মঙ্গলবার ● ১১ জুন ২০১৯
প্রথম পাতা » অপরাধ » এমপি লিটন হত্যাকান্ড : সাবেক এমপি কর্ণেল কাদের খানের যাবজ্জীবন
এমপি লিটন হত্যাকান্ড : সাবেক এমপি কর্ণেল কাদের খানের যাবজ্জীবন
গাইবান্ধা প্রতিনিধি :: গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ) আসনের ক্ষমতাসীন দলের সাবেক এমপি মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় পুলিশের দায়ের করা অস্ত্র মামলায় একই আসনের জাপার সাবেক এমপি (অব:) কর্ণেল ডা. আবদুল কাদের খানকে যাববজ্জীবন কারাদন্ড দিয়েছেন আদালত।
মামলা দায়ের হওয়ার ৩ বছর চার মাস বিচারকার্য চলার পর আজ মঙ্গলবার ১১ জুন বেলা সাড়ে ১২টার দিকে গাইবান্ধা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক দিলীপ কুমার ভৌমিক এ রায় ঘোষণা করেন। সকাল ১১টা ৫০ মিনিট থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত ৪৩ পৃষ্ঠার রায় পড়ে শোনান বিচারক। রায় ঘোষণার সময় আসামি আবদুল কাদের খান আদালতে উপস্থিত ছিলেন। এরআগে কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে জেলা কারাগার থেকে সকাল ৯টা ৫০ মিনিটে প্রিজন ভ্যানে কাদের খানকে আদালতে আনে পুলিশ।
দন্ডিত আসামি আবদুল কাদের খান গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার ছাপরহাটি গ্রামের মৃত নয়ান খাঁনের ছেলে। ক্ষমতাসীন দলের সাবেক এমপি মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন হত্যা মামলার প্রধান আসামি কাদের খান। ২০১৭ সালের ২১ ফেব্র“য়ারী বগুড়ার বাসা থেকে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এরপর থেকে কাদের খান গাইবান্ধা জেলা কারাগারে আছেন। সম্প্রতি সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে কাদের খান ও তার স্ত্রী ডা. আখতার জাহান উম্মে নাসিমা বেগমের বিরুদ্ধে পৃথক দু’টি মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
মামলার নথি থেকে জানা যায়, ২০১৭ সালের ২৩ ফেব্র“য়ারী কাদের খানের সুন্দরগঞ্জের ছাপরহাটির গ্রামের বাড়ির উঠানের মাটির নিচ থেকে একটি পিস্তুল, ছয় রাউন্ড গুলি ও একটি ম্যাগজিন উদ্ধার করে পুলিশ। অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় ২৫ ফেব্র“য়ারী কাদের খানের বিরুদ্ধে পুলিশ বাদি হয়ে (অস্ত্র আইনে) সুন্দরগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলার তদন্ত শেষে ৩৯ দিন পর ৫ এপ্রিল তদন্তকারী কর্মকর্তা কাদের খানকে আসামি করে আদালতে চার্জশীট দাখিল করেন। দীর্ঘ ৩ বছর চার মাস মামলার বিচারকার্য চলে আদালতে।
রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করে রাষ্ট্রপক্ষের কৌশলী পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) এ্যাড. শফিকুল ইসলাম শফিক জানান, গত ৩০ মে মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ, যুক্তিতর্ক, শুনানীসহ সব কার্যক্রম শেষে ১১ জুন রায়ের দিন ধার্য্য করেন আদালতের বিচারক। সেই মোতাবেক আদালতের বিচারক শুনানী শেষে আসামি আবদুল কাদের খানকে যাবজ্জীবন কারাদন্ডের আদেশ দেন। আসামি কাদের খানের উপস্থিতিতে রায় ঘোষণা করেন বিচারক। রায় ঘোষণার পর পরেই কাদের খানকে পুলিশ পাহাড়ায় কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।
এদিকে, রায়ের সময় আদালতে লিটনের স্ত্রী খুরশিদ জাহান স্মৃতি উপস্থিত ছিলেন। রায় ঘোষণার পর তিনিও আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন। এসময় রায়ের প্রতি সন্তোষ প্রকাশ করেন তিনি। তবে লিটন হত্যা মামলার বিচারকার্য দ্রুত শেষ করে আসামিদের সর্ব্বোচ শাস্তির দাবি জানান তিনি।
প্রসঙ্গত: ২০১৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর নিজ বাড়ি সুন্দরগঞ্জের সাহাবাজ (মাষ্টারপাড়া) গ্রামে দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত হন সাবেক এমপি মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন। হত্যার ঘটনায় ১ জানুয়ারী লিটনের বড় বোন ফাহমিদা কাকুলি বুলবুল বাদি হয়ে অজ্ঞাত ৫-৬ জনকে আসামি করে সুন্দরগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করেন। এছাড়া হত্যার কাজে ব্যবহৃত গুলিভর্তি পিস্তুল উদ্ধারের ঘটনায় অস্ত্র আইন মামলায় সুন্দরগঞ্জ থানায় মামলা করে পুলিশ। হত্যা মামলায় প্রধান আসামি কাদের খানসহ চারজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে পুলিশ আসামিদের আদালতে হাজির করলে লিটন হত্যার দায় স্বীকার করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। বর্তমানে আদালতে হত্যা মামলাটির স্বাক্ষগ্রহণ চলছে।
এমপি মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন হত্যায় ৩টি অস্ত্র ব্যবহার হয়। এরমধ্যে ১০ রাউ- গুলিসহ একটি অস্ত্র কাদের খান লোক মাধ্যমে সুন্দরগঞ্জ থানায় জমা দিয়েছেন। দ্বিতীয় অস্ত্রটি আব্দুল কাদের খানের গ্রামের বাড়ি ছাপরহাটি থেকে উদ্ধার করা হয়। কিন্তু তার স্বীকারোক্তি মোতাবেক তৃতীয় অস্ত্রটিসহ ৪০ রাউন্ড গুলির সন্ধান এখনও পাওয়া যায়নি। তিনটি অস্ত্রের মধ্যে কাদের খানের লাইসেন্স করা বৈধঅস্ত্র ছিল একটি। লিটন হত্যার রহস্য উদঘাটন ও জড়িতদের গ্রেফতারে মরিয়া হয়ে উঠে আইনশৃঙ্খলাবাহীনির সদস্যরা।
হত্যাকান্ডের দুই মাসে জামায়াত-শিবিরসহ প্রায় দুইশতাধিক ব্যক্তিকে আইনশৃঙ্খলাবাহীনি গ্রেফতার করলেও হত্যার ক্লু ও প্রকৃত জড়িতরা থাকে ধরাছোয়ার বাইরে। এরপর একটি ছিনতাইয়ের ঘটনায় ফেলে যাওয়া ম্যাগজিনের সুত্র ধরে এমপি লিটন হত্যার মামলার ক্লু উদঘাটন করাসহ হত্যার পরিকল্পনাকারী আবদুল কাদের খানসহ চার কিলারকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় পুলিশ। পরবর্তীতে কাদের খানের সহকারী শামছুজ্জোহা ও কসাই সুবলকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এদের মধ্যে কসাই সুবল অসুস্থ্য অবস্থায় মারা গেছেন। তবে অপর আসামি চন্দন কুমার ভারতে পলাতক আছেন। এ মামলায় ২০১৭ সালের ৩০ এপ্রিল কাদের খাঁনসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে পুলিশ।