শুক্রবার ● ১৯ এপ্রিল ২০১৯
প্রথম পাতা » কৃষি » প্রলোভনে তামাক চাষ, আর্থিক লোকসানের মুখে চাষীরা
প্রলোভনে তামাক চাষ, আর্থিক লোকসানের মুখে চাষীরা
গাইবান্ধা প্রতিনিধি :: গাইবান্ধায় টোব্যাকো কোম্পানীর বিভিন্ন উপকরণ সহায়তায় লাভের আশায় চাষীরা অন্য ফসলের পরিবর্তে বেশী তামাকের চাষ করলেও ক্ষেত গুলোতে দেখা দিয়েছে মোজাইক ভাইরাস ও পোকার আক্রমন। এতে আক্রান্ত ক্ষেতের তামাকগাছ মরে শুকিয়ে হলুদ বর্ণের হয়ে কুকড়ে যাচ্ছে। কীটনাশক প্রয়োগ সহ নানা উপায়ে এ ভাইরাস দমনে কাজে আসছে না। এতে চরম ক্ষতির মুখে দিশেহারা হয়ে পড়েছে কৃষকরা।
বিগত সময়ে নানাভাবে তামাক চাষে কৃষকদের নিরুৎসাহিত করে তামাকের চাষ কমলেও এ বছর এই এলাকায় একটি টোব্যাকো কোম্পানীর পক্ষ থেকে তামাক চাষের শুরুতেই বিভিন্ন উপকরন সহায়তায় গাইবান্ধা সদরসহ সুন্দরগঞ্জ, গোবিন্দগঞ্জ উপজেলায় ও আশপাশের এলাকায় তামাক চাষ ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পায়। বর্তমানে এসব এলাকায় তামাক চাষ বৃদ্ধি পেলেও ক্ষেতের পর ক্ষেত জুড়ে দেখা দিয়েছে মোজাইক ভাইরাসসহ পোকার আক্রমন। সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছে নদীর তীরবর্তী চর গুলোতে। এই চর এলাকার শত শত বিঘা তামাকের জমি মোজাইক ভাইরাস ও পোকায় আক্রান্ত হয়ে তামাকের কান্ড ও পাতা মরে শুকিয়ে হলুদ বর্ণের হয়ে যাচ্ছে ও কুকড়ে যাচ্ছে। ফলে তামাক ফসল হারিয়ে চরম ক্ষতির মুখে তামাজ চাষীরা। কৃষকরা ঐ টোব্যাকোর কোম্পানীর ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ার আশংকায় শংকিত হয়ে পড়েছেন।
ক্ষতিগস্ত তামাক চাষীরা বলছেন, তামাক ক্ষেতগুলোতে মোজাইক ভাইরাস ও পোকার আক্রমন কোনভাবেই ঠেকানো যাচ্ছেনা। প্রতিটি তামাকের পাতা হলুদ হয়ে কান্ড শুকিয়ে কুকড়ে যাওয়ায় তামাক গাছগুলো বড় হতে পারছেনা। কীটনাশক প্রয়োগ সহ নান উপায়ে এ ভাইরাস ও পোকা দমন চেষ্টায় তা কাজে আসছেনা।
ক্ষতিগ্রস্থ তামাক চাষী বাবলু মিয়া জানান, আমরা অন্যান্য ফসল চাষ করে ভালোই ছিলাম ছিলাম, কিন্ত টোব্যাকো কোম্পানীর প্রলোভনে পড়ে আমরা চাষীরা লাভের আশায় অনেক স্বপ্ন নিয়ে তামাক চাষ করে তামাক ক্ষেতে মোজাইক ভাইরাসের আক্রমনে চরম ক্ষতির মুখে পড়েছি। এই তামাক চাষ করে একদিকে আমাদের ফসল নষ্ট হয়ে অর্থিকভাবে যেমন ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছি, অপরদিকে বিষাক্ত তামাকের ক্ষেত পরিচর্চা করতে গিয়ে স্বপরিবারে শারীরিকভাবেও নানা সমস্যার মুখে পড়েছি।
এলাকার সচেতন মহল মনে করেন, বিগত কয়েক বছর আগেও কৃষকদের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টির কারণে এ উপজেলা থেকে তামাক চাষ মোটামুটিভাবে বিদায় নিয়েছিল। বর্তমানে উপজেলা কৃষি অফিস থেকে কৃষকদের মাঝে তামাক চাষের ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে তেমন প্রচারণা না থাকায় টোব্যাকো কোম্পানীর প্রলোভনে পড়ে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে কৃষকরা। চাষীদের ক্ষতির কথা চিন্তা করে উপজেলা কৃষি অফিস থেকে সঠিক সময়ে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ ও প্রশাসন নজরদারী বাড়ানোর প্রত্যাশা ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক ও এলাকাবাসীর।
এ বিষয়ে কৃষি কর্মকর্তা ছাহেরা বানু জানান, এবার গাইবান্ধায় টোব্যাকো কোম্পানীগুলোর নিজস্ব তত্বাবধানে বিভিন্ন উপকরন সহায়তার মাধ্যমে তামাক চাষ হয়েছে। আমরা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে তামাক চাষকে নিরুৎসাহিত করতে বিভিন্ন সময় উচ্চ ফলনশীল ফসল ফলাতে সভা সেমিনার অব্যাহত রেখেছি। কিন্ত চাষীরা টোব্যাকো কোম্পানী বিভিন্ন নগদ উপকরন সহায়তা পাওয়ায় তারা নিরুউৎসাহিত হওয়া সত্বেও নানা প্রলোভনে পড়ে তামাক চাষ করছে। সে ক্ষেত্রে এসব তামাক চাষীরা যখন ক্ষতির বিষয়গুলো বুঝতে পারবে তখন তামাক চাষ ছেড়ে দিবে। তিনি আরও জানান, ক্ষতিকারক তামাক চাষ এসব এলাকায় করায় জমির উর্বরতা হ্রাস করছে। আবার তামাক চাষের ফলে কৃষকদের মাঝে ছড়িয়ে পড়ছে নানা ধরনের রোগ ব্যাধি।