মঙ্গলবার ● ৩০ এপ্রিল ২০১৯
প্রথম পাতা » ঢাকা বিভাগ » সিংগাইরে পাওয়ার প্ল্যান্ট নির্মাণ কাজ নিয়ে চলছে আ’লীগের দু`গ্রুপের ক্ষমতার লড়াই
সিংগাইরে পাওয়ার প্ল্যান্ট নির্মাণ কাজ নিয়ে চলছে আ’লীগের দু`গ্রুপের ক্ষমতার লড়াই
মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি ::মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার জামির্ত্তা ইউনিয়নের বিন্নাডাঙ্গী এলাকার সুদক্ষিরা মৌজায় আবারো শুরু হয়েছে নদী দখল। সম্প্রতি উচ্চ আদালতের নির্দেশে ধল্লা মৌজা হতে সরে গিয়ে ডরিন কোম্পানী আবারো ভাষা শহীদ রফিক সেতুর দক্ষিণ পাশে নদীর ভেতর দিয়ে রাস্তা নির্মাণ করছে। সেই সাথে ওই এলাকায় আবাসিক ও ফসলি জমিতে নর্দাণ পাওয়ার প্ল্যান্ট নির্মাণ কাজ এগিয়ে চলছে। এদিকে প্রতিবাদমুখর এলাকাবাসী বিভিন্ন দফতরে লিখিত অভিযোগ ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন। আর এই পাওয়া প্লানকে কেন্দ্র করে স্থানীয় চেয়ারম্যান ও মেম্বার গ্রুপ মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছেন।
গত রবিবার সরেজমিন জানা যায়, নর্দাণ পাওয়ার প্ল্যান্টের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন জামির্ত্তা ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল হালিম রাজু। অপরদিকে, নদী দখল ও আবাসিক এলাকা এবং ফসলি জমি রক্ষায় প্রতিবাদমুখর এলাকাবাসীর পক্ষে নেতৃত্ব দিচ্ছেন ১নং ওয়ার্ডের শাহজাহান মেম্বার। বিপরীতমুখী জনপ্রতিনিধিদ্বয় উপজেলা আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল পদে রয়েছেন বলে জানা গেছে।
এলাকাবাসী জানান, উভয়ই যার যার অবস্থান থেকে শক্তির জানান দিচ্ছেন। চলছে অস্ত্র মহড়া, আতংকিত সাধারন জনগণ।
শনিবার পাওয়ার প্ল্যান্টের পক্ষে দু‘শতাধিক লোক নিয়ে দেশীয় অস্ত্র হাতে নিয়ে মহড়া দেন রাজু চেয়ারম্যান। এর আগে গত বুধবার শাহজাহান মেম্বারের নেতৃত্বে এলাকাবাসী নদী দখল ও পরিবেশ দূষণের অভিযোগ এনে নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেন। এ নিয়ে এলাকায় ক্রমশই উত্তেজনা বাড়ছে। ভীত সন্ত্রস্থ হয়ে পড়েছেন স্থানীয় লোকজন।
বিন্নাডাঙ্গী গ্রামের সফিকুল ইসলাম বলেন, শাহজাহান মেম্বার নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দিলে রাজু চেয়ারম্যান তার লোকজন নিয়ে এসে কাজ শুরু করে এবং অস্ত্র মহড়া দেয়। তিনি আরো বলেন, এ সময় ফাঁকা গুলি ও ছোঁড়া হয়। সেই সাথে উপস্থিত লোকজনের মধ্যে গামছা বিতরণ শেষে খিচুরি ভোজ হয়।
স্থানীয় ফেলু খান (৭২) অভিযোগ করে বলেন, পাওয়ার প্ল্যান্টের পক্ষে রাজু চেয়ারম্যান গত শনিবার লোকজন নিয়ে ৪-৫ রাউন্ড গুলি বর্ষণ করেছে। এতে আমরা আতংকের মধ্যে আছি। শাহজাহান মেম্বার বলেন, রাজু চেয়ারম্যান একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তারের জন্য দেড় দু‘শ লোক নিয়ে মাথায় গামছা বেঁধে অত্যাধুনিক অস্ত্র নিয়ে মহড়া দিয়েছে। ঘটনাস্থলে ১০-১৫ রাউন্ড গুলি ছোঁড়া হয়েছে বলে তিনি অভিযোগ করেন। তাছাড়া নিরীহ কিছু লোকজনের জায়গা পাওয়ার প্ল্যান্ট জোরপূর্বক দখল করেছে।
তবে চেয়ারম্যান আব্দুল হালিম রাজু জানান ভিন্ন কথা, তিনি দাবী করে বলেন, আমার চুক্তি নেয়া কাজে শাহজাহান মেম্বার ও তার লোকজন চাঁদা দাবী এবং শ্রমিকদের মারধর করে বন্ধ করে দিয়েছিল। আমি লোকজন নিয়ে পুনরায় কাজ চালু করেছি। কোনো গুলি বর্ষণের ঘটনা ঘটেনি।
এদিকে সিংগাইর থানার ওসি খোন্দকার ইমাম হোসেন বলেন, কাজ ভাগাভাগি নিয়ে দু‘গ্রুপের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছে বলে পাওয়ার প্ল্যান্টের মালিক পক্ষ আমাকে জানিয়েছেন। সে অনুযায়ী পুলিশ পাঠানো হয়েছিল। গুলি বর্ষণের ঘটনা আমার জানা নেই।
নর্দাণ পাওয়ারের সিইও মোস্তফা মঈন নিরীহ লোকের জায়গা দখল ও দু‘গ্রুপের উত্তেজনার কথা অস্বীকার করে বলেন, মালামাল বহনের জন্য সাময়িক অনুমতি নিয়ে নদীর কিছু জায়গা রাস্তা হিসেবে ব্যবহার করছি।
সিংগাইর উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) মো. হামিদুর রহমান বলেন, ধলেশ্বরী নদী দখল করে নর্দাণ পাওয়ার প্ল্যান্টের রাস্তা নির্মাণে বাধা দেয়া হয়েছে। তবে তারা বিআইডব্লিওটিএ থেকে মালামাল বহনের জন্য ৬ মাসের অনুমতি নিয়েছেন। সেটা আইনসিদ্ধ কিনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
এ ব্যাপারে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের সার্বক্ষণিক সদস্য মো. আলাউদ্দিন বলেন, কোনোভাবেই নদীর জায়গা দখল করে রাস্তা নির্মাণ করা যাবে না। ধলেশ্বরী নদীর ওই স্থানটি বিআইডব্লিটিএ কখনো শাসন কিংবা রক্ষণাবেক্ষণ করে না। তাই তারা নদীতে রাস্তা নির্মাণের অনুমতি দিতে পারে না। তিনি আরো বলেন, যদি এ রকম কোনো ঘটনা ঘটে থাকে তাহলে নদী কমিশনের পক্ষ থেকে খতিয়ে দেখা হবে।