বুধবার ● ১ মে ২০১৯
প্রথম পাতা » কৃষি » বড়াল নদ এখন ফসলের মাঠ
বড়াল নদ এখন ফসলের মাঠ
চাটমোহর (পাবনা) প্রতিনিধি :: পাবনার চাটমোহর উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত বড়াল নদ এখন ফসলের মাঠে পরিণত হয়েছে। বড়াল পাড়ের মানুষজন নদী দখল কওে অবৈধ স্থাপনা নির্মানের পাশাপাশি হরেক রকম ফসলের চাষাবাদ করছেন। নদের বিশাল এলাকাজুড়ে এখন বোরো ধানের সমারোহ। দেখলে মনের হবে বিশাল ফসলের মাঠ। একই সাথে দখল প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। নদের পানিপ্রবাহ স্বাভাবিক করতে একদিকে বাঁধ অপসারণসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে, অপরদিকে বড়ালের পাড় দখল করে মার্কেট ও রাস্তা তৈরি করাসহ বিভিন্ন স্থাপনা গড়ে তোলা হচ্ছে। নদের বিভিন্ন অংশ প্রতিনিয়ত দখল করা হচ্ছে। নদের দুই পাড়ে গড়ে উঠেছে বসতবাড়ি আর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। একই সাথে ধান, গম, রসুন পেঁয়াজের আবাদ হচ্ছে। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বড়াল রক্ষা আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা।
জানা গেছে, ১৯৮০ সাল পর্যন্ত বড়াল নদে পানিপ্রাহ ছিল। ১৯৮১ সালে রাজশাহীর চারঘাটে পদ্মা থেকে বড়ালের উৎসমুখে ও পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার সীমান্ত এলাকা দহপাড়ায় পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) দুটি জলকপাট নির্মাণ করে। এতে পানিপ্রবাহ বাধাগ্রস্থ হয়। ফলে নৌযান চলাচল ব্যাহত হতে থাকে। স্থানীয় বাসিন্দারা তখন নদ পারাপারের জন্য সেতু তৈরির দাবি তোলেন। কিন্তু সেতু না কওে বড়ালে চারটি আড়াআড়ি বাঁধ নির্মাণ করা হয়। এতে বড়ালে পানিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে যায়। দিনে দিনে দখল-দূষণে ২২০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে বড়াল পরিণত হয় মরা খালে। পানি না পেয়ে ব্যাহত হতে থাকে বিস্তীর্ণ চলনবিলের চাষাবাদ।
২০০৮ সালে বড়াল রক্ষায় তৈরি হয় আন্দোলন কমিটি। সহায়তা করে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা), এএলআরডিসহ বিভিন্ন সংগঠন। বড়াল রক্ষা আন্দোলন কমিটির নিয়মিত সভ, সমাবেশ, মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচির পরিপ্রেক্ষিতে বলার দায়ের করা রিটি মামলায় উচ্চ আদালত বড়াল থেকে সব বাঁধ ও জলকপাট অপসারণের নির্দেশ দেন সরকারকে। সে অনুযায়ী বাঁধ অপসারণ করে সেতু নির্মাণ করা হয়। এতে স্বস্তি ফিরতে থাকে বড়ালপাড়ের বাসিন্দাদের। কিন্তু বড়াল দখল প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকে। মরা বড়ালের তলদেশে শুরু হয় ফসলের আবাদ।
নাটোরের বড়াইগ্রাম, চাটমোহরের চরমথুরাপুর পর্যন্ত বড়ালের ৪০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে চলছে চাষাবাদ। নদের তলদেশে এ মৌসুমে ব্যাপকহারে বোরো আবাদ করা হয়েছে। ফলনও আশানুরুপ হয়েছে। তবে উপজেলা কৃষি বিভাগের কাছে এমন কোন তথ্য নেই যে, কত হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে।
সরজমিন বড়াল নদের বিভিন্ন অংশ পরিদর্শন করে দেখা যায়, আধাপাকা বোরো ধান বাতাসে দোল খাচ্ছে। আবাদকারীরা বলেন, নদী শুকিয়ে গেছে। পানি প্রবাহ নেই। ফলে আমরা ধানের আবাদ করছি। কোথাও সবজি, বা রসুনের আবাদ করা হয়েছে। নদীর প্রবাহ ফিরে এলে এই আবাদ করা সম্ভব হবে না। বড়াল পাড়ের লোকজন আর বলেন, সরকার দ্রুত বড়াল নদীর সকল বাঁধ অপসারণ করে তা চলমান করবে। এতে করে পানি সংকট কাটবে এবং কৃষিতে বিপ্লব ঘটবে।
বড়াল রক্ষা আন্দোলন কমিটির কমিটির নেতারা বলেন, বড়াল আন্দোলনের কিছুটা সফলতা আসলেও এখনো অনেক বাধা বিদ্যামান। ফলে বড়ালপাড়ের বাসিন্দাদের মধ্যে স্বস্তি আসেনি। বড়ালের পানিপ্রবাহ সচল রাখতে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিলেও বড়াল দখল বন্ধ হচ্ছে না। এতে বড়ালের বিভিন্ন অংশ সংকূচিত হয়ে পড়েছে। কিছু স্থানে চলছে ধান ও সবজি চাষ। ফেলা হচ্ছে ময়লা-আবর্জনা। বাড়ছে দূষনও।
আগামী ৪ মে পাবনার চাটমোহরে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বড়াল কনভেনশন। কনভেনশন সফল করতে বড়াল পাড়ের সকল উপজেলায় প্রস্তুতি সভা বা মতবিনিময় অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ইতোমধ্যে রাজশাহীর চারঘাট, নাটোরের গুরুদাসপুর ও বড়াইগ্রাম, পাবনার চাটমোহর ও ফরিদপুরে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।