বুধবার ● ২৪ এপ্রিল ২০১৯
প্রথম পাতা » খাগড়াছড়ি » মানিকছড়িতে ‘সততা’ ফার্মের অসততার বর্জ্যে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী
মানিকছড়িতে ‘সততা’ ফার্মের অসততার বর্জ্যে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী
খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি :: মানিকছড়ি সদর রাজ বাজারের আধা কিলোমিটার পশ্চিমে উত্তর মাস্টার পাড়া ও পাঞ্চারাম পাড়ায় প্রায় ৬ একর ভূমিতে অপরিকল্পিতভাবে স্থাপিত ‘সততা পোল্ট্রি ফার্ম’-এর বর্জ্যরে দূষণে শতাধিক পরিবারের জীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। ফার্মের দক্ষিণ, পূর্ব ও পশ্চিম পার্শ্বে যত্রতত্র খোলা জায়গায় বয়লারের বর্জ্য, মরা মুরগী অবাধে ফেলায় সেখানকার পরিবেশ বসবাস অযোগ্য হয়ে উঠেছে। সেখানে বসবাসরত শতাধিক পরিবার এবং ইউনিয়ন সড়কে চলাচলরত সকলেই মুখে মাক্স বা কাপড় ব্যবহার করে চলাচল করছেন প্রতিনিয়ত। বর্জ্যের গন্ধে ছোট শিশু-কিশোর ও বয়োবৃদ্ধরা শ্বাস-প্রশ্বাসসহ নানা রোগে কষ্ট পাচ্ছে। স্থানীয়রা পরিবেশ দূষণের প্রতিবাদ করলেও ফার্ম কর্তৃপক্ষ বিষয়টি আমলেই নিচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা। তাদের শেষ আকুতি আমাদেরকে বাঁচতে দিন, অন্যথায় প্রাণ বাঁচাতে ভিটামাটি ছেড়ে পালিয়ে যেতে হবে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সততা ফার্মের চারপাশে খোলা জায়গায় ফার্মের বর্জ্য, মরা মুরগী ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকাসহ অস্বাস্থ্যকর পবিবেশ বিরাজমান। এসব বর্জ্যে মাছি ভনভন করেছে। তাৎক্ষণিক খবর পেয়ে আশেপাশের অন্তত ১৫-২০ জন লোক ঘটনাস্থলে এসে পরিবেশ দূষণের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, এভাবে পরিবেশ দূষণ হতে থাকলে শিশু-কিশোর ও বয়োবৃদ্ধদের নিয়ে বসবাস করা কঠিন। হয়তো এখানে সততা ফার্ম থাক, না হয় আমরা জীবন রক্ষায় অন্যত্র চলে যাওয়া ছাড়া কোন উপায় দেখছি না।
এ সময় সজল কান্তি নাথ, বিষু কান্তি নাথ, আবু তাহের, নুর ইসলাম, রতন কান্তি নাথ, মো.মনির হোসেন অভিযোগ করে বলেন, প্রতিনিয়ত ফার্মের দুষিত বর্জ্যে পরিবেশ বসবাস অযোগ্য হয়ে পড়েছে । এছাড়াও ২/১ দিন পর পর রাতে ময়লার স্তুপ খুলে দিলে যে পরিমাণ গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে তাতে ঘর ছেড়ে রাস্তায় বেড়িয়ে যেতে হয়।
সুনীল কান্তি নাথ বলেন, ফার্মের দূষিত গন্ধে আমার ঘরে বর্তমানে দু’জন রোগি মৃত্যুশয্যায়! এ ব্যাপারে আমি অনেকবার ম্যানেজারকে অবহিত করেও ব্যর্থ হয়েছি। মানিকছড়ি-বাটনাতলী ইউনিয়ন সড়কে চলাচলরত মোটর বাইক চালক সমিতির সভাপতি আবদুল মন্নান অভিযোগ করে বলেন, ফার্মের দূষিত গন্ধে ১ কিলোমিটার সড়কে মোটর সাইকেলের যাত্রীরা মূখে কাপড় চেপে চলাচল করতে হয়।
সততা ফার্মের ম্যানেজার মো. মনির হোসেন স্থানীয়দের আনিত অভিযোগ প্রসঙ্গে বলেন, ফার্মের দুর্গন্ধ যাতে চারিদিকে ছড়িয়ে না পড়ে সে বিষয়ে যথাসাধ্য চেষ্টা করছি। প্রতিনিয়ত বর্জ্যে চুন ছিটানো, ফ্যান ব্যবহার করে বাতাস দেয়াসহ সকল প্রযুক্তি ব্যবহার করছি যাতে পরিবেশ দূষণ না হয়। তারপরও কিছুটা গন্ধ থাকছেই।
