মঙ্গলবার ● ৩০ এপ্রিল ২০১৯
প্রথম পাতা » পাবনা » দখল দূষণে অস্তিত্ব সংকটে বড়াল নদী
দখল দূষণে অস্তিত্ব সংকটে বড়াল নদী
চাটমোহর (পাবনা) প্রতিনিধি :: পাবনার চাটমোহরের বুকচিরে প্রবাহিত হয়েছে বড়াল নদী। দখল ও দূষণে ধুঁকছে দেশের অন্যতম নদী বড়াল। মারাত্মক সব কেমিক্যাল বর্জ্যে অনেক আগেই দূষিত হয়েছে এ নদীর পানি। কচুরিপানায় এখন ভরপুর। বাতাসে ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধময় বিষ। নদীর তলদেশে জমাট বেঁধেছে পলিথিনের স্তর আর রকমারি বর্জ্য। সর্বোপরি নদীকে গিলে খাচ্ছে পলিথিন, পোড়া তেল, মবিল, পৌরসভার পয়ঃবর্জ্য, গৃহস্থালী বর্জ্য ও নদীর পাড়ে নির্মিত কাঁচা পায়খানা এবং নদীর পারের বাসা বাড়ীর পাকা পায়খানার পাইপ। বদ্ধ জলাশয়ে পরিণত হয়েছে নদীটি। এদিকে দূষণের পাশাপাশি বাড়ছে নদী দখলের ঘটনাও। আদালতের রায় উপক্ষা করে প্রতিদিনই নদীর কোনো না কোনো স্থান ভরাট করা হচ্ছে।
বড়াল রক্ষা আন্দোলন কমিটির সদস্য সচিব এস,এম মিজানুর রহমান সিএইচটি মিডিয়া প্রতিনিধিকে বলেন, নদীর উভয় তীরে এখনো কাঁচা-পাকা কয়েক’শ অবৈধ স্থাপনা রয়েছে। যা উচ্ছেদ করা জরুরি। হাসপাতাল বর্জ্য ফেলা হচ্ছে বড়ালে। পৌরসভার ড্রেন দিয়ে বর্জ্য যাচ্ছে নদীতে। গরু মহিষের কষাইরা গরু মহিষ যবাই করে তার বর্জ্য পেলছে নদীতে। নদীতে ফেলা হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের আবর্জনা। চাটমোহর পৌরসভার বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় বিরাজ করছে নানারকম অব্যবস্থাপনা। ময়লা এসে সরাসরি মিশে যাচ্ছে বড়াল নদীর পানিতে।
বড়ালের ¯্রােত না থাকায় বিষাক্ত বর্জ্য, ময়লা-আবর্জনা পচে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। সে সঙ্গে ভরাট হয়ে যাচ্ছে নদীর তলদেশ। জমা হয়েছে পলিথিনের স্তর । কচুরিপানায় পরিপূর্ণ এখন নদীটি। নদীর দুই পাড়ে গড়ে উঠেছে অবৈধ স্থাপনা। চাটমোহর পুরাতন বাজার এলাকায় বড়াল নদীর পাড়ে গড়ে উঠেছে মার্কেট। কাপড় ব্যবসায়ীরা ইচ্ছেমতো মাটি ফেলে নদী ভরাট করে পাকা খুটি পুঁতে দোকানঘর নির্মাণ করছেন। নতুন বাজার খেয়াঘাট দখল হয়ে আছে কষাইদের হাতে। নদীর বুকে আবাদ হচ্ছে বিভিন্ন ফসলেরও।
২০০৮ সালে বড়াল নদীকে রক্ষা করার জন্য গড়ে ওঠে বড়াল রক্ষা আন্দোলন কমিটি। শুরু হয় বড়াল রক্ষা আন্দোলন। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা), রিভারাইন পিপলসসহ বিভিন্ন সংগঠন এই আন্দোলনে সমর্থন জোগায়।
অপরদিকে রাজশাহীর চারঘাটে পাউবো কর্তৃক স্লুইসগেট নির্মাণ করে বড়ালকে হত্যা করা হয়। পদ্মা-যমুনার সংযোগ স্থাপনকারী এই বড়াল ক্রমান্বয়ে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যায়। আন্দোলনের ফলে সরকার বড়াল অবমুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেয়। বেলা হাইকোর্টে রিট পিটিশন দায়ের করে। আদালতে বড়াল নদীর সকল ক্রসবাঁধ স্লুইস গেট অপসারণের নির্দেশ দেয়।
এই নির্দেশ মোতাবেক পাউবো চাটমোহর উপজেলার মথুরাপুর-দহপাড়া বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ অপসারণ করেছে। চাটমোহরের বোঁথর খেয়াঘাটে ক্রসবাঁধ অপসারণ করে ব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছে। রামনগর ক্রসবাঁধ অপসারণ করে নির্মাণ করা হয়েছে ব্রিজ। নতুন বাজার খেয়াঘাটের ক্রসবাঁধ অপসারণ করে কাঁঠের সাঁকো নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে। অপসারণের নির্দেশ আছে চারঘাট স্লুইস গেটেরও।
বড়াল রক্ষা আন্দোলন কমিটির সদস্য সচিব এসএম মিজানুর রহমান সিএইচটি মিডিয়া প্রতিনিধিকে বলেন, আদালতের রায় পুরোপুরি বাস্তবায়ন হওয়া জরুরি। নদী দখলকারীদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সাধারণ সম্পাদক ডাঃ আব্দুল মতিন জানান, বড়াল চালু করা এখন সময়ের দাবি। বড়াল পাড়ের লাখ লাখ মানুষ এই নদী চালুর দাবিতে সোচ্চার।
চাটমোহর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সরকার অসীম কুমার সিএইচটি মিডিয়া প্রতিনিধিকে বলেন, নদীর দুই পাড়ে গড়ে উঠা অবৈধ স্থাপনা ও দখলদারদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
পাবনা জেলা প্রশাসক মো. জসিম উদ্দিন সিএইচটি মিডিয়া প্রতিনিধিকে বলেন, নদী রক্ষায় সরকার নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করছেন। বড়াল নদীতে অবৈধ দখল ও স্থাপনাকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
পরিবেশ অধিদপ্তর বগুড়া উপ-পরিচালক মো. আশরাফুজ্জামান সিএইচটি মিডিয়া প্রতিনিধিকে বলেন, পরিবেশ দূষিত হচ্ছে এ ব্যাপারে মানুষকে সচেতন করতে হবে। নদীতে কোনো প্রকারের কেমিক্যাল বর্জ্য ফেলা যাবে না। নদীটি চালু হয়ে গেলে এ সমস্যা থাকবে না।