সোমবার ● ২২ এপ্রিল ২০১৯
প্রথম পাতা » প্রকৃতি ও পরিবেশ » বাসিয়া নদীটি খননের ১ কোটি ৮০ লাখ টাকা ব্যয়ে খনন কাজটি পুরোটাই জলে
বাসিয়া নদীটি খননের ১ কোটি ৮০ লাখ টাকা ব্যয়ে খনন কাজটি পুরোটাই জলে
বিশ্বনাথ প্রতিনিধি :: দীর্ঘদিন আন্দোলনের পর দখল-দূষণে বিপন্ন বহু আলোচিত বিশ্বনাথের বাসিয়া নদীটি খননের ১ কোটি ৮০ লাখ টাকা ব্যয়ে খনন কাজটি পুরোটাই জলে যাচ্ছে। খননের মাটি নদীর পাড়ে রাখায় বৃষ্টির পানিতে মাটিগুলো নদীতে পড়ে ফের ভরাট হচ্ছে বাসিয়া নদী। কিন্তু মাত্র এক সপ্তাহের সময় নিয়ে প্রায় আড়াই মাস অতিবাহিত হলেও খননকৃত মাটি নদীর চর থেকে সরিয়ে নেয়া হয়নি। এমনকি কড়া ভাষায় স্থানীয় সাংবাদিকদের এবিষয়ে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে বিরক্ত না করার কথাও বলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অমিতাভ পরাগ তালুকদার। আর এখন দায় এড়াতে ব্যস্ত প্রশাসনের এই শীর্ষ কর্মকর্তা।
জানা গেছে, বাসিয়া নদীটি খননের জন্য ২০১৬-২০১৭ অর্থ বছরে জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ডের অর্থায়নে বিশ্বনাথ এলাকায় ৭ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের ‘বাসিয়া নদী পুনঃখনন প্রকল্প’ বাস্তবায়নের কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়। ১ কোটি ৮০ লাখ টাকার এই খনন কাজটি ইতোপূর্বে ৩বারে খনন কাজ সম্পন্ন হয়েছে। নদীর উত্তর তীর হতে দক্ষিণ তীরে ফিতা দিয়ে মেপে ৩৩মিটার (১শত ৯ফুট) সীমানা নির্ধারণ করা হলেও তিনবারই সঠিক মাপে খনন হয়নি বলে অভিযোগ উঠে। খননের নামে ঘাস চাটাইয়ের এবং নদী তীরের বিশাল সব গাছ কাটার অভিযোগও উঠে। নদীর দু’তীরের ১৮৭ জন অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের উচ্ছেদ মামলার (নং-৪/২০১৭-বিশ্বনাথ) প্রেক্ষিতে কয়েকজন দখলদারদের দায়ের করা হাইকোর্টের রিট পিটিশনের কারণে দু’দফা খনন কাজের সময় বহাল থাকে অবৈধ স্থাপনাগুলোও। তৃতীয় দফায় খনন কাজ শুরু হলে ফের উঠে অভিযোগ। সঠিক মাপে খনন না করে অপরিকল্পিতভাবে দায়সারা ভাবে কাজ করে নদীর মাটি নদীর পাড়ে রেখেই দখলদারদের দখলের সুযোগ দেয়া হয়। খননের নামে বাসিয়া নদীকে নিয়ে কর্তৃপক্ষের এমন তামাশার কাজে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠে উপজেলাবাসী। গত ১১ফেব্রুয়ারি মাসিক আইন শৃঙ্খলা কমিটির সভায় বাসিয়ার মাটি সরানোর কথা উঠে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের দুই কর্মকর্তা, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সাংবাদিকদের উপস্থিতিতেই ইউএনও অমিতাভ পরাগ এক সপ্তাহের ভেতরে নদী খননের মাটি চর থেকে সরানো হবে বলে কথা দেন এবং কড়া ভাষায় সাংবাদিকদের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে বিরক্ত না করার কথা বলেন। কিন্তু ইউএনও ওই সভায় এক সপ্তাহের সময় নিলেও আড়াই মাস অতিবাহিত হতে চলেছে সেই মাটি এখন পর্যন্ত সরানো হয়নি। বিশ্বনাথের এই শীর্ষ কর্মকর্তার কথায় আর কাজে কোনো মিল পাওয়া যাচ্ছেনা। তিনি উপজেলা পরিষদের গুরুত্বপূর্ণ আইন শৃঙ্খলা কমিটির সভায় নদী খনন কাজের মাটি সরানো কথা দিয়ে কথা রাখেননি। ওই সময় নিজের ঘাড়েই ঠিকাদারের দায়িত্ব নিলেও এখন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কথা শুনছে না বলে তালবাহানা করছেন।
সরেজমিন পরিদর্শনে গেলে পাওয়া যায় এমন অভিযোগের সত্যতা। দেখা যায়, নদীর তীরে রাখা খননের মাটিগুলো বৃষ্টির পানিতে ধসে আবার নদীতেই পড়ছে। ফলে ফের ভরাট হচ্ছে নদীটি। পাশাপাশি ময়লা আবর্জনা আর ঘাস গজিয়ে পুরাতন রুপে রুপান্তরিত হচ্ছে নদীর চর।
এমন দায়সারা খননে ক্ষুব্ধ হয়ে নদী বাচাঁও আন্দোলনকারীরাও এক সপ্তাহের মধ্যে মাটি না সরালে তাঁরা ফের কঠোর আন্দোলনের ডাক দিবেন বলে জানিয়েছেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাচাঁও বাসিয়ার আহবায়ক ফজল খান।
এবিষয়ে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সামছুর রহমান এন্টারপ্রাইজের কাছ থেকে তৃতীয় দফা খনন কাজটি পাওয়া সাধনা এন্টারপ্রাইজের ঠিকাদার বাদল সরকারের সাথে কথা হলে সাংবাদিকদের জানান, বাসিয়ার দুই পাড়ে থাকা দোকানগুলোর জন্য মাটি সরাতে পারছি না। রাস্তা করে দিলে দুএকদিনের মধ্যেই মাটি সরানো হবে। এতে উপজেলা প্রশাসনের কোন সহযোগিতা পাচ্ছিনা।
এব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অমিতাভ পরাগ তালুকদার সাংবাদিকদের বলেন, তিনি এর ভেতরে বেশ কয়েকবার পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাথে কথা বলেছেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি ব্যর্থ বলে দুঃখ প্রকাশ করেন।