শুক্রবার ● ৭ জুন ২০১৯
প্রথম পাতা » প্রধান সংবাদ » রাজশাহীতে বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে জনস্রোত
রাজশাহীতে বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে জনস্রোত
রাজশাহী প্রতিনিধি :: ঈদ-উল-ফিতরের ছুটিতে শিক্ষানগরী ও উত্তরের বিভাগীয় শহর রাজশাহী এখন প্রায় ফাঁকা। ঈদের তৃতীয় দিনেও চিরচেনা প্রাণচাঞ্চল্য একেবারে অনুপস্থিত। রাজশাহী মহানগরজুড়ে এখন পুরোদমে চলছে ঈদের ছুটির আমেজ। তবে দুপুরের পরেই জমে উঠছে নগরীর বিনোদন কেন্দ্রগুলো।
ঈদের ছুটিতে অনেকটা পাল্টে গেছে কোলাহল আর যানবাহনে ঠাসা এই ছোট্ট মহানগরের চেহারা। ঈদ জামাতের পর থেকে আজও আকাশে কখন রোদ, কখনও মেঘ। এক মাস সিয়াম সাধনার পর এমন আবহাওয়ায় যোনো সব ক্লান্তি ভর করেছে রোজদারদের শরীরে। এর পরও সকাল থেকেই অনেকে ঘর থেকে বেরিয়ে পড়েছেন। এমন রোদ-বৃষ্টির মধ্যেই বিনোদন পিপাসুদের আটকানো যায়নি।
আর দুপুর গড়িয়ে বিকেলের সূর্য পশ্চিমাকাশে নামার পর থেকেই রাজশাহী মহানগরের বিনোদন স্পটগুলিতে মানুষের ঢল নেমেছে। বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে যেনো তিল ধারণের ঠাঁই নেই। ঈদের দিন বাড়িতে আত্মীয় স্বজন থাকাতে রান্নার বাড়তি চাপে যারা বেড়াতে পারেননি আজ যেন ভীড় জমিয়েছেন বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে। মিলেমিশে ঈদ আনন্দ উপভোগের জন্য সবাই একযোগে বেরিয়ে পড়েছেন। আর তাই রিকশার মহানগরে বেড়ানোর অন্যতম বাহন চার্জার রিকশার কদর এখন তুঙ্গে।
এই সুযোগে রিকশা ও অটোরিকশা চালকরা মানুষের কাছ থেকে দ্বিগুণেরও বেশি ভাড়া হাঁকাচ্ছেন। তবে আজ সেই যানজট কারও দুর্ভোগের কারণ হয়নি। ঈদের দ্বিতীয় দিনে মহানগরের শহীদ কামারুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানা, শহীদ জিয়া শিশু পার্ক, আই ও টি-বাঁধ, বড়কুঠি, শিমলা পার্ক, পদ্মা গার্ডেন, ভাদ্রা পার্কসহ বিভিন্ন বিনোদন স্পট বিনোদন পিপাসুদের কোলাহলে মুখরিত হয়ে উঠেছে। ভ্রাতৃত্ব আর সৌহার্দের বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে সবাই প্রাণভরে উপভোগ করেছেন ঈদের খুশি, ঈদের অনাবিল আনন্দ।
বিনোদন পিপাসুদের ঈদের বাড়তি আনন্দের মাত্রা বৃদ্ধি করে চলেছে সেলফি। বন্ধু-বান্ধব ও পরিচিত এবং শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিদের পেলেই স্মৃতির ফ্রেমে অনবদ্ধ করে রাখতে চাইছেন তারা। এমনকি বিনোদন স্পটে মা-বাবা ভাই-বোনদেরসহ দম্পতিরাও অংশ নিচ্ছেন সেলফিতে। আর টিন এজের তরুন-তরুনীরা তো আরো একধাপ এগিয়ে।
নওহাটা থেকে রাজশাহীর শহীদ জিয়া শিশু পার্কে বেড়াতে আসা সাইদুর রহমান ও সীমা বেগম দম্পতি বলেন, তারা একজন গৃহিনী ও ব্যবসায়ী। তাই ইট-পাথরের নগরজীবনে শিশুদের একটু বিনোদন দিতে আজ বিকেলে পার্কে আসা। তাদের ৪ বছরের শিশুকন্যা মহিমা ও পাঁচ বছরের ছেলে সিয়াম এতে বেজায় খুশি। দু’জনেই মজা করছে বিভিন্ন রাইডে। তাদের মত পার্কে আসা অনেক বাবা-মা’র ঈদ আনন্দের একই প্রায় অনুভূতি।
এদিকে শহীদ কামারুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানায় বেড়াতে এসেছেন চাকুরীজীবি শহিদুল ইসলাম দম্পতি। বৌয়ের সঙ্গে এবারে ঈদ করছেন শ্বশুর বাড়িতে। শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘গতবছর এই নগরীতে আমার বিয়ে হয়েছে। গত ঈদে নিজবাড়ি নওগাঁর আত্রাইয়ের কুলা কাসুন্দাতে ঈদ করেছি। এবারে রাজশাহী নগরীতে ঈদ করছি। এই সুযোগে নগরীর স্পটগুলো ঘুরে ঘুরে দেখাও হচ্ছে আবার তার আবদার ও মনের ইচ্ছাপূরণ হচ্ছে। সব মিলিয়ে ঈদের আনন্দ উপভোগ করছি’।
অপরদিকে পদ্মার পাড় টি-বাধে কথা হয় জেলার মোহনপুর উপজেলার মৌগাছি এলাকার আরিফ দম্পতির সাথে। আরিফ’র বয়স প্রায় ষাট বছর। তিনি বলেন,‘আমার ছেলে ও বৌ ঢাকার বাসিন্দা। ছেলে ও ছেলে এবং নাতি-নাকতি আমাদের সাথে প্রায় ঈদ করে থাকে। নাতি-নাততির আবদার মেটাতে এখানে আসা। তবে তাদের সাথে আমরা বুড়ো-বুড়িও একটু আনন্দ পেতেই এসেছি’।
সাড়া ফেলেছে আরএমপির মানবতার দেয়াল
রাজশাহী :: ঈদ আনন্দটা ঠিক কিভাবে উপভোগ করেন আপনি? নতুন জামা কাপড় পড়ে, পরিবার পরিজনের সাথে, বন্ধু বান্ধব নিয়ে, আত্মীয় স্বজনের সাথে বেড়াতে গিয়ে নিশ্চয় অনেক ভাল থাকার চেষ্টা করেন। ভেবে দেখুন তো যাদের এসব কিছুই নেই তারা ঈদটি কিভাবে পালন করেন। তাদের আনন্দটা হয়ত সিক্ততায় থাকে। অনেকের সামর্থ থাকে কিন্তু সুযোগ হয়না আবার অনেকের সামর্থ্য নেই তবু ইচ্ছের কমতি থাকে না। তবে বিকল্প এক ইচ্ছে শক্তির অনুধাবন করেছেন রাজশাহী মহানগর পুলিশ।
সামান্য প্রয়োজন মেটাতে রাজশাহী মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে তৈরী করা হয়েছে মানবতার দেয়াল। যেখানে নিজের প্রয়োজনীয় পোশাকটি একজন নিতে পারেন আবার নিজের সাধ্যমতো অপরের সহযোগীতা করতে একজন এগিয়ে আসতে পারেন।
রাজশাহী পুলিশ লাইন্স ফটকে গেলেই দেখতে পাওয়া যাবে এমন চিত্র। রাজশাহী মহানগর পুলিশ কমিশনার হুমায়ুন কবির এর বিশেষ উদ্যোগে প্রায় এক সপ্তাহ পূর্বে তৈরী করা হয় এই দেয়ালটি। ইতোমধ্যে এলাকাবাসী এবং সাধারণ পথচারীদের দৃষ্টিতে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে এই মানবতার দেয়াল। অনেকেই উৎসাহী হয়ে নিজেদের অপ্রয়োজনীয় বা অব্যবহৃত কাপড়গুলো সেখানে রেখে যাচ্ছেন। আবার প্রয়োজন বোধে অসহায় দু:স্থ মানুষগুলো সেগুলো নিয়ে যাচ্ছেন। এতে করে অনেক দু:স্থদের ঈদের প্রয়োজনটা মিটেছে।
রাজশাহী মহানগর পুলিশ কমিশনার হুমায়ুন কবির বলেন, এটি একটি ভলেন্টিয়ারী সার্ভিস বলা যেতে পারে। একটি উদ্যোগের মাধ্যমে অনেক মানুষের উপকার হতে পারে। যার যেটা প্রয়োজন নেই সে সেটা রেখে যেতে পারে আবার যার প্রয়োজন সে অনায়েশে নিয়ে যেতে পারে। ইতোমধ্যেই বেশ সাড়া ফেলেছে তাদের এই উদ্যোগ।