শনিবার ● ১১ মে ২০১৯
প্রথম পাতা » দিনাজপুর » পার্বতীপুরে বখাটে যুবক মোরছালিনের লালসার শিকার এইচএসসি পরীক্ষার্থী মোস্তাকিমা এখন হাসপাতালে
পার্বতীপুরে বখাটে যুবক মোরছালিনের লালসার শিকার এইচএসসি পরীক্ষার্থী মোস্তাকিমা এখন হাসপাতালে
পার্বতীপুর (দিনাজপুর) প্রতিনিধি :: দিনাজপুরের পার্বতীপুরে প্রত্যন্ত পল্লীর আবাসন কেন্দ্রে বসবাসকারী এইচএসসি পরীক্ষার্থী মোস্তাকিমা খাতুন দেশে চাঞ্চাল্য সৃষ্টিকারী নুসরাত জাহান রাফির অবস্থা মাথায় নিয়ে বর্তমানে জেলার এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে জীবন মরণের সন্ধিক্ষনে দাড়িয়ে কাতরাচ্ছেন। দেশের মানবাধিকার সংস্থ্যাগুলোর এগিয়ে আসার আহবান পরিবারের।
ঘটনা অনুসন্ধানে জানা যায়, উপজেলার মোস্তফাপুর ইউনিয়নের বড় রামচন্দ্রপুর সরকারি আবাসন প্রকল্পে বসবাসকারী দরীদ্র পিতা আজিবর রহমানের মেয়ে মোস্তাকিমা খাতুন স্থানীয় আমবাড়ী ডিগ্রী কলেজের ছাত্রী।
উল্লেখ্য, কলেজ যাওয়া-আসার পথে একই কলেজের একাদ্বশ শ্রেণির ছাত্র ও একই এলাকার প্রভাবশালী মেরাজুল ইসলামের ছেলে মোরছালিন প্রামাণিক (২২) মোস্তাকিমাকে উত্ত্যক্ত করে আসছিল দীর্ঘদিন ধরে। এরই ধারাবাহিকতায় ৩০ এপ্রিল মোস্তাকিমা এইচএসসি পরীক্ষা দিয়ে দুপুর ২টার দিকে বাড়ি ফেরার পথে রামচন্দ্রপুর বাজারের অদুরবর্তী নির্জন স্থানে গেলে আকষ্মিক পথ রোধ করে বখাটে মোরছালিন।
এসময় ওই বখাটে যুবক টানাহেঁচড়া করে তার শ্লীলতাহানি ঘটিয়ে শরীরের নানা স্থান ক্ষত বিক্ষত করে দেয়। এ ঘটনার প্রতিবাদ ও বিচার চাওয়ায় ঘটনা প্রবাহকে অন্য খাতে প্রবাহিত করতে ৩ মে বখাটে মোরছালিন ও তার পরিবারের লোকজন ওই পরীক্ষার্থী ও তার পরিবারের সদস্যদের ওপর বাড়িতে গিয়ে ফের শ্লীলতাহানি ও হামলার ঘটনা ঘটায়। ওই দিন গুরুতর আশংকাজনক অবস্থায় মোস্তাকিমাকে হাসপতালে ভর্তি করা হয়। এ পর্যায়ে বিপদের আশংকা অনুভব করে সত্যকে আড়াল করতে স্থানীয় প্রভাবশালীদের সহায়তায় ৭ই মে শ্লীলতাহানির শিকার মোস্তাকিমাসহ তার পরিবারের ৫জনের বিরুদ্ধে পার্বতীপুর মডেল থানায় একটি মারপিট ও ছিনতাই মামলা দায়ের করে বখাটে মোরছালীনের বাবা।
মোস্তাকিমার বাবা আজিবর রহমান প্রথমত আমবাড়ী ডিগ্রী কলেজ কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবহিত করেন। কর্তৃপক্ষ বিষদ আলোচনার পর শিক্ষার্থীর বাবাকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে পাঠিয়ে দেন। নির্বাহী কর্মকর্তা রেহানুল হক অভিযোগ পত্রসহ শিক্ষার্থীর অভিভাবকে পার্বতীপুর মডেল থানায় পাঠালে থানা কর্র্তৃপক্ষ তার অভিযোগ গ্রহণ না করে তাকে ফেরত পাঠায় বলে দাবী ওই অভিভাবকের। এ পর্যায় কোন কুলকিনারা না পেয়ে আবাসনবাসী শিক্ষার্থী মোস্তাকিমার বাবা কিছু সুহৃদের সহায়তায় ৯ মে দিনাজপুর শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের করে।
শ্লীলতাহানীর যন্ত্রনা ও শারীরিক নির্যাতনের শিকার মোস্তাকিমা এখন এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চতুর্থ তলায় ২নং বেডে জীবন মরণের সন্ধিক্ষনে চিকিৎসাধীন। বিষয়টি নিয়ে আমবাড়ী ডিগ্রী কলেজের ভাইস প্রিন্সিপাল মিজানুর রহমানের সাথে কথা হলে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, আমরা কলেজের গভর্ণিং বোডির (জিবি) মিটিংয়ে বিষয়টি উত্থাপন করে বখাটে ওই ছাত্রকে নজরদারীতে রেখেছি এবং শিক্ষার্থীর বাবাকে মামলা করার পরামর্শ দিয়েছি। আমরা ঘটনার শিকার শিক্ষার্থীকে যে কোন সহায়তায় দানে প্রস্তুত রয়েছি।
অনুসন্ধানকালে এলাকার আনোয়ার হোসেনসহ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রতিবাদী অসংখ্য ব্যক্তি জানায়, শ্লীলতাহানীর ঘটনায় মোস্তাকিমার বিচার পাওয়া তো দূরের কথা উল্টো হামলা ও মামলা শিকার করা হয়েছে পরিবারটিকে প্রভাবশালীদের সহায়তায়। শিক্ষার্থীকে শ্লীলতাহানী ও মারপিটের ঘটনা ঘটিয়েছে তারা সাত ভাই এলাকায় সাত পান্ডব নামে পরিচিত। আমরা মুখ খুলেছি এই ঢের।
পার্বতীপুর মডেল থানার এস আই আব্দুর রহিমের সাথে কথা হলে জানান, আমরা মোরছালীনের বাবা মেরাজুলের ইসলাম প্রামানিকের দায়েরকৃত মামলাটি তদন্ত করছি। সেই সাথে ঘটনার পিছনের ঘটনাগুলো খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এদিকে ঘটনার বিষয়ে মোরছালীনের বাবার সাথে যোগাযোগের জন্য বাড়িতে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি।