ্দিন খলিফা সাহেব নামে পরিচিত হয়। মরহুম ইয়ার উদ্দিন খলিফা সাহেব (র:) কর্মজীবনে একজন বাহালী দোকানী হলেও তিনি মির্জাগঞ্জ, সুবিদখালী, বিঘাই ও কাকড়াবুনিয়া হাটে তার ভাঙ্গা নৌকায় গিয়ে দোকানদারী করতেন। এতে সাহায্য করতেন তার একমাত্র বিশ্বাসী খাদেম মির্জাগঞ্জের মরহুম গগন মল্লিক। তাঁর জিকির অথবা কোরআন তেলোয়াতের সময় কেউ সওদা নিতে এলে তিনি মেপে নিয়ে চটের নিচে টাকা রেখে যেতে বলতেন। তাঁর বিশ্বাস ছিল কেউ তাকে ঠকাবে না। তবে অনেকে তার সরলতার সুযোগে দ্রব্য বেশি নিলে অথবা টাকা না দিলে অথবা কেউ তাকে কিছু বললে খলিফা সাহেব নিষেধ করতেন এবং বলতেন লোকটা লজ্জা পাবে। গগন মল্লিক নৌকা চালাতেন এবং খলিফা সাহেব প্রায়ই পানি সেচ করতেন। একদিন বিঘাই হাট থেকে আসার পথে পায়রা নদীতে ভীষণ ঝড়-তুফান শুরু হয়। খাদেম গগন মল্লিক নৌকা বেঁধে রাখার কথা বললে খলিফা সাহেব তাকে ওজু করে নামাজ পড়তে বললেন। গগন মল্লিক নামাজ পড়ার মধ্যেই নৌকা মির্জাগঞ্জে পৌঁছে যায়। তার জীবনে আরও অনেক অলৌকিক ঘটনা আছে। তৎকালীন সময়ে মির্জাগঞ্জের দারোগা মেছের আহমেদ তাঁকে ভন্ড ফকির বলে খুব গালাগালি করেন। ঐদিন রাতে দারোগা সাহেবের শরীরে ভীষণ যন্ত্রণা হয় এবং রাতে ঘুমাতে পারেননি। অন্য একদিন তাঁকে স্থানীয় শ্রীমন্ত নদীর অপর তীরে দেখছেন, পরক্ষণেই তাঁর বাসগৃহের সামনে নদীর ঘাটে ওজু করতে দেখেন। ব্রিটিশ শাসনামলে একদিন পটুয়াখালী থেকে আমতলীগামী স্টিমারে দুজন লোক আসার পথে টিকেটের টাকা না দিতে পারায় স্টিমারের কর্মচারীরা অপমান করে মির্জাগঞ্জ ঘাটে নামিয়ে দেয়। লোক দু’জন হুজুরের মাজারে কান্নাকাটি করে মাজার জিয়ারত করেন। স্টিমারটি সুবিদখালী থেকে ফেরার পথে মাজারের কাছে পশ্চিম পাশে শ্রীমন্ত নদীতে ডুবে যায়। পরবর্তীতে স্টিমারটি তোলার জন্য মালিক যখন ডুবুরি পাঠায়, ডুবুরি পানির নিচে গিয়ে দেখতে পায় একজন লোক স্টিমারের ভিতরে কোরআন তেলোয়াত করছেন। ঘটনাটি জানার পর স্টিমার কোম্পানির লোক ভুল স্বীকার করে মাজারে মানত করার পরের দিন স্টিমারটি সহজেই তুলতে পারে। এরপর থেকে সমস্ত লঞ্চ, স্টিমার, ইঞ্জিল চালিত নৌকা মাজারের কাছে সম্মান প্রদর্শন করে ধীরে ধীরে অগ্রসর হয়। খলিফা সাহেব দীর্ঘদিন মির্জাগঞ্জে অতিবাহিত করেন। একদিন রাতে তাঁর ভীষণ জ্বর হয়। খাদেম গগন মল্লিক রাতে কাছে থাকতে চাইলে কিন্তু তিনি থাকতে দিলেন না। পরের রাতে খুব অসুস্থ হয়ে পড়ায় গগন মল্লিক বাড়ী গেলেন না। গগন মল্লিককে কাছে ডেকে বললেন “গগন তুমি এখানেই থেকো আল্লাহ তোমাকে খাওয়াবেন। এর একটু পরেই খলিফা সাহেব শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্নালিল্লাহে ……. রাজিউন)। এখানে প্রতি বছর ২৪ ও ২৫ ফাল্গুন মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। মাহফিলে লক্ষাধিক লোকের সমাগম ঘটে। এছাড়া প্রতিদিন হাজার ভক্ত আসেন মাজার জিয়ারত করতে।