সোমবার ● ২৯ এপ্রিল ২০১৯
প্রথম পাতা » ঢাকা » রোযা অবস্থায় ইনজেকশন, স্যালাইন নিলে রোযা ভঙ্গ হয়ে যাবে
রোযা অবস্থায় ইনজেকশন, স্যালাইন নিলে রোযা ভঙ্গ হয়ে যাবে
সম্মানিত শরীয়ত উনার ফায়সালা অনুযায়ী, রোযা অবস্থায় ইনজেকশন, ইনহেলার, স্যালাইন ইত্যাদি নিলে রোযা ভঙ্গ হয়ে যাবে। রোযা ভঙ্গ না হওয়ার দাবি সম্পূর্ণ মিথ্যা। একইভাবে সারা বিশ্বে একইদিনে রোজা শুরু বা ঈদ পালন করার দাবিও মিথ্যা ও সম্মানিত শরীয়ত বিরোধী। এছাড়া সরকারীভাবে ভূল তারিখে পবিত্র শা’বান মাস শুরু করায় চাঁদের তারিখ নাসী করাসহ এবার সৌদি আরবের সাথে বাংলাদেশের দুই দিন এবং ভারতের সাথে এক দিন পার্থক্য তৈরী হয়েছে। তাই আসন্ন রমাদ্বান শরীফ মাসের চাঁদ অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে তালাশ করে সঠিক তারিখে শুরু করতে হবে।
আজ রবিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের আকরাম খাঁ হলে ‘মাজলিসু রুই্য়াতিল হিলাল’ এর উদ্যোগে “পবিত্র রমাদ্বান শরীফ মাসের পবিত্র চাঁদ দেখার গুরুত্ব এবং রোযা অবস্থায় ইনজেকশন, ইনহেলার, স্যালাইন ইত্যাদি নেয়া রোযা ভঙ্গের কারণ” শীর্ষক এক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। সেমিনারে গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন, বিশিষ্ট চাঁদ গবেষক ও ফার্মাসিষ্ট এবিএম রুহুল হাসান এবং দৈনিক আল ইহসান ও মাসিক আল বাইয়্যিনাত পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক মুফতিয়ে আ’যম আল্লামা আবুল খায়ের মুহম্মদ আযীযুল্লাহ।
সেমিনারে আলোচকরা বলেন, সম্মানিত শরীয়তের দৃষ্টিতে রোযা অবস্থায় পাকস্থলী বা মগজে কিছু প্রবেশ করলেই রোযা ভঙ্গ হয়ে যাবে; তা যেভাবে এবং যে স্থান দিয়েই প্রবেশ করুক না কেন। একইভাবে সম্মানিত শরীয়ত অনুযায়ী আকাশে খালি চোখে চাঁদ দেখে আরবী মাস শুরু করতে হয়। তাই পৃথিবীর কোথাও চাঁদ দেখা গেলে তা সেই দেশ বা সে মাতলার জন্য প্রযোজ্য। সারা বিশ্বের জন্য নয়। এর বিপরীত দাবি নব্য ভ্রান্তবাদীদের দাবি।
রোযা অবস্থায় ইনজেকশন, স্যালাইন নেয়া প্রসঙ্গে আলোচকরা বলেন, স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক তিনি অসুস্থ ব্যক্তির জন্য রোযার পরে ক্বাযা আদায় অথবা ফিদিয়া দেয়ার ব্যবস্থা রেখেছেন, সেখানে একশ্রেণীর কথিত মুফতি ও অজ্ঞ ডাক্তার ষড়যন্ত্রমূলকভাবে দাবি করেছে, রোযা অবস্থায় ইনজেকশন, স্যালাইন, ইনহেলার নিলে রোযা ভঙ্গ হবে না। যা সম্পূর্ণ ভূল ও কবীরা গুণাহের কারণ।
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে স্পষ্ট বর্ণিত রয়েছে, “উম্মুল মু’মিনীন হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন নিশ্চয়ই শরীরের ভিতর কিছু প্রবেশ করলে রোযা ভঙ্গ হবে। কিছু বের হলে ভঙ্গ হবে না।” (আবূ ইয়ালা শরীফ)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার বর্ণনা মুবারক উনার পরিপ্রেক্ষিতে অনুসরণীয় সমস্ত ইমাম, মুজতাহিদ ও ফক্বীহগণ ফতওয়া দিয়েছেন যে, রোযা অবস্থায় ইনজেকশন, ইনুসলিন, ইনহেলার ইত্যাদি নেয়া রোযা ভঙ্গের কারণ। যা ফিক্বাহ’র বিশ্বখ্যাত কিতাব- ফতওয়ায়ে শামী, বাহরুর রায়িক, ফতহুল ক্বাদীর, হিদায়া, আইনুল হিদায়া, জাওহারাতুন নাইয়্যারাহ ইত্যাদি কিতাবে উল্লেখ আছে।
আর চিকিৎসা বিজ্ঞানের মতে, যে কোন পদ্ধতিতেই ইনজেকশন নেওয়া হোক না কেন, ইনজেকশনের ওষুধ কিছু সময়ের মধ্যে রক্তস্রোতে মিশে যায়, রক্ত এমন একটি মাধ্যম, যার সাথে সরাসরি শরীরের প্রত্যেকটি কোষ (Cell) ও কলা (Tissue)-এর সংযোগ রয়েছে। ফলে তা সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে এবং রক্তের মাধ্যমে তা কয়েক মিনিটের মধ্যে মগজে পৌঁছে যায়। এ ব্যাপারে Goodman Gilman Pharmacology- তে বলা হয়েছে -“Heart, liver, kidney, brain and other highly perfused organs receive most of the drug during the first few minutes after absorption.”
অর্থাৎ ওষুধের শোষণের কয়েক মিনিটের মধ্যেই হৃৎপিন্ড, যকৃৎ, কিডনী, মগজ এবং অন্যান্য অঙ্গে বেশীরভাগ ওষুধ চলে যায়। আর শরীয়তের বিধান হলো, রোযা অবস্থায় পাকস্থলী বা মগজে কিছু প্রবেশ করলেই রোযা ভঙ্গ হয়ে যাবে; তা যেভাবে এবং যে স্থান দিয়েই প্রবেশ করুক না কেন।
সারা বিশ্বে একইদিনে রোজা শুরু বা ঈদ পালন করার দাবির প্রসঙ্গে বক্তারা বলেন, সারা বিশ্বে একইদিনে রোজা শুরু বা ঈদ পালন করার দাবি করা সম্মানিত শরীয়ত উনার বিরোধী। সউদি আরব পবিত্র কুরআন শরীফ ও হাদীস শরীফ অনুসরণ না করে এবং খালি চোখে চাঁদ না দেখে ‘উম্মুল কুরা’র মনগড়া নিয়ম ব্যবহার করে আরবী মাসের তারিখ ঘোষণা করায় বা তারিখ হেরফের করায় মুসলমানদের ফরজ ইবাদত হজ্জ, রোজাসহ অন্যান্য ইবাদত বন্দেগী বাতিল হচ্ছে। সারাবিশ্বে যারা তাদের অনুসরণ করছে তারাও ফরজ ইবাদত বন্দেগী নষ্ট করছে।
আলোচকগণ বলেন, সম্মানিত শরীয়ত অনুযায়ী আকাশে খালি চোখে চাঁদ দেখে আরবী মাস শুরু করতে হয় এবং সেই ১৪৩৯ বছর ধরেই এই নিয়ম মুসলিম বিশ্বে পালিত হচ্ছে। কিন্তু বর্তমানে কিছু ভ্রান্তবাদী সংগঠন বিভিন্ন ক্রাইটেরিয়া ব্যবহার করে বা পৃথিবীর কোথাও চাঁদ দেখা গেলে তা সারা বিশ্বের জন্য প্রযোজ্য ধরে আরবী মাস শুরু করার জন্য দাবী জানিয়ে আসছে। কিন্তু পবিত্র দ্বীন ইসলামে দলীল হচ্ছে পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীস শরীফ, ইজমা ও কিয়াস। এর বাহিরে কেউ কোন দাবি করলেও তা গ্রহণযোগ্য নয়। তাছাড়া যুগযুগ ধরে সউদি আরব খালি চোখে চাঁদ না দেখে উম্মুল কুরার মনগড়া নিয়ম ব্যবহার করে আরবী মাসের তারিখ ঘোষণা করায় বাংলাদেশের চেয়ে এক বা দুইদিন আগে মাস শুরু করছে। বিগত অনেক বছরের সউদী আরবের চাঁদ দেখার রিপোর্টে তার প্রমাণ রয়েছে। এই মনগড়া নিয়ম ব্যবহার করে এভাবে চাঁদ না দেখে একদিন বা দুইদিন পূর্বে পবিত্র যিলহজ্জ মাস গণনা শুরু করলে অকুফে আরাফা অনুষ্ঠিত হয় ৭ই যিলহজ্জ বা ৮ই যিলহজ্জ তারিখে। অথচ ৯ যিলহজ্জ এর পরিবর্তে এসব দিনে আরাফার ময়দানে অবস্থান করলে অকুফে আরাফার ফরয বাতিল হবার পাশাপাশি আরও অনেক ওয়াজিব আমল বাতিল হয়ে যায়। এমতাবস্থায় চাঁদের তারিখ হেরফের করার কারণে যেকোন দেশের জন্য সউদি আরবকে অনুসরণ করা সম্মানিত শরীয়ত উনার বিরোধী।
সেমিনারে বক্তারা বলেন, সারাবিশ্বে যারা একদিনে রোযা রাখা এবং একদিনে ঈদ করার কথা বলে থাকে, সামান্যতম ভৌগোলিক জ্ঞানও তাদের নেই। কেননা, পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তের সময়ের পার্থক্য হচ্ছে ১২ ঘণ্টা। পৃথিবীর এক প্রান্তে যখন দিন, তখন অন্য প্রান্তে পূর্ব বা পরের দিন অথবা রাত। কাজেই সেখানে তখন চাঁদ দেখার প্রশ্নই আসে না। তাহলে কি করে একদিনে সারাবিশ্বে রোযা রাখা বা ঈদ করা যেতে পারে? এটা মূলতঃ নেহায়েত অজ্ঞতা ও জিহালতপূর্ণ কথা।
সুতরাং সকলের উচিত কোন নির্দিষ্ট দেশের নিয়ম অনুসরণ না করে পবিত্র কুরআন শরীফ ও হাদীস শরীফ অনুযায়ী খালি চোখে চাঁদ দেখে আরবী মাস শুরু করা এবং যেখানে সম্মানিত শরীয়তে অসুস্থ ব্যক্তির জন্য রোযার পরে ক্বাযা আদায় অথবা ফিদিয়া দেয়ার ব্যবস্থা রয়েছে, সেখানে রোযা অবস্থায় ইনজেকশন, স্যালাইন, ইনহেলার ইত্যাদি না নিয়ে ফরজ রোযা ভঙ্গের গুনাহ থেকে বেচেঁ থাকা।