সততা ফার্মের সত্বাধিকারী আলহাজ্ব মো. ইকবাল হোসেন মুঠোফোনে এ প্রসঙ্গে বলেন, বাংলাদেশের পরিবেশে (ঘনবসতি) বিদেশের ন্যায় শতভাগ পরিশুদ্ধ পরিবেশে পোল্ট্রি ফার্ম পরিচালনা করা কঠিন। তবে পরিবেশ রক্ষার বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে যথাসাধ্য চেষ্টা করে ফার্র্ম পরিচালনা করছি। বর্জ্য ব্যবহার করে বায়োগ্যাস তৈরির কাজ চলছে। পরিবেশ রক্ষায় এতকিছু করার পরও যদি কোন ত্রুটি থাকে তাহলে অচিরেই প্রয়োজনী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
খাগড়াছড়ি পরিবেশ সুরক্ষা আন্দোলন-এর সা: সম্পাদক মুহাম্মদ আবু দাউদ বলেন, পোল্ট্রি একটি শিল্প। এই শিল্পের বিকাশের প্রয়োজন যেমন জরুরী, মেনিভাবে এর দূষণ নিয়ন্ত্রণেও পরিবেশ আইন অনুযায়ী প্রশাসনের ব্যবস্থা নেয়া উচিত।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার জাহিদ ইকবাল জানান, তিনি লক্ষ্মীছড়ি উপজেলায় কর্মরত। অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে মানিকছড়ি উপজেলার দায়িত্ব পালন করছেন। তাই বিষয়টি এখনো নজরে আসেনি।
তিনি দাবি করেন, এলাকাবাসী লিখিত অভিযোগ করলে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
খাগড়াছড়িতে ৮৩ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চলছে ঝুঁকিপূর্ন ভবনে পাঠদান
খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি :: খাগড়াছড়ি জেলার নয় উপজেলায় ৮৩ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ন অবস্থায় আছে। ক্লাশরুম সংকটের কারণে জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ন এসব ভবনে এখনো চলছে পাঠদান কার্যক্রম। আহত, নিহতসহ যেকোন দূর্ঘটনার আশংকায় ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক-শিক্ষিকা, অভিভাবক ও পরিচালনা পরিষদের কর্তাব্যক্তিরা। কিন্তু জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ এসব ভবনের সংস্কার বা পুনঃ নির্মানের উদ্যোগ নেই শিক্ষা সংশ্লিষ্টদের।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সুত্রে জানা যায়, খাগড়াছড়ি জেলার ৯টি উপজেলার ৩৮ ইউনিয়নের মধ্যে ৮৩ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে সনাক্ত করা হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ন ভবনগুলোর মধ্যে খাগড়াছড়ি সদর উপজেলায় ২৪টি , মাটিরাঙা উপজেলায় ১৮টি, পানছড়ি উপজেলায় ১১টি, মহালছড়ি উপজেলায় ১৫টি, রামগড় উপজেলায় ৭টি, লক্ষীছড়ি উপজেলায় ৪টি, দীঘিনালা উপজেলায় ৫টি এবং মানিকছড়ি উপজেলায় ১০টি প্রাথমিক বিদ্যালয় জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ন অবস্থায় রয়েছে।
খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার কমলছড়িমুখ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ সিরাজুল ইসলাম বলেন তার ক্লাশ সংকটের কারণে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে প্রথম, তৃতীয় শ্রেণিসহ অফিস কক্ষ রয়েছে। দুই শ্রেণিতে ৬০জন শিক্ষার্থী ও ১০জন শিক্ষক তাদের নিয়মিত কার্যক্রম এই ভবন থেকে পরিচালনা করে আসছে। গত ১০ বছরে একাধিক পত্র লিখেও কোন সমাধান আসেনি।
”মৃত্যুর আশংকা নিয়ে ক্লাশে যেমন ছাত্রছাত্রীরা, তেমনি অফিসে শিক্ষক শিক্ষিকাগণ। আশংকা মাথায় নিয়ে না হয় পাঠদান, না হয় প্রকৃত শিক্ষা, এই দুরাব্স্থা থেকে নিরাপদ পাঠদানের জন্য শিক্ষা মন্ত্রনালয় ও খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
খাগড়াছড়ি জেলা শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক নুরুল আবছার বলেন অনেক বিদ্যালয় কয়েক বছর আগে জাতীয়করণের আওতায় এসেছে। ফলে অনেক স্কুলই এখনো পাকা বিল্ডিং পায়নি। বেশিরভাগ স্কুল টিনশেড। এসব বিদ্যালয়ের পাশাপাশি অনেক পাকা বিল্ডিংও ঝুঁকিপূর্ন। আশংকা ও আতংকের মধ্যে মানসম্মত পাঠদান হয়না উল্লেখ করে তিনি এগুলো দ্রুত পুণঃ নির্মাণের দাবী জানান।
মাটিরাঙা উপজেলা শিক্ষা অফিসার কৃষ্ণ লাল দেবনাথ বলেন মাটিরাঙা উপজেলার ইউএনডিপি কর্তৃক পরিচালিত স্কুল, যেগুলো জাতীয়করণের আওতায় আনা হয়েছে, সেগুলোর বেশিরভাগ স্কুল ঝরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ। বেশিরভাগ স্কুলই টিনশেড ও বাঁশের বেড়ার তৈরি। ঝুঁকিপূর্ন ঘোষণা করা হলেও এখন পর্যন্ত সেগুলো ব্যবহার করা হচ্ছে। আতংক ও আশংকা থাকলেও স্থানীয়ভাবে বাঁশ-কাঠ দিয়ে কোন রকম চালানো হচ্ছে শ্রেণি কার্যক্রম। তাছাড়া ঝুঁকিপূর্ন ১৮ স্কুলের মেরামতের জন্য ৪০ হাজার টাকা করে বরাদ্ধ দিয়েছে মন্ত্রণালয়। আগামী সপ্তাহের মধ্যে বরাদ্ধকৃত টাকা সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়গুলোতে পৌঁছানো হবে। তাছাড়া যেসব স্কুল পাকা কিন্তু সংস্কার প্রয়োজন এমন ১৬টি স্কুলের জন্য দেড় লক্ষ টাকা করে বরাদ্ধ দেওয়া হয়েছে। এসব টাকাও পর্যায়ক্রমে দেওয়া হবে। তবে ঝুঁকিপূর্ণ ও জরাজীর্ন সব বিদ্যালয় পূনঃ নির্মান করতে হবে বলে মনে করেন তিনি।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ফাতেমা মেহের ইয়াসমিন বলেন তিনি বিগত ২৭ নভেম্বর ২০১৮ তারিখে জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ন ভবনগুলোর তালিকা তৈরি করে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের নিকট চিঠি পাঠান। সেই চিঠির কপি একই অধিদপ্তরের পরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) এর নিকট পাঠানো হলেও এখন পর্যন্ত ভবনগুলোর বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত পাওয়া যায়নি। ঝুঁকিপূর্ন এসব ভবন সংস্কার অথবা পুণঃ নির্মাণের জন্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্টদের সাথে আলাপ আলোচনা অব্যাহত আছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কংজরী চৌধুরী বলেন, তিনি মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছেন। যদি ভালো সাড়া না পান তবে পার্বত্য জেলা পরিষদ ছোট ছোট স্কিমের মাধ্যমে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো ভেংগে নতুন ভবন তৈরি করবে। বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষা বান্ধব পরিবেশ সৃষ্টির মাধ্যমে প্রাথমিক শিক্ষাকে আরো জনবান্ধব করা হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
খাগড়াছড়িতে কোটি টাকা উৎকোচের বিনিময়ে ৮১ গুচ্ছগ্রামে প্রকল্প চেয়ারম্যানের নাম প্রস্তাবের অভিযোগ
খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি :: খাগড়াছড়ির ৯ট উপজেলার ৮১ বাঙালি গুচ্ছগ্রামে প্রকল্প চেয়ারম্যান নিয়োগে উৎকোচের বিনিময়ে নাম প্রস্তাবের অভিযোগ উঠেছে। উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি/সম্পাদকসহ শীর্ষ নেতারা একেকটি প্রকল্প চেয়ারম্যানের নাম প্রস্তাবের বিপরীতে চেয়ারম্যান প্রতি কয়েক লক্ষ টাকা করে হাতিয়ে নিয়েছেন।
ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষ কয়েক নেতা ও প্রশাসনের উর্ধ্বন কর্মকর্তাদের নাম ভাঙ্গিয়ে ক্ষমতাসীন দলের অনেক নেতা ঘুষ বাণিজ্যে জড়িত রয়েছেন। ইতোমধ্যে প্রকল্প চেয়ারম্যানের নাম প্রস্তাব নিয়ে বেশ কয়েকটি উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি ও সম্পাদকের মধ্যে দূরত্ব তৈরী হয়েছে। নিজেদের নিয়ন্ত্রিত ব্যক্তি বা সুবিধা গ্রহণকারীদের নাম প্রস্তাব নিয়ে এ দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে।
খাগড়াছড়ি জেলার তথ্য বাতায়নের তথ্যমতে, ৯ উপজেলার ৮১ গুচ্ছগ্রামে (বাঙালি) ২৬ হাজার ২ শত ২০ পরিবার কার্ডের আওতায় রয়েছে। পার্বত্য শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরের পূর্বে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে খাগড়াছড়িতে পুনর্বাসনকৃত পরিবার নিয়ে গুচ্ছগ্রাম। প্রতি মাসে তাদের কার্ড প্রতি চাল ও গম দিয়ে আসছে সরকার। যা বিতরণের জন্য প্রতি দুইবছর অন্তর অন্তর প্রকল্প চেয়ারম্যান নিয়োগ করা হয়। নীতিমালা অনুসারে গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দা, সংশ্লিষ্ট গুচ্ছগ্রামের জনপ্রতিনিধিদের অগ্রাধিকার দেওয়ার নিয়ম থাকলেও তা অনুসরণ না করে উপজেলা আওয়ামীলীগের শীর্ষ নেতারা টাকার বিনিময়ে চেয়ারম্যানের জন্য উচ্চ পর্যায়ে নাম প্রস্তাব দিচ্ছে। এতে করে মাঠপর্যায়ে বাড়ছে অস্থিরতা ও দুর্নীতির মাত্রা।
পানছড়ির ১২ গুচ্ছগ্রামে প্রকল্প চেয়ারম্যান নিয়োগে উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরার কাছে দুইটি তালিকা জমা দিয়েছে। যার অধিকাংশ নেতাকর্মীদের স্বজন ও টাকার বিনিময়ে নাম প্রস্তাবকারী। একই অবস্থা মহালছড়ি, দীঘিনালা, মাটিরাঙা, মানিকছড়িসহ সবক’টি গুচ্ছগ্রামে। গুচ্ছগ্রামের আকারভেদে তিন লক্ষ টাকা থেকে আট লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ রয়েছে উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি ও সা: সম্পাদকদের বিরুদ্ধে।
এ বিষয়ে পানছড়ি উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক জয়নাথ দেব জানান, উপজেলা সভাপতি বাহার মিয়া নিজের আত্মীয় স্বজন ও কিছু মানুষের কাছ থেকে টাকা নিয়ে নাম প্রস্তাব করছে। ত্যাগীরা বাদ পড়ায় আমরা আরেকটি তালিকা দিয়েছি।
পানছড়ি উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি বাহার মিয়া জানান, জয়নাথ দেব উপজেলা আওয়ামীলীগ ও সহযোগী সংগঠনের কিছু নেতাদের নিয়ে টাকার বিনিময়ে প্রকল্প চেয়ারম্যানের নাম প্রস্তাব করেছেন। আমি বিষয়টি এমপিকে জানানোর পর তিনি আমাকে আরেকটি তালিকা দিতে বললে আমি ১২ জনের নাম প্রস্তাব করি। তাদের মধ্যে কয়েকজন আমার আত্মীয় থাকতে পারে তবে তা নীতিমালা অনুসরণ করে দেওয়া হয়েছে। টাকা নেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে তিনি বলেন, টাকা ছাড়া কোন বার প্রকল্প চেয়ারম্যান নিয়োগ হয়নি। প্রশাসন ও এমপি স্যারের জন্য কিছু খরচের টাকা নেওয়া হয়।
পার্বত্য অধিকার ফোরামের কেন্দ্রীয় সভাপতি মাঈন উদ্দিন জানান, ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের পুনর্বাসন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে গুচ্ছগ্রামের প্রকল্প চেয়ারম্যানের পদটি। যার প্রভাব পড়ছে নিরহ মানুষদের ওপর। নিয়োগের সময় দেওয়া অর্থ তুলতে ওজনে কম দেওয়ার পাশাপাশি কার্ডধারীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ নেওয়া হয়। তা বন্ধে গুচ্ছগ্রাম ভিত্তিক প্রতিনিধি নির্বাচনের মাধ্যমে প্রকল্প চেয়ারম্যান নিয়োগ হলেও সচ্ছতা ফিরতে পারে।
তবে খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক মো: শহিদুল ইসলাম জানান, সরকারি নিয়ম অনুযায়ী এখন পর্যন্ত প্রকল্প চেয়ারম্যান পরিবর্তনের কোন প্রক্রিয়াই শুরু হয়নি। এর আগে কেউ যদি প্রশাসন বা অন্য কারো নাম ভাঙ্গিয়ে কিছু অনিয়ম করে থাকেন এমন অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তিনি দৃঢ়তার সাথে দাবি করেন, বাঙালি গুচ্ছগ্রামের প্রকল্প চেয়ারম্যান পরিবর্তনের একটি সরকারি নীতিমালা রয়েছে। নীতিমালার বাইরে কারো নাম প্রস্তাব করা হলেও সেটি খতিয়ে দেখেই প্রশাসন প্রকল্প চেয়ারম্যান নিয়োগ করবে।
দীঘিনালায় কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত পানি শোধানাগার কেন্দ্র চালু হয়নি এক দশকেও
খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি :: খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলা সদরে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের লক্ষে ৯৭ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত পানি শোধানাগার কেন্দ্রটি চালু হয়নি এক দশকে। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর-এর উদ্যোগে নির্মিত শোধানাগারটি নির্মাণকালীন সময় থেকেই কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন উঠায় অনেকটা কাজ অসমাপ্ত রেখেই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে বিল পরিশোধ করার অভিযোগ রয়েছে। শুধু তাই নয়, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের পক্ষে শোধনাগারটি যথাসময়ে যথাযথ তদারকি, রক্ষণাবেক্ষন এবং সংস্কার না করায় কেন্দ্রটি অনেকটা পরিত্যক্ত প্রতিষ্ঠানের রুপ পেয়েছে।
নির্মাণের এক দশক পরও কেন্দ্রটি চালু না হওয়ায় বিশুদ্ধ পানি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন উপজেলা সদরের প্রায় ৩০ হাজার বাসিন্দা। দীর্ঘদিনেও শোধানাগারটি চালু না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা।
সরকারি অর্থের এমন অপচয়ের কারণে নষ্ট হয়ে গেছে শোধানাগারের অনেক যন্ত্রাংশ । এজন্য জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের অনিয়ম ও গাফিলতিকে দুষলেন জনপ্রতিনিধিরা। রক্ষনাবেক্ষনের অবহেলার কারণে অনেক যন্ত্রপাতি চুরি হয়ে গেছে। দীর্ঘদিন ব্যবহার না হওয়ায় শ্যাওলা ধরেছে পানি শোধানাগারে পাকা দেয়ালে। এছাড়া পানি শোধানগারটির চারপাশে জরাজীর্ণ অবস্থা।
স্থানীয় বাজার চৌধুরী জেসমিন চাকমা ও ব্যবসায়ী জীবন চৌধুরী উজ্জল বলেন, পার্বত্য এলাকায় বিশুদ্ধ পানির সংকট রয়েছে। বিশুদ্ধ পানির অভাবে এলাকায় পানি বাহিত রোগের প্রকোপ বাড়ছে। পানি শোধানাগার চালু হলে এলাকার মানুষ বিশুদ্ধ পানি পান করত। ’
তাঁরা বলেন, পানি শোধনাগার চালু হলে উপজেলার থানা পাড়া, মাস্টার পাড়া, টিএন্ডটি এবং সরকারি আবাসিক বাসিন্দারা বিশুদ্ধ পানি পেত। বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ না থাকায় দূরবতী নলকূপ থেকে আমাদের পানি সংগ্রহ করতে হয়। সরকারের কোটি টাকা ব্যয়ে পানি শোধানাগার কেন্দ্র চালু না হওয়ায় ক্ষোভ জানিয়েছে জনপ্রতিনিধিরা।
বোয়ালখালী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান চয়ন বিকাশ চাকমা বলেন, জনস্বার্থে পানি শোধানাগার কেন্দ্রটি চালু করা উচিত। পাবলিক হেলথ (জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর) এর অবহেলার কারণে কেন্দ্রটি চালু হয়নি। এতে সরকারের প্রায় কোটি টাকার সম্পদ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে ।
জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে দীর্ঘদিন বিদ্যুতের লো-ভল্টেজের সংকটের কারণে শোধানাগারটি চালু না হবার অজুহাত দেখানো হতো। কিন্তু খাগড়াছড়ি সদরে একবছর আগে ১৩৩/৩২ কেভি গ্রীড সাব-স্টেশন নির্মাণের পর কোথাও বিদ্যুতের কোন সমস্যা ঘুচে গেছে। বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র স্থাপনের পর বিদ্যুতের লো-ভল্টেজের সংকট কেটে গেলেও চালু হয়নি পানি শোধানগারটি। এমনকি নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে শোধনাগারটি সরেজমিনে দেখভাল করার খবরও পাওয়া যায়নি। অথচ নির্মাণ কাজ শেষ করে টাকা তুলে নিয়েছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ।
দীঘিনালা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নবকমল চাকমা বলেন, ‘পানি শোধানগারটি চালু করার জন্য একাধিকবার যোগাযোগ করেছি। বিদ্যুতের লো-ভল্টেজের অজুহাতে কেন্দ্রটি চালু করা যায়নি। তবে বর্তমানে বিদ্যুতের লো-ভল্টেজের সমস্যা নেই । তারপরও কেন্দ্রটি চালু হওয়ার ভালো কোন লক্ষণই নেই। ফলে এলাকার মানুষ বিশুদ্ধ পানি পাচ্ছে না। ’
পানি শোধানাগার কেন্দ্র চালু’র ব্যাপারের দায়সারা আশ্বাস দিলেন জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী।
খাগড়াছড়ি জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর-এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো.সোহরাব হোসেন বলেন, ‘ শোধানাগারটি কেন্দ্রটি চালু করার জন্য ২০০৮ সালে প্রয়োজনীয় অর্থ বিদ্যুৎ বিভাগে জমা দিয়েছি। তবে লো-ভল্টেজের কারণে তা এখনো চালুনি হয়নি। তবে বর্তমানে বিদ্যুতের লো-ভল্টেজের সমস্যা নেই। অর্থ বরাদ্দ পেলে শোধানাগারের কিছু সংস্কার করে আগামী অর্থবছরে এটি চালু করা যেতে পারে। ’
শোধানাগারটি চালু হলে প্রতিদিন ভূগর্ভ থেকে প্রায় দুই লক্ষাধিক লিটার বিশুদ্ধ পানি পাইপে মাধ্যমে গ্রাহকদের সরবরাহ করা যাবে। কেন্দ্রটি চালু হলে উপজেলার বিশ হাজার বাসিন্দা নিরাপদ পানি পাবে।
খাগড়াছড়িতে জাতীয় পুষ্টি সপ্তাহ উপলক্ষে বর্নাঢ্য র্যালি ও আলোচনা সভা
খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি :: “খাদ্যের কথা ভাবলে, পুষ্টির কথাও ভাবুন” প্রতিপাদ্য নিয়ে খাগড়াছড়িতে জেলার পুষ্টি সমন্বয় কমিটি আয়োজনে জাতীয় পুষ্টি সপ্তাহ উপলক্ষে মঙ্গলবার টাউন হল প্রাঙ্গণ থেকে বর্নাঢ্য র্যালি বের হয়ে শহর সড়ক প্রদক্ষিন করে অফিসার ক্লাবের গিয়ে আলোচনা সভায় অনুষ্ঠিত হয়।
আলোচনা সভায় খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক শহিদুল ইসলাম সভাপতিত্বে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, সিভিল সার্জন জনাব মো: ইদ্রিস মিঞা, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এমএম সালাহ উদ্দিন, খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ উচৈসিং ও খাগড়াছড়ি সদর আধুনিক হাসপাতালে আরএমও নয়নময় ত্রিপুরা এবং সিনিয়র স্বাস্থ্য শিক্ষা কর্মকর্তা মেমং মারমা উপস্থিত ছিলেন।
খাগড়াছড়ি সিভিল সার্জন জনাব মো: ইদ্রিস মিঞা বক্তব্যে বলেন, জাতীয় পুষ্টি সপ্তাহ ২৩ থেকে ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত জেলার নয়টি উপজেলার উপজেলা ভিত্তিক জাতীয় পুষ্টি সপ্তাহ পালন করা হবে। তিনি আরো বলেন খাগড়াছড়ি পাহাড়ী এলাকায় যথেষ্ট আয়োডিন যুক্ত পানি রয়েছে। পানি পান করে নারী ও পুুরুষ আয়োডিন পাচ্ছে। দেশের প্রতিটি নাগরিককে সম্পদ হিসেবে গড়ে তুলতে নারী-পুরুষ ও শিশুদের জন্য মান সম্পন্ন পুষ্টি নিশ্চত করা জরুরি। এজন্য খাদ্যের সঙ্গে পুষ্টির কথা ভাবতে হবে।
জেলা প্রশাসক শহিদুল ইসলাম বক্তব্যে বলেন, প্রতিটি খাবার পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা আছে কিনা দেখে খাবার খেতে হবে। মানুষের খাবার প্রতি সচেতনতায় বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই বর্তমানে দেশে পুষ্টিহীনতায় শিশু ও মাতৃ মৃত্যু হার কমেছে। তবে এখনোও দূর্গম পাহাড়ী এলাকায় পুষ্টি খাবারে সচেতনতায় অভাব রয়েছে। সে সব এলাকায় দায়িত্ব প্রাপ্ত মাঠ কর্মকর্তারা গ্রামে গিয়ে উঠান বৈঠক মাধ্যমে সচেতনতা বিষয়ে বেশী করে আলোচনা করতে হবে বলে বলেন।
খাগড়াছড়িতে হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট’র তিন দিনের বুুনিয়াদী প্রশিক্ষণ শুরু
খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি :: খাগড়াছড়ি জেলা কার্যালয় আয়োজনে মঙ্গলবার হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট-এর উদ্যোগে মন্দিরভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম- ৫ম পর্যায়ের তিনদিন ব্যাপী বুুনিয়াদী প্রশিক্ষণ উদ্বোধন করেছেন খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক শহিদুল ইসলাম।
ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সহকারী প্রকল্প পরিচালক মো: জাহাঙ্গীর হোসাইন-এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক শহিদুল ইসলাম।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদ সদস্য নির্মলেন্দু চৌধুরী, জেলা পূজা উদযাপন পরিষদ খাগড়াছড়ি সাধারণ সম্পাদক ও সাংবাদিক তরুণ কুমার ভট্টাচার্য্য, জন্মাষ্টমী উদযাপন পরিষদ-জেলা শাখার সভাপতি তপন কান্তি দে ফিল্ড সুপারভাইজার দেবব্রত কানাজী এবং লক্ষ্মী নারায়ন মন্দির পরিচালনা কমিটি সাধারণ সম্পাদক নির্মল দে সহ রাঙামাটি ও খাগড়াড়ি জেলার সকল মন্দির ভিত্তিক শিক্ষকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রালয় অধীনে মন্দিরভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম- ৫ম পর্যায় শীর্ষক প্রকল্পের হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট’র বাস্তবায়নে প্রকল্পটি গত পহেলা জুলাই,২০১৭খ্রি: শুরু হয়ে আগামী ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে। প্রকল্পের মাধ্যমে প্রাক- প্রাথমিক, বয়স্ক ও গীতা শিক্ষা কার্যক্রমে শিক্ষার্থীদের বিনা মূল্যে বই,খাতা, কলম, রাবার, পেন্সিল, আট পেপারসহ বিভিন্ন ধরনের শিক্ষা উপকরন দিয়ে মন্দিরভিত্তিক শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে।
প্রশিক্ষণে রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি বিভিন্ন উপজেলা থেকে মন্দির ভিত্তিক প্রাক- প্রাথমিক শিক্ষক ৪৪ জন, বয়স্ক শিক্ষা ৪জন, গীতা শিক্ষা ৬ জন শিক্ষকগণ তিনদিন ব্যাপী বুনিয়াদী প্রশিক্ষণের অংশগ্রহন করেন।