শনিবার ● ৮ জুন ২০১৯
প্রথম পাতা » প্রধান সংবাদ » যৌতুকের টাকা না পাওয়ায় গৃহবধুকে পুড়িয়ে মারার চেষ্টা গ্রেফতার-৩
যৌতুকের টাকা না পাওয়ায় গৃহবধুকে পুড়িয়ে মারার চেষ্টা গ্রেফতার-৩
ঈশ্বরগঞ্জ (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি :: ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে যৌতুকের টাকা না দেওয়ায় স্ত্রীর শরীরে কেরোসিন ঢেলে পুড়িয়ে হত্যা করার অভিযোগে থানায় মামলা করা হয়েছে। মামলার আসামিরা হলেন জামাতা শরিফ মিয়া (২৪) শ্বশুর সাহাব উদ্দিন (৫৫) শাশুড়ি হাছেনা খাতুন (৪৫) দেবর মিজানুর রহমান (১৮) হোমিও ডাক্তার ফারুক মিয়া (৪৫) আসামিদের মধ্যে পুলিশ হাছেনা খাতুন (৪৫) মিজানুর রহমান (১৮) ও ফারুক মিয়া (৫৫) কে গ্রেফতার করেছে।
মামলার এজহার সূত্রে জানা যায় উপজেলার মাইজবাগ ইউনিয়নের কুমারুলী গ্রামের আব্দুল হাই এর মেয়ে শিরিনা আক্তারের সাথে ৭/৮ মাস পূর্বে কুর্শিপাড়া গ্রামের শাহাব উদ্দিনের পুত্র শরিফ মিয়ার সাথে বিবাহ হয়। বিবাহের পর থেকে জামাই শরিফ মিয়া ও পিতা মাতা দেবর মিলে বাবার কাছ থেকে যৌতুকের টাকা এনে দেয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করে আসছিল। দরিদ্র পিতার কাছ থেকে টাকা এনে দিতে অপারগতা জানালে স্বামী শরিফ নানা ভাবে শিরিনাকে মারপিট ও মানসিক নির্যাতন করত। ঘটনার দিন ১ জুন সকালে শরিফ তার স্ত্রী শিরিনার নিকট যৌতুক বাবদ ১ লক্ষ টাকা দাবি করে। পিতা হতদরিদ্র তাই টাকা আনা সম্ভব নয় বলে জানালে ওই দিন বেলা সাড়ে বারোটার দিকে শরীফ মিয়ার বসত বাড়ি টিনের ঘরে শিরিনাকে আটকে ব্যাপক মারপিট করে এক পর্যায়ে শরিফ মিয়া স্ত্রীকে হত্যার উদ্দেশ্যে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে শিরিনার শরীর ঝলসে যায়। পরে বাড়ির লোকজন শিরিনার বাবাকে খবর না দিয়ে ৫ দিন বাড়িতে রেখে হোমিও চিকিৎসা দেন। শিরিনার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে দিনমজুর বাবা আব্দুল হাই এলাকাবাসীর সহযোগিতায় মেয়েকে উদ্ধার করে ময়মনসিং মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করেন। কর্তব্যরত ডাক্তার জানিয়েছেন সেলিনার শরীরের প্রায় ৭০ ভাগ ঝলসে গেছে। শিরিনার বাবা আব্দুল হাই জানান ২১ রমজানের দিন ইফতার সামগ্রীসহ স্ত্রীকে সাথে নিয়ে মেয়ের শ্বশুড় বাড়িতে যান। কিন্তু ইফতারের সাথে চাহিদা মতো যৌতুকের টাকা না নেয়ায় মেয়ের শ্বশুড়-শাশুড়ি ও জামাই ক্ষিপ্ত হন। এ সময় ইফতার ফেলে দিয়ে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করে তাড়িয়ে দেওয়া হয় তাঁকে। এ অবস্থায় গত ১ জুন সকালে মেয়েকে ফের টাকার জন্য তাগাদা দেয় শ্বশুরবাড়ির লোকজন। মেয়ে ফোন করে তাদের জানায় যে তাকে অত্যাচার করছে তারা। এরপর বেশ কয়েকদিন মেয়ের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের খবর পাচ্ছিলেন না। পরে জানতে পারেন মেয়ের শ্বশুর বাড়ির লোকজন শিরিনার শরীরে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে কয়েকদিন আগে। কিন্তু তাদের কাউকে এ ঘটনাটি জানানো হয়নি। একপর্যায়ে তিনি শিরিনার নানী শাশুড়ির মাধ্যমে গত ৩ জুন ঘটনাটি জানতে পারেন। পরে তিনি আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে নিয়ে এলাকাবাসীর সহায়তায় মেয়ের শ্বশুরবাড়িতে যান। গিয়ে দেখতে পান গুরুতর আহত শিরিনাকে কলাপাতায় শুইয়ে রাখা হয়েছে। শিরিনার বাবা জানতে চাইলে শাশুড়ি বলেন, মেয়ে নিজেই শরীরে আগুন ধরিয়ে আত্মহত্যা করতে চেয়েছিল। এই অবস্থায় তিনি মেয়েকে নিয়ে আসতে চাইলে মেয়ের শাশুড়ি হাছেনা খাতুন ও জামাই শরীফ মিয়া দেবেন না বলে সাফ জানিয়ে দেন। এব্যাপারে রায়েরবাজার তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ ইন্সপেক্টর আবদুল মোতালিব চৌধুরী বলেন, শিরিনার জবানবন্দি গ্রহণের জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে উপ পরিদর্শককে পাঠানো হয়েছে তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বাকিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। ময়মনসিংহ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাখের আহম্মেদ সিদ্দিকী জানান, ঘটনার খবর পেয়ে তিনি শিরিনাকে দেখতে মমেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে যান এবং শনিবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।