রবিবার ● ৫ মে ২০১৯
প্রথম পাতা » এক্সক্লুসিভ » তথ্য-প্রযুক্তির মাধ্যমে পার্বত্য অঞ্চলে বসে প্রতারণা করছে সংঘবদ্ধ চক্র
তথ্য-প্রযুক্তির মাধ্যমে পার্বত্য অঞ্চলে বসে প্রতারণা করছে সংঘবদ্ধ চক্র
ষ্টাফ রিপোর্টার :: ফেইসবুক পেইজের নাম ত্রিপুরা জ্যোতিষালয়; ডিজিটাল চমকপ্রদ বিজ্ঞাপনে বলা হচ্ছে, সমস্যা থেকে সমাধান পেতে মঘা বৈদ্যর পরামর্শ নিন। আপনার একান্ত ব্যাক্তিগত সমস্যা থেকে সমাধানে তান্ত্রিক গুরুজী এখন চট্টগ্রামে। সমস্যা থেকে সমাধান, স্বামী-স্ত্রীর অমিল বা সংসারে কলহ, প্রেমে ব্যর্থতা, মনের মানুষকে কাছে পাওয়া, পরকীয়া প্রেমে আসক্তি, পড়ালেখায় অমনোযোগী, বিদেশ যাত্রায় বাধা, চাকুরীতে সমস্যা, ব্যবসায়ে লোকসান, শত্রুকে পরাস্ত করা, অবাধ্যকে বাধ্য করা, যাদু বান টুনা কাটানো,জ্বীন-পরীর আসর থেকে মুক্তি ইত্যাদি সমস্যাগুলো মঘা চামুন্ডা এবং প্রাচীন তান্ত্রিক শাস্ত্রের মাধ্যমে এক থেকে তিন দিনের মধ্যে ১০০ ভাগ গ্যারান্টিসহ সমাধান দেওয়া হয়। গোপনীয়তা রক্ষা করা হয়। সকল ধর্মের লোক আসতে পারবেন। ভিপি ও পার্সেল যোগে সমগ্র দেশে তথ্য পাঠানো হয়। যোগাযোগের ঠিকানা ওস্তাদ মঘা শ্যামা, রাঙামাটি রাজ বিহার, মোবাইল ০১৭৭৬১৭২০৯৬।
সহজ সরল মানুষকে ঠকাতে এই প্রতারক ব্যবহার করছে বৌদ্ধদের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান রাঙামাটি রাজবিহারের নাম। বৌদ্ধ বিহারে তো বৌদ্ধ ভিক্ষু ছাড়া অন্য কেউ থাকার কথা না। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে রাঙামাটি রাজবিহারে এই নামের কেউ থাকেনও না। ফেইসবুক পেইজের ত্রিপুরা জ্যোতিষালয় এর ওস্তাদ মঘা শ্যামা বৈদ্যকে ০১৭৭৬১৭২০৯৬ নাম্বারে ফোন দিয়ে সংযোগ পাওয়া যায়নি।
আরো একটি ফেইসবুক পেইজের নাম জনশেফা চিকিৎসালয়; পার্বত্য জেলার মগ মন্ত্রের শিরোমণী, বিজ্ঞাপণে বলা হচ্ছে - আপনি কি ভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত? ব্যর্থ হয়ে ঘুরছেন ? আর ব্যর্থতা নয়, এশিয়া মহাদেশের একমাত্র তান্ত্রিক গুরু সম্রাট মগ মন্ত্রের শিরোমনী, বিগত চার যুগ ধরে মানব সেবায় নিয়োজিত। আপনার সমস্যাগুলো কি? যেমন প্রেমে ব্যর্থ, মনের মানুষকে কাছে পাওয়া, স্বামী-স্ত্রীর অমিল, ছেলে মেয়ে অবাধ্য, পড়ালেখায় অমনোযোগী, নেশাগ্রস্থ, উপযুক্ত পাত্র-পাত্রীর বিয়েতে বাধা, ব্যবসায় লোকসান, বিদেশ যাত্রায় বাধা, মামলা মোকদ্দমা, যাদু বান টুনা, কুফরী কালামসহ বিশেষ বিশেষ কারণে রাজলক্ষী বশীকরন দেওয়া হয়। এক থেকে সাত দিনের মধ্যে যার সমাধান, ভিপি ও পার্সেল যোগে তদবির পাঠানো হয়। সকল তান্ত্রিকের তদবির বারবার আর মগ মন্ত্রের শিরোমনির তদবির একবার। জেনে রাখুন কিছু অসাধু ব্যবসায়ী তিন পার্বত্য জেলার নাম বিক্রি করে প্রতারণা করে আসছে, তাই সাবধান এই প্রতারণা এড়াতে ওরা কে যাছাই করে নিন। গুরুজী এখন চট্টগ্রামে। প্রধান কার্যালয়, রাঙামাটি পাহাড়ী চিাকৎসালয় এবং রাজলক্ষী রত্নাঘর, মুর্শিদাবাদ। মোবাইল ০১৭৭৯৬২৭৩৩৬। এসব চাটুকদারেরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুক পেইজসহ তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিভিন্ন ধরনের নাম দিয়ে প্রতিনিয়ত দেশে ও বিদেশের মানুষের সাথে প্রতারনা করে যাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা। গত ৩ মে শুক্রবার চট্টগ্রামের পাহাড়তলীর গৃহবধু ফাতেমা বেগম তার বোনের পারিবারিক সমস্যা সমাধানের জন্য ওন্তাদ মঘা বৈদ্য মোবাইল ০১৭৭৬১৭২০৯৬ নাম্বারে ফোন করে সমস্যার কথা জানান, মোবাইলের অপর প্রান্ত থেকে বলা হয় হাজিরার জন্য ৫০৫ টাকা ০১৭৭৬১৭২০৯৬ মোবাইল নাম্বারে বিকাশে পাঠা। তারপর হাজিরা দেখে আমি (বৈদ্য) ফোন করলে সাথে ৫ হাজার টাকা নিয়ে আসিস। ফাতেমা বেগম প্রশ্ন করেন কাজ হলে টাকা দিলে চলবে কিনা? ফোনে অপর প্রান্ত থেকে বলেন আমি কি তোর দুলাভাই লাগি? কাজ করতে চাইলে এই মোবাইল নাম্বারে দ্রুত ৫০৫ টাকা পাঠা। বৈদ্যর এধরনের ভাষা শুনে হতবাক হয়ে যান বলে সিএইচটি মিডিয়াকে জানান ফাতেমা বেগম।
ফাতেমা বেগমের সমস্যার সমাধান নিতে আজ সন্ধ্যায় সিএইচটি মিডিয়া টুয়েন্টিফোর ডটকম এর পক্ষ থেকে পরিচয় গোপন রেখে রোগীর আত্মীয় সেজে ফেইসবুক পেইজের জনশেফা চিকিৎসালয় ০১৭৭৯৬২৭৩৩৬ বৈদ্যর নাম্বারে ফোন করা হলে অপর প্রান্ত থেকে একজন সতীশ নামে পরিচয় দিয়ে বলেন তিনি বৈদ্যর (গুরুজীর) ম্যানেজার সহকারী। বর্তমানে তিনি রাঙামাটি জেলার লংগদু উপজেলার মাইনীতে রয়েছেন। কথিত সতীশ ০১৮৪৩৯৮৬৮১০ নাম্বারে বৈদ্যর (গুরুজী) সাথে সরাসরি কথা বলতে পরামর্শ দেন। ০১৮৪৩৯৮৬৮১০ নাম্বারে ফোন দিয়ে বৈদ্যর কাছে সমস্যার কথা জানালে বৈদ্য (গুরুজী) বলেন তুই আমার ব্যক্তিগত বিকাশ ০১৭৩৫৭০৮৭৮৪ নাম্বারে ৫১০ টাকা পাঠিয়ে দে। বৈদ্যর অবস্থান জানতে চাইলে তিনি (বৈদ্য) বলেন, বর্তমানে রাঙামাটি জেলার লংগদু উপজেলার মাইনীতে রয়েছেন এবং বলেন তিনি (গুরুজী) চট্টগ্রামে গেলে আমাদের সাথে যোগাযোগ করবেন। ১০ মিনিট পরে আবার সিএইচটি মিডিয়া টুয়েন্টিফোর ডটকম এর নাম্বারে ফোন করেন বৈদ্য, কিন্তু আমরা ব্যস্ত থাকায় পরে কল ব্যাক করে দিলে তিনি বলেন আমি তো ফোন করিনি “তুই টাকাটা তাড়াতাড়ি পাঠিয়ে দে”। এই চক্রটির সাথে কথা বলে মনে হয়েছে তারা সকলেই বাংলাভাষাভাষির জনগোষ্ঠির লোকজন, যদিও তারা তাদের নামের সাথে আদিবাসী মগ জনগোষ্ঠির নাম ব্যবহার করে মগ তান্ত্রিক আর মঘা বৈদ্য ইত্যাদি । সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই ধরনের ভুয়া ও প্রতারণামুলক অনেক পেইজ চালু করে প্রতারক চক্র প্রতারনা দীর্ঘদিন ধরে চালিয়ে আসছে।
ডিজিটাল বাংলাদেশে বিভিন্ন ধরনের প্রতারণামুলক বিজ্ঞাপন দেখে প্রতিনিয়িত প্রতারিত হচ্ছে দেশে ও বিদেশের সমস্যায় জর্জরিত সহজ সরল লোকজন। পার্বত্য অঞ্চলে বসে সংঘবদ্ধ চক্র তথ্য-প্রযুক্তির মাধ্যমে নির্ভিঘ্নে বড় ধরনের অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে।
এধরনের প্রতারণা ঠেকাতে দেশের আইন শৃংখলা বাহিনীসহ ও পার্বত্য অঞ্চলের স্থানীয় প্রশাসন এসব প্রতারকদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেবেন বলে আশাবাদী ভুক্তভোগীরা।