সোমবার ● ১৫ এপ্রিল ২০১৯
প্রথম পাতা » অপরাধ » রাবি শিক্ষক শফিউল হত্যা মামলায় বিএনপি নেতাসহ ৮ জন খালাস : ৩ জনের ফাঁসি
রাবি শিক্ষক শফিউল হত্যা মামলায় বিএনপি নেতাসহ ৮ জন খালাস : ৩ জনের ফাঁসি
রাজশাহী প্রতিনিধি :: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. এ কে এম শফিউল ইসলাম লিলন হত্যামামলায় তিন জনের মৃত্যুদণ্ড হয়েছে। তিন আসামিকে দণ্ডিত করার পাশাপাশি বাকি আট আসামিকে খালাস দিয়ে আজ ১৫ এপ্রিল সোমবার রায় দেন রাজশাহীর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক অনুপ কুমার।
দণ্ডিতরা হলেন, রাজশাহীর কাটাখালি পৌর যুবদলের সাবেক সভাপতি আরিফুল ইসলাম মানিক, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি আবদুস সামাদ পিন্টু ও যুবদল কর্মী সবুজ। এর মধ্যে সবুজ শেখ পলাতক রয়েছেন। অন্য দুজন রায়ের সময় আদালতে ছিলেন।
এ মালার খালাসপ্রাপ্তরা হলেন, পিন্টুর স্ত্রী নাসরিন আখতার রেশমা, জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন উজ্জ্বল, সিরাজুল ইসলাম, আল মামুন, আরিফ হোসেন, সাগর হোসেন, জিন্নাত আলী ও ইব্রাহিম খলিল ওরফে টোকাই বাবু।
রায় ঘোষণার পর আদালতের পর্যক্ষেন তুলে ধরে রেশমার সঙ্গে দন্দ্বের জের ধরে রাবি শিক্ষক শফিউলকে খুন করা হয় বলে রাষ্ট্র পক্ষের আইনজীবী এন্তাজুল হক বাবু জানিয়েছেন। তিনি বলেন, পিন্টুর স্ত্রী ও বিশ^বিদ্যালয়ের সেকশন অফিসার নাসরিন আখতার রেশমার সঙ্গে কোন কারণে খারাপ আচারণ করেন অধ্যাপক শফিউল। বিষয়টি রেশমা তার স্বামী পিন্টুকে বলে। পরে পিন্টু এ হত্যার পরিকল্পনা করে এবং সাজাপ্রাপ্তরা তিনজন মিলে এ হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটে। রায়ে সন্তস প্রকাশ করেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী।
তবে হত্যাকান্ডের কারণের বিষয়ে অসন্তস প্রকাশ করেছেন অধ্যাপক শফিউলের ছেলে সৌমিন শাহরিদ। তিনি বলেন, হত্যার কারণ সম্পর্কে গভীরে যাওয়া হয়নি। সুযোগ থাকলে হত্যার কারণ নিয়ে অধিকতর তদন্তের দাবি জানান তিনি।
আসামী পক্ষের আইনজীবী গোলাম মুর্তুজা বলেন, কোন সাক্ষী হত্যাকান্ড সম্পর্কে আদালতে সুনির্দিষ্ট তথ্য দিতে পারেনি। আদালত শুধু পুলিশ তদন্ত ও রেশমার ১৬৪ ধারায় দেয়া জবানবন্দির উপর রায় দিয়েছেন। যে তিনজনের সাজা হয়েছে তাদের ব্যাপারে উচ্চ আদালতে আপিল করা হবে বলে জানান তিনি।
দেশের বিভিন্ন স্থানে জঙ্গিদের চোরাগোপ্তা হামলার মধ্যে পাঁচ বছর আগে অধ্যাপক শফিউল কুপিয়ে হত্যার পর ধর্মীয় উগ্রবাদীদের দিকেই ছিল সন্দেহের তীর।
সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের এই অধ্যাপককে ক্যাম্পাসের পাশে চৌদ্দপাই এলাকায় বাড়ির সামনে হত্যার পর আনসার আল ইসলাম বাংলাদেশ-২ নামে খোলা ফেইসবুক একাউন্টে হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকারের বার্তাও এসেছিল।
২০১৪ সালের ১৫ নভেম্বর হত্যাকাণ্ডের পর পুলিশের তদন্তও সেদিকে এগোচ্ছিল। পরে র্যাবের মাধ্যমে তদন্তের বাঁক বদল ঘটে। র্যাব ওই বছরই যুবদল ও ছাত্রদলের দুই নেতাসহ ছয়জনকে গ্রেপ্তারের পর দাবি করে, বিভাগের এক নারী কর্মকর্তার সঙ্গে ‘অসৌজন্যমূলক’ আচরণের প্রতিশোধ নিতে শফিউলকে হত্যা করা হয়।
নাসরিন আক্তার রেশমা নামে ওই সেকশন অফিসারের স্বামী হলেন দণ্ডিত পিন্টু। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি। আর বেকার যুবক সবুজকে এই হত্যাকাণ্ডে ব্যবহার করা হয় বলে র্যাবের ভাষ্য।
মানিক রাজশাহীর কাটাখালি এলাকার চোরাচালান, বালুমহাল ও ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণে বিএনপি নেতাদের ভাড়াটিয়া হিসাবে কাজ করতেন বলে পুলিশের ভাষ্য। পিন্টুর সঙ্গে এই হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনায় যুক্ত হন তিনি।
র্যাব জানায়, পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ১৫ নভেম্বর অধ্যাপক শফিউল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হলে পিন্টু তাকে অনুসরণ করেন এবং মোবাইল ফোনে তার গতিবিধি অন্যদের জানান।
সেদিন মোটর সাইকেলে এক সহকর্মীকে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেরিয়েছিলেন শফিউল। ক্যাম্পাস সংলগ্ন বিনোদপুরে সহকর্মীকে নামিয়ে দিয়ে চৌদ্দপাই এলাকায় বাড়িতে ফিরছিলেন তিনি। মহাসড়ক থেকে ২০০ গজ দূরে বাড়িতে যেতে কাঁচা রাস্তায় নামার পর তিনি হামলার মুখে পড়েন।
শফিউলের ছেলে জঙ্গিদের দায়ী করে গেলেও র্যাবের বক্তব্যের পর তাদের দেখানো পথেই এগোয় পুলিশের তদন্ত। ২০১৫ সালের ৩০ নভেম্বর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রেজাউস সাদিক ১১ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেন।
তখন তিনি বলেছিলেন, প্রশাসনিক কর্মকর্তা রেশমার সঙ্গে দ্বন্দ্বের জের ধরে অধ্যাপক শফিউলকে হত্যা করা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের পর ফেসবুকে দেওয়া দায় স্বীকার করে আনসার আল ইসলাম বাংলাদেশের স্ট্যাটাসের কোনো সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি।
অভিযোগপত্রে আসামির তালিকায় জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন উজ্জ্বল, পিন্টুর স্ত্রী রেশমার নামও ছিল। তখন আটক হওয়ার পর রেশমা ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছিলেন। তবে রায়ে তিনি খালাস পেয়েছেন।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী এনতাজুল হক বাবু জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন রেজিস্ট্রারের করা এই মামলায় গত ১৩ মার্চ সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছিল। এ মামলায় ৩৩ জনের সাক্ষ্য নেয় আদালত। যুক্তিতর্ক শেষে আদালত রায় দিল